ভ্রমণরাজ্যের খবর

শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি, ঘুরে আসুন ময়ূরের বাড়ি থেকে

Escape the hustle and bustle of the city, visit Mayur's house

Truth Of Bengal: মধুবন চক্রবর্তী: পাহাড় চূড়ায় কোথাও মেঘের লুকোচুরি, কোথাও জল রঙের মত গড়িয়ে পড়া বৃষ্টি, চোখ জুড়িয়ে যাওয়া সবুজ পুরুলিয়ার বন্য সৌন্দর্য্যের রহস্যকে এতটাই বাড়িয়ে তোলে, যে আপনার চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে নির্জনে নিভৃতে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য পুরুলিয়ার অন্তরে যে সুন্দর জায়গাটির কথা আপনাদের আজকে জানাবো তা হল মুরগুমা। পুরুলিয়ার গহীন অরণ্যের অন্তস্থলে এরকম একটি স্থান যে লুকিয়ে থাকতে পারে, তা নিজে না দেখলে বিশ্বাস করা সত্যি কঠিন হতো। অযোধ্যা পাহাড়ের পাদদেশে একটি জলাধারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই ছোট্ট পর্যটনস্থল। যতদূর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। শাল পলাশ সেগুনের বনানী। সবুজ আর নির্জনতার মাঝে শান্ত জলরাশি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই মুরগুমা।

শরৎ ও শীতের মাঝামাঝি অতি সন্তর্পনে নীরবে যে আসে, সেই হেমন্তের দোরগোড়ায় পৌঁছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের আর একটি দিক হল মুরুগুমা বাঁধ। যদিও এখন ভরা বসন্ত। বসন্তে কোকিলের ডাক শুনতে শুনতে বসন্তের মনোরম পরিবেশে মুরুগুমা বাঁধের সৌন্দর্যের রহস্য আবিষ্কার করতেও আপনার মন্দ লাগবে না। বিভোর হয়ে যাবেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে। এই বাধ অর্থাৎ মুরগুমা বাধ পুরুলিয়ার সৌন্দর্য্যকে যেন বাড়তি সৌন্দর্য দিয়েছে। অজানা পথের বাঁকে হারিয়ে যাওয়া কোন মায়া সভ্যতা যেন। পলাশ ফুল, লাল মাটি, অযোধ্যা পাহাড়, পাহাড়ী ঝরনা যেন ঘিরে রেখেছে এই মুরগুমাকে। আর সেই সঙ্গে ছৌ নাচের আসর তো আছেই। সব মিলিয়ে পুরুলিয়ার সৌন্দর্য মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে সে বলাই বাহুল্য। আছে নদী, জল, ঝিল, রাজবাড়ী, জমিদারদের বাড়ি, মন্দির, দেউল, মুরুগুমা বাঁধ। এই নদীর স্রোতের কাছেই আছে বেশ কয়েকটি বাঁধ। নদীকে আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন “নদী তুমি কোথায় চলেছ বা গানের ভাষায় বলতে পারেন

“ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু
তোমারে, বল কোথায় তোমার দেশ
তোমার নাইকো চলার শেষ
ও নদীরে”..
নদীর সাথে কথা বলতে বলতে ঠিক পৌঁছে যাবেন বাঁধের ঠিকানায়। এই বাঁধ আপনাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখবে তার সৌন্দর্যের আঙিনায়। আপনাকে বলতেই হবে গানের ভাষায়
“এমন স্বপ্ন কখনোও দেখিনি আমি
মাটিতে যে আজ স্বর্গ এসেছে নামি”…

পুরুলিয়া স্টেশন থেকে ৫০ কিলোমিটারের পথ। পাহাড়ি চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পাথর কাটার রাস্তা। সবুজের বুক চিরে উপরের দিকে উঠে যাওয়া পিচ ঢালা হাইওয়ে, পড়ন্ত বিকেলে আঁকিবুকি কেটে চলেছে আকাশ। সেই নীল ক্যানভাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানান রঙের মেঘ। জলাধারের পাশ দিয়ে যখন আপনি যাবেন, মনে হবে বিদ্যুৎস্ফূলিঙ্গ আপনাকে জানান দিচ্ছে, কাঁচের চেয়েও স্বচ্ছ এই জলাধার যদি হয় নিশ্চুপ নিঝুম পাহাড়, তাহলে মরুগুমা হবে শীতঘুমে তলিয়ে থাকা এক নির্জন প্রকৃতি। সকালের এক রকম রূপ। সন্ধ্যায় আর একরকম। প্রকৃতি এখানে বহুরূপী। শাল-পলাশের খেলা চলে ক্ষণে ক্ষণে, ঝালদা ব্লকের বেগুনকোদর গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। পুরুলিয়া শহর থেকে দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। মুরুগুমার অর্থ কি জানেন? স্থানীয় লোকেদের মতে ময়ূরদের জন্য বাড়ি।

ময়ূরের বাড়ি মানে এমন এক স্বর্গনগরী যা কখনও না দেখলে বুঝতেই পারবেন না। এই ড্যামের নীল জল এতটাই পরিষ্কার যেন মনে হবে, আপনি আন্দামানের কোনও দ্বীপপুঞ্জে রয়েছেন। পুরুলিয়ার মুরুগুমা বাঁধ যেমন আছে তার পাশেই আছে মরুগুমা গ্রাম। উৎসবের মরশুমে মাটির দেওয়ালের গায়ে আদিবাসীদের নিজে হাতে আঁকা প্রাচীন শিল্প ও কারুকাজ এখানকার গ্রামের ঐতিহ্য। এই ড্যাম থেকে সুইসাইড পয়েন্ট এর দূরত্ব খুব বেশি হলে দেড় দুই কিলোমিটার। সুইসাইড পয়েন্ট নামটি কারণ কি বলুন তো? একা দাঁড়িয়ে থাকা শাল সেগুন মহলের পাহাড়ে এসে হঠাৎ যেন মনে হবে আপনি অতলে তলিয়ে যাছেন।

আপনার তিন দিকে জলাধার আর মাঝে দ্বীপের মত সবুজের অবাধ আনাগোনা। হাওয়ার গতিবেগ বেশী আর সেই সঙ্গে আছে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি। হরপা বানেরও বিপদ আছে। আর তাই নাম দেওয়া হয়েছে সুইসাইড পয়েন্ট। তবে এর সঙ্গে আত্মহত্যার কোন যোগাযোগ নেই। সাধারণত পুরুলিয়া বলতে চোখের সামনে ভেসে ওঠে অযোধ্যা পাহাড়। কিন্তু তার বাইরেও এমনও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যা নিয়ে আমরা হয়তো ততটা ভাবি না, যে গান মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে যায়, তাই অনেক সময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ঠিক সেরকম পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে যেটি বেশি চর্চিত, সেটি জনপ্রিয় হয়ে যায়। তাই পুরুলিয়া মানেই শুধু অযোধ্যা পাহাড় তা নয়।

ঘন জঙ্গল এবং অনেক ছোট ছোট সবুজ পাহাড় দিয়ে ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর মুরুগুমা বাঁধ। আচমকাই দার্জিলিংয়ের রহস্যে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলে মনে হবে। মরুগুমা গ্রাম এবং বাঁধ অবস্থান করছে অযোধ্যা পাহাড়ের ঠিক পাশেই এবং বিখ্যাত উপজাতি গ্রাম বেগুনকোদার বেশ কাছেই অবস্থিত। এই বাঁধ জল সঞ্চয় করে এবং সেই জল মুলত কৃষিতে ব্যবহৃত হয়।

Related Articles