রাজ্যের খবর

শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন জাতীয় ঐতিহ্যের আর এক নাম

Another name for national heritage is Shibpur Botanical Garden

Truth Of Bengal: রাজু পারাল: হাওড়ার কথা বললেই মনে পড়ে শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনের কথা। যা পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের অহংকার ও গর্ব। ইস্ট ইন্ডিয়ার কোম্পানি’র কর্মচারীরা এই উদ্যান নির্মাণ করেছিল বলে এটি ‘কোম্পানি’র বাগান’ নামেও পরিচিত। রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনকালে এই উদ্যানটির নাম রাখা হয়েছিল ‘রয়্যাল ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল গার্ডেন’।

ভারত স্বাধীন হবার পর ১৯৬৩ সালে এই উদ্যানের নাম রাখা হয় ‘ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন’। ২০০৯ সালে পুনরায় নাম বদলে রাখা হয় আমাদের গর্বের বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর নামে। যা সকলের কাছে আজকের পরিচিতি পেয়েছে ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ভারতীয় বোটানিক গার্ডেন’। হাওড়ার শিবপুরে গঙ্গা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত আজকের বোটানিক্যাল গার্ডেন। বলা হয়ে থাকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচাইতে প্রাচীন এবং বৃহত্তম এই উদ্যান।

১৭৮৭ সালে ৩১০ (প্রায়) একর জমির উপর এই উদ্যানটি নির্মাণ করেন কর্নেল রবার্ট কিড। তিনি ছিলেন স্কট ল্যান্ডের মানুষ। কোম্পানির সামরিক বিভাগে আমৃত্যু তিনি সচিব পদে নিযুক্ত ছিলেন। ফৌজি হলেও তাঁর ছিল যথেষ্ট উদ্যানপ্রীতি। তবে কৌতূহল মেটাতে কিংবা বিলাসের সামগ্রী হিসেবে তিনি কেবলমাত্র বিরল গাছপালা সংগ্রহ করেননি, একটা সংগ্রহশালা গড়ে তুলে সেখানকার সংগৃহীত গাছপালা বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে ভারত ও গ্রেট ব্রিটেনের মানুষ উপকৃত হয় এবং সেই সঙ্গে জাতীয় ব্যবসা – বাণিজ্যের বিস্তার এবং সম্পদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।

বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠার কিছুকাল পরে চল্লিশ একর জমি ( যা কিডের সম্পত্তি ছিল ) খ্রিস্টান কলেজ তৈরির জন্য দান করা হলেও পরে সে জমিতে গড়ে ওঠে আজকের ‘বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি ( বেসু )। আঠারো শতকে বিশ্বের কোনো বাগান এরকম বিশাল পরিধি নিয়ে জন্ম নেয়নি।
প্রথমদিকে রবার্ট কিড এই উদ্যানে সেগুন, মশলার গাছ এবং বিভিন্ন নতুন নতুন গাছ লাগাতে শুরু করেন যা মানুষের উপকারে লাগতে পারে।

কর্নেল কিডের মৃত্যুর পর ১৭৯৩ সালে বোটানিক্যাল গার্ডেনের সুপারিন্টেন্ডের দায়িত্ব নেন উদ্ভিদবিদ উইলিয়াম রক্সবার্গ। তিনি ছিলেন প্রশিক্ষিত উদ্ভিদপ্রেমী। তাঁর উপস্থিতি বোটানিক্যাল গার্ডেনে সৃষ্টি করেছিল এক নতুন উজ্জ্বল অধ্যায়। এরও কিছু সময় পরে উদ্যানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ন্যাথানিয়েল ওয়ালিচ। তিনিও বহু নতুন গাছ সংগ্রহ করে এই উদ্যানে রোপন করেছিলেন। রক্সবার্গের পরে সুপার হয়ে উইলিয়াম গ্রিফিথও উদ্যানের উন্নতি কল্পে বহু কাজ করে গেছেন।

বিশ্বের এই বৃহৎ আকৃতি গার্ডেনে দেখা যায় মেহগিনি , শাল, সেগুন, শিমুল, বট, অশ্বত্থ, লবঙ্গ, দারুচিনি, জায়ফল, তেজপাতা, রবার ,অর্কিড, পাম, স্ক্রু পাইন, বোগেনভিলিয়া, জুঁই, ক্যাকটাস ও বাঁশ জাতীয় নানা রকমের গাছ। তবে, এই গার্ডেনের প্রধান আকর্ষণ ২৫০ বছরের ও বেশি পুরোনো বিশাল বটবৃক্ষ। সুবিশাল শত শত ঝুরি নিয়ে ঐতিহ্যশালী এই বট গাছটি প্রায় দেড় একর জায়গা জুড়ে দর্শনীয় বস্তু হিসাবে শোভা বর্ধন করছে আজও। যার পরিচিতি ‘ দ্য গ্রেট বেনিয়ান’ নামে।

এই বট বৃক্ষের মুল গাছের শিকড় থেকে সৃষ্টি হয় বিশাল আকারের বহু বট গাছ। গাছপালার পাশাপাশি এই উদ্যানে লক্ষ করা যায় নানা রকমের পাখিও। চোখে পড়ে বেনে বৌ, পরিযায়ী পাহাড়ি ময়না, কাঠঠোকরা, বসন্ত গৌরি, ছাতারে, বী ইটার, জঙ্গল আওলেট ( প্যাঁচা ) প্রভৃতি। স্বাধীনতার পর ‘বোটানিক্যাল গার্ডেন’ ভারত সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রকের অধীনে ‘বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’ কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছে। নি:সন্দেহে কেবল শহরের বা রাজ্যের নয়, এই উদ্যান সমগ্র দেশেরই গর্ব।

Related Articles