অফবিট প্লেস অন্ধ্রপ্রদেশের কাশ্মীর হিসাবে পরিচিত লাম্বাসিঙ্গি
Offbeat Place Kashmir in Andhra Pradesh

The Truth Of Bengal, Mou Basu : অন্ধ্রপ্রদেশের হিল স্টেশনের নাম উঠলেই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে আরাকু ভ্যালির কথা। আরাকু এখন পর্যটকদের কাছে প্রচুর জনপ্রিয়। তাই পর্যটন মরসুমে ভিড় বেড়ে যায়। আরাকুর মতোই দক্ষিণের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশে স্বল্প পরিচিত অসাধারণ এক হিল স্টেশন হল লাম্বাসিঙ্গি। অন্ধ্রপ্রদেশের কাশ্মীর হিসাবে পরিচিত এই লাম্বাসিঙ্গি। পূর্বঘাট পর্বতমালার কোলে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১০২৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত লাম্বাসিঙ্গি। সবুজ বনানীতে ঢাকা পাহাড়ি এলাকায় নির্ঝঞ্ঝাটে নিরিবিলিতে কয়েকটা দিন কাটানোর আদর্শ জায়গা হল লাম্বাসিঙ্গি। স্থানীয় তেলুগু ভাষায় এই লাম্বাসিঙ্গিকে ‘কোরা বায়ালু’ বলা হয়। এই শব্দের অর্থ হল,”বাইরে থাকলে যে কেউ ঠান্ডায় জমে যেতে পারে।“
লাম্বাসিঙ্গির নিজস্ব যে সৌন্দর্য আছে, সেটাও অসাধারণ। শীতে এখানে এমন ঠান্ডা পড়ে যে অনেক সময় শিশির জমে বরফ হয়ে যায়। বিশাখাপত্তনমের কাছে সবুজ পাহাড়ি উপত্যকায় ঘেরা লাম্বাসিঙ্গিতে সারা বছরই কুয়াশায় ঢাকা থাকে। এখানে সারা বছরই ‘মেঘেরা গাভীর মতো চরে বেড়ায়’। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথের শেষে সুন্দর একটা উপত্যকা। যে দিকে দু’চোখ যায় শুধু সবুজ সবুজ। আশেপাশে রয়েছে বেশ কিছু জলপ্রপাত। শহুরে ব্যস্ত নাগরিক জীবনযাপন থেকে কয়েক হাজার ব্রেক নিয়ে সব মিলিয়ে প্রকৃতির মাঝে কাটানোর আদর্শ অফবিট গন্তব্য হল লাম্বাসিঙ্গি। লাম্বাসিঙ্গিকে ইকো-ট্যুরিজম ডেস্টিনেশন হিসাবে গড়ে তুলছে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার। চা ও কফি বাগানের জন্য বিখ্যাত লাম্বাসিঙ্গি। অল্প পরিমাণে আপেল ও স্ট্রবেরিও চাষ করা হয় এখানে। আদিবাসীদের বাস এখানে।
পাখিপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য লাম্বাসিঙ্গিতে কী দেখবেন—তাজাঙ্গি জলাধার, কোতাপল্লি জলপ্রপাত, সুসান বাগান, ইয়েরভরম জলপ্রপাত। লাম্বাসিঙ্গি থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে কুয়াশামাখা সবুজ পাহাড়ি উপত্যকা ঘেরা থাজাঙ্গি জলাধার। চারিদিকে সবুজের মাঝে টলটলে নীল জলরাশি দেখলে মনে হয় প্রকৃতি বুঝি তার সব রূপরঙ এখানেই ঢেলে দিয়েছে। প্রকৃতিপ্রেমী ও চিত্রগ্রাহকদের পছন্দের জায়গা হল লাম্বাসিঙ্গি। যথাযথ পরিকাঠামো না থাকলেও পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য হল লাম্বাসিঙ্গির কাছে কোতাপল্লি জলাধার। এখানে আসলেই দেখা যায় উঁচু পাহাড়ের ওপর থেকে অবিরাম নীচে নেমে আসছে অন্তহীন জলধারা। প্রকৃতিপ্রেমীদের আরেক পছন্দের জায়গা হল লাম্বাসিঙ্গির কাছে নানান রকম ফুলে ঢাকা সুসান গার্ডেন বা বাগান। এছাড়া দু’পাশে বড়ো বড়ো গাছে ঢাকা ঘাট রোড দিয়ে হাঁটাও এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
লাম্বাসিঙ্গি থেকেই বেরিয়ে আসা যায় বোজ্জান্নাকোণ্ডা ও লিঙ্গলাকোণ্ডা থেকে। সংঘারাম গ্রামের দুদিকে দেখা যায় এই ২ পাহাড়। তেলুগু ভাষায় কোণ্ডা মানে পাহাড়। ভারতের অন্যতম প্রাচীন বৌদ্ধবিহার বলে পরিচিত এই সংঘারাম গ্রাম। চতুর্থ ও নবম শতকের আমলে বহু বৌদ্ধ স্তূপের খোঁজ মিলেছে এখানে। বোজ্জান্নাকাণ্ডর মানে তেলুগু ভাষায় বুদ্ধের পাহাড়। পাখিপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য কোন্ডাকারলা বার্ড স্যাংচুয়ারিতে দেখা মেলে নানান প্রজাতির পাখির। কীভাবে যাবেন লম্বসিঙ্গি? প্রথমে আপনাকে পৌঁছোতে হবে বিশাখাপত্তনম। সেখান থেকে সড়কপথে লাম্বাসিঙ্গি ১০১ কিলোমিটার। যেতে লাগবে ৩ ঘণ্টা। কোথায় থাকবেন? লাম্বাসিঙ্গিতে থাকার জন্য অনেক রিসর্ট তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের রিসর্টও রয়েছে এই শৈলশহরে। অনলাইনে বুক করতে পারেন www.tourism.ap.gov.in ওয়েবসাইটে গিয়ে।
FREE ACCESS