
The Truth of Bengal: উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ের আগুন জ্বলে উঠেছিল। কিন্তু সেই লড়াই যেহেতু ছিল ছিন্ন ভিন্ন এলাকায়, তাই বড় রূপে দানা বাঁঝতে পারেনি। যখনই সামান্যতম শিখা জ্বলেছে, তখনই ইংরেজরা কঠোর হাতে দমন করেছে। যদিও বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বঙ্গভঙ্গের পরেই বাংলা থেকে যে চরমপন্থীদের বিপ্লব শুরু হয়েছিল, তার রেশ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল পর্যন্ত। কলকাতা, হাওড়া, বর্ধমান, মেদিনীপুর ছিল সশস্ত্র বিপ্লবীদের মূল আস্তানা। সেই সেময়ে বাংলার একাংশ জমিদার ইংরেজদের অধীনে থাকলেও, বিপ্লবীদের পষ্টপোষকতা করে গিয়েছিলেন। যদিও পরে তাদের ইংরেজ শাসকদের রোষানলে পড়তে হয়। রামনগরের চন্দরপুর জমিদার বাড়ি এমনই এক ইতিহাসের সাক্ষ্য আজও বহন করে চলেছে।
জমিদারবাড়ির বর্তমান সদস্য রজতবরণ চৌধুরী জানালেন, এই বাড়িতে প্রায়ই বসত অনুশীলন সমিতির সভা। সেই সময় এই অঞ্চলে বিপ্লবীদের দাপুটে নেতা ছিলেন, বলাইলাল দাস। আসতেন পুলিন রায় চৌধুরী,যামিনী পাহাড়ী, বিজয় মন্ডল,খগেন্দ্র রানার মতো বিপ্লবীরা। ইংরেজরা বিপ্লবীদের এই গোপন ঘাঁটির সন্ধান পাবার পরেই, হামলা চালায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বাড়িতে। এ বিষয়ে আগাম খবর পেয়ে রজতবাবু বাড়ির সদস্যরা সেই সময় চলে গিয়েছিলেন বালেশ্বরে। সেখানেও তাঁদের জমিদারি ছিল। এই বাড়ির জমিদার ছিলেন পুলিন বিহারী চৌধুরী ও ভূধর চৌধুরী। তাঁরই বংশ রজত বরণ চৌধুরী। স্থানীয়দের কাছে আজও গর্বের এই জমিদার বাড়ি।
এই জমিদার পরিবারের কিছু সদস্য কর্মসূত্রে ও ব্যবসাসূত্রে বাইরে থাকেন। আর্থিক সম্পন্ন আগের থেকে অনেকটাই ফিরেছে, তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এই জমিদার বাড়িকে স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতি হিসেবে ফের সাজিয়ে তোলা।পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমান প্রচীন জগন্নাথ মন্দিরটিকে সংস্কার করা হয়েছে। আগামী দিনে পুরো বাড়িটি সংস্কারের চেষ্টা চালানো হবে। স্থানীয়দের মত, স্বাধীনতা আন্দোলনের বহু স্থাপনা আজ হারিয়ে গিয়েছে, সেই জায়গায় এই বাড়ি তাঁদের কাছে গর্বের। এবং বাংলার ইতিহাসের একটা স্মৃতি হিসেবে রয়ে যাবে।