সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বালক ভোজনে কাজল শেখ
Kajal Sheikh is the child of communal harmony

Truth Of Bengal : বীরভূম : নানুর : রাহুল চট্টোপাধ্যায় ও সৌতিক চক্রবর্তী : দল মত ধর্ম নির্বিশেষে গ্রামের শিশু কিশোর কিশোরীদের কাছে তিনি কাজল দা বা কাজল কাকা আবার কারো কাছে ভাইজান। তিনি ফায়জুল হক ওরফে কাজল শেখ। তিনি বীরভূমের জেলা পরিষদের সভাধিপতি ।
প্রতিবছর তিন থেকে চারবার সমগ্র গ্রামের শিশু-কিশোরদের বালক ভোজনে, মধ্যাহ্ন ভোজের আমন্ত্রণ থাকে বীরভূমের নানুরের পাপুরি গ্রামে তার বাড়ি র অঙ্গনে। প্রায় হাজার দেড়েক পাত পড়ে এই বিশেষ দিনগুলিতে।
মেনুতে ছিল চিকেন বিরিয়ানি ,দই মিষ্টি। পুরোটা সময় তদারকি করলেন, শিশু-কিশোরদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিলেন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ।
কেন এই আয়োজন, বলতে গিয়ে আবেগ ভরা গলায় আরো খবরকে বললেন ,এটা আমার এক আত্মসন্তুষ্টি।
গ্রামের শিশু কিশোর-কিশোরীরা তাদের নিজেদেরই অনুষ্ঠান মনে করে প্রতিবার এখানে সকলে আসে এবং এই বালক ভোজনের আয়োজন করতে পেরে তিনি প্রতিবার মানসিক তৃপ্তি লাভ করে থাকেন। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আজকের দিনে আমাদের পাপুড়ি গ্রামের কোন শিশু, কিশোর– কিশোরী তাদের বাড়িতে দুপুরবেলা কেউ মধ্যাহ্নভোজ সারেনা ।
সবাই তাদের নিজেদের অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসে হাজির হয়। কাউকে তাদের বাড়ির বাবা-মা-অভিভাবকরা আজকের এই দিনে তাদের নিজের বাড়িতে আটকে রাখতে পারে না। বীরভূমের নানুর এর পাপুড়ি গ্রাম। সেখানেই কাজল শেখের পৈতৃক ভিটা। মুসলিম অধ্যুষিত এই গ্রামে দুটি বাউরিপাড়া তে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাস। তাদের বাড়ির কচিকাঁচা সদস্যরাও এই অনুষ্ঠানে একসাথে বালকভোজনে অংশ নেয়।
বীরভূম জেলার জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ বলেন ,১৩ বছর আগে আমাদের গ্রামে কোন দুর্গাপুজো হতো না। আমাদের পাপুরি গ্রামে অধিকাংশ মুসলিমদের বসবাস হলেও দুটি পাড়ায় হিন্দু বাউড়িদের বাস । তারা খুব দরিদ্র, দিন আনে দিন খায়।
ওই গ্রামের হিন্দুরা দুর্গাপূজার অংশ নিতে পার্শ্ববর্তী গ্রামে যেত। এটা দেখে আমার খুব খারাপ লাগতো। সকলকে নিয়ে
আমরা একটা কমিটি করলাম, কিভাবে দুর্গাপুজো করা যেতে পারে সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হল।
কমিটিতে মুসলিম সদস্যদের পাশাপাশি বাউড়ীপাড়ার কয়েকজন হিন্দু সদস্যকেও নেওয়া হলো।
আমরা আলোচনা করে ঠিক করলাম ,আমাদের গ্রামেই হবে দুর্গাপুজো। সেখানে দলমত ধর্ম নির্বিশেষে সকলে অংশ নেবে। পুজোর আয়োজনের বহুবিধ কাজ হিন্দু-মুসলিমরা ভাগ করে নেন, দায়িত্ব কাধে তুলে নেন। পুজোর কটা দিন ধরে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলো ঝলমল করে গোটা গ্রাম। পুজোর কটা দিন অঞ্জলি- আরতি -ভোগ সবকিছুই হয় নিয়ম মেনে।নিষ্ঠাভরে শাস্ত্র মেনে কটা দিন ধরে পুরোহিত মশাই করেন দুর্গাপুজো। অন্য গ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে আমাদের গ্রামে দুর্গাপুজো দেখতে আসেন অনেকে। পূজা মন্ডপের খুব কাছেই মসজিদ আছে। সেখানে যখন নামাজ হয়, সেই সময় গুলিতে দূর্গা পূজার মন্ডপ এর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পুজোর কটা দিন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সকলে এক হয়ে আনন্দে কটা দিন কাটিয়ে দেয়। নিরঞ্জনের দিন মাকে বিদায় দিতে মুসলিম অধ্যুষিত গোটা গ্রামের মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন স্থাপন করেছে বীরভূমের নানুর এর পাপুড়ি গ্রাম।