আলোর শহরে অন্ধকারের ঘনঘটা! আলোক শিল্পী বাবু পালের প্রয়াণে শোকাহত সকলে
Everyone is saddened by the death of lighting artist Babu Pal

Truth Of Bengal : হুগলি, রাকেশ চক্রবর্তী : অমিতাভ বচ্চনের বাড়ি আলো দিয়ে সাজিয়েছিলেন। রাজ্য দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে নিজেকে পরিচিত করেছিলেন বাবু পাল। আলোর শহর চন্দননগরে অন্ধকার! বাবু পালের মৃত্যুতে শোক।
পুজো এলেই কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠে চন্দননগর পঞ্চাননতলার বাবু পালের আলোর স্টুডিও। যেখানে হরেক আলো। আলোর মেলা। প্রতি বছরই নতুন নতুন আলোর জাদু নতুন কিছু সৃষ্টি ছিল বাবু পালের আলোর আকর্ষন। সেই আলোক শিল্পী প্রয়াত হলেন। ৬৪ বছর বয়সে। তিন বছর ধরে দুরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছিলেন। গতকাল গভীর রাতে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হন। অসুস্থ হওয়া পর থেকেই তার স্ত্রী চিত্রলেখা পাল আলোর কাজ দেখাশোনা করেন। চন্দননগরে আলোর জাদুকর বলা হয় শ্রীধর দাস কে। দেশ-বিদেশে নানা ধরনের আলোর সাজ চন্দননগরের আলোকে প্রথম বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেন।
এরপরই বাবু পাল তার নিজস্ব সৃষ্টিশীলতায় চন্দননগরের আলোকে একটা অন্য পর্যায়ে নিয়ে যান। সুপ্রিম কুমার পাল হয়ে ওঠেন বাবু পাল। দিওয়ালিতে বিগ বি অমিতাভ বচ্চনের মুম্বই এর বাড়ি সাজানোই হোক অথবা দুবাইয়ে শপিং ফেস্টেবেল, প্যারিসে বাবু পালের ডাক পড়তো।হালের শ্রভূমি স্পোর্টিং এর পুজো থেকে কলকাতার একাধিক নামী দুর্গা পুজো কমিটি বাবু পালের আলোতেই সেজে ওঠে। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রায় বাবু পালের আলো অন্যতম আকর্ষণ।
কলকা আর টুনি বাল্বের আলোর বিবর্তন ঘটিয়ে এলইডি আলো দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তাতে সফল হয়েছিলেন বাবু পাল। প্রতিবছর সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর ওপর থিমের আলো তৈরি করে তাক লাগাতেন। পুজো বারোয়ারি গুলো শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করত কি আলো তৈরি করে অন্যদের মাত দেওয়া যায় তার জন্য। আর ভরসা ছিল সেই বাবু পাল। ছোটোদের মজার আলো ডিজনি ল্যান্ড থেকে মিকি মাউস এলইডি আলোতে সাজিয়ে তুলতেন। অলিম্পিক বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে শুরু করে যেকোনো বড় ঘটনা অনায়াসেই আলোর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন বাবু।
সমসাময়িক চন্দননগরে অন্য আলোক শিল্পীদের থেকে নিজেকে তাই অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন বাবু পাল। একটা সময় চন্দননগরের আলো মানেই শ্রীধর দাসের নাম ছিল। সেটাই পরবর্তীকালে বাবু পালের হাতে চলে যায়। করোনার সময় দু’বছর যখন কোন কাজ ছিল না তখন কর্মচারীদের ছুটি দেননি। অন্য আলোক শিল্পীদের পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন। তাই কর্মচারীরা তাকে ভোলেনি। বাবুদার প্রয়ান তাই অভিভাবক হারানোর মত।
আলোক শিল্পীর শেষ যাত্রায় তাকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন চন্দননগরের আলোক শিল্পীরা। করপোরেশনের মেয়র রাম চক্রবর্তী, ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়াল, কাউন্সিলর সহ চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সদস্য ও শহরের অনেকেই। মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, “বাবু পাল নেই কিন্তু তার কাজ থেকে যাবে”। চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, “শিল্পীর কখনো মৃত্যু হয় না। বাবু পাল অনেক কষ্ট করে নিজেকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছিলেন। চন্দননগরে শ্রীধর দাসের হাত ধরে যেমন অনেক শিল্পী তৈরি হয়েছেন। বাবু পালের হাত ধরে অনেক শিল্পী এসেছেন। তারা আগামী দিনে চন্দননগরের আলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বিশ্বের দরবারে চন্দননগরের আলোকে পৌঁছে দিয়েছিলেন বাবু পাল”।
শ্রীধর দাস বলেন, বাবু আমার অনেক পরে কাজ শুরু করে। আগে লোহার ব্যবসা করত। পঞ্চানন তলায় একজনের থেকে আলো কিনে বাবু কাজ শুরু করে। অলোক পরামানিক এর কাছে কাজ শিখেছিল। তারপর নিজের চেষ্টায় ও এতদূর পৌঁছেছে। ভালো লাগে যখন চন্দননগরের আলো মানেই বাবু পালের নাম আসে। ওনার অকাল প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে মৃতের পরিবার সহ গোটা এলাকায়।