রাজ্যের খবর

ভক্তিরসে ভরপুর রাস উৎসব  উদযাপন, নবদ্বীপ-শান্তিপুরের মতোই বাংলার বিভিন্ন জায়গাতে চলছে ভক্তদের আ্নাগনা

Raas Festival

The Truth of Bengal: হিন্দু ধর্মাচারণের চারটি ভাগ রয়েছে শৈব, শাক্ত, গাণপত্য ও বৈষ্ণব। তার মধ্যে অন্যতম হল বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীরা। শ্রীকৃষ্ণের  এই রাস উৎসব গোপিনীদের সহযোগে রাধাকৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করা হয়। অনেকে মনে করেন,ইশ্বরের সঙ্গে আত্মার মহামিলনই হল রাস। কেউ কেউ আবার বলেন,ভক্তিরস থেকে এই রাসের উত্সবের জন্ম হয়েছে। আবার ভক্তিমার্গের সাধকরা বলেন,কৃষ্ণ যখন গোপিনীদের সংস্পর্শে আসেন তখন গোপিনীদের মনে অহং বোধ আসে। শ্রীকৃষ্ণ অর্ন্তহিত হন। স্তব স্তুতি করলে শ্রীকৃষ্ণ আবার ফিরে আসেন।তাই এই রাসলীলার গভীর তাত্পর্য রয়েছে।বৃন্দাবন-মথুরার মতোই বাংলার কোণায় কোণায় বৈষ্ণবভক্তরা রাসের উৎসবের আয়োজন করেন।নবদ্বীপ-শান্তিপুরের মতোই দাঁইহাটেও আয়োজন করা হয় রাসের।

সোমবার থেকে শুরু হল দাঁইহাটের রাস উৎসব। ব্ংশীধারী কৃষ্ণমুরারীকে স্বাগত জানাতে রঙিন আলপনায়  সেজে উঠেছে পথঘাট।রঙিন আলো আর রাসফুলের ধর্মীয় আবহ দাঁইহাটকে আলাদা আঙ্গিক দিয়েছে। শিল্পকর্মের সেরা উপহার এই আলপনার আকর্ষণ সবার মনে আলাদা জায়গা পাচ্ছে। শিল্পকর্মের এই ভিন্ন ভাবনাকে সংরক্ষণ করার ওপর জোর দিচ্ছেন শিল্পী থেকে প্রশাসক সকলেই। রাসের ছন্দ মাতোয়ারা বলাগড়। কথিত আছে, শ্রীপুর মিত্র মুস্তাফি বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা সাধক রঘুনন্দন মিত্র মুস্তাফি এই অঞ্চলে  প্রথম এই রাসের সূচনা করেন। ৩১১বছরের আগে শুরু হওয়া  রাস উৎসববের জন্য ভক্তমহলে সাড়া পড়ে যায়। রাস পূর্ণিমায় শ্রীপুর গ্রামে সপ্তাহব্যাপী চলে রাসমেলা ,বস্তুত এটাই গ্রামের মূল অনুষ্ঠান। এই মেলা শাক্ত বৈষ্ণব ও শৈব ধারার এক মিলনমেলা।

একাধারে রাধাকৃষ্ণের রাস ,বিন্দুবাসিনী দেবীর পূজা ও বিন্দুবাসিনী দেবীর সাথে মহাদেবের বিবাহানুষ্ঠান এই সব মিলে মেলা জমজমাট। এই উপলক্ষ্যে সারাদিন ধরে চলে যাত্রানুষ্ঠান,নাটক,আতশবাজির প্রদর্শনী আরও অনেক অনুষ্ঠান। একসময় বিরাট সংখক মানুষ আর্থিকভাবে অনুন্যত ছিল,রাজা বা ধনী মানুষের পৃষ্ঠপোষকতায় পশুদের বলি বা কুরবানী করে তার মাংস এই দরিদ্র শ্রেণীর বিতরণ করা হতো। গ্রামে গঞ্জে উৎসবে অনুষ্ঠানে যাত্রাপালার প্রচলন তো রয়েছে তবে এখানে যাত্রা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। মোস্তাফী বাড়ির রঙ্গমঞ্চেই এই যাত্রা পালা আয়োজিত হয় পরন্ত দুপুরে। রাশের আরেক অঙ্গ রংবেরঙের আতশবাজি। বাজির খেলায় মেতে ওঠেন ৮ থেকে ৮০। কথিত আছে একসময় নদীর জলে ভেসে আসতো মোষ। রাশের পূর্ণ লগ্নে সেই মোষ বলির প্রচলন রয়েছে। আজও সেই ধারা বজায় রেখে চলে মোষ বলি। রাশের টানে শ্রীপুর হয়ে ওঠে পুণ্যভূমি।

Related Articles