ভ্রমণ

কালাপাহাড় এই মন্দিরকে ধ্বংস করতে পারেনি, জানেন কি সেই ইতিহাস?

Tourism of West Bengal

The Truth of Bengal: তমলুকের বর্গভীমা দেবীর নামও বাংলার বহু প্রাচীন গ্রন্থে পাওয়া যায়। এই দেবীকে কে বা কারা, কোন সময়ে প্রতিষ্ঠা করেছিল, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। বর্গভীমা দেবীকে নিয়ে বঙ্গদেশে তিনটি কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। তমলুকের প্রাচীন ও আধুনিক বিবরণ নামে গ্রন্থে রাজা তাম্রধ্বজের প্রতিষ্ঠিত বলে দাবি করা হয়েছে। কিংবদন্তী রয়েছে, রাজা তাম্রধ্বজ একজন ধীবর পত্নী বা মৎস্যজীবীর স্ত্রীকে নিয়োগ করেছিলেন, রোজ রাজবাড়ীতে মাছ দিয়ে যাওয়ার জন্য। একবার সেই ধীবর পত্নী, জঙ্গলের রাস্তা ধরে আসার সময় খেয়াল করেন, একটি ছোট কুণ্ড রয়েছে। সেখানে কিছু মরা মাছ তিনি ফেলে দেন। কিন্তু খেয়াল করেন, কুণ্ডতে মরা মাছগুলি ফেলার পরেই, তা জীবন্ত হয়ে ওঠে। বিষয়টি চাপা থাকলো না, ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়ল গ্রামবাসীদের মধ্যে। তারপর সেই কথা যায় রাজা কানে। বিষয়টি চিনি চাক্ষুষ করার জন্য, ওই কুণ্ডের কাছে আসেন।

রাজা তাম্রধ্বজও খেয়াল করেন ধীবর পত্নী যে দাবিটি করেছিলেন, তা নিছক মিথ্যে কথা নয়। তার পরেই তিনি, কুণ্ডের কাছে একটি বেদী করিয়ে দেন। কেউ কেউ বলেন কৈবর্ত্ত রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কালো ভূঁইয়া এই বর্গভীমা মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা।  হান্টার সাহেব তার অ্যাকাউন্ট অফ বেঙ্গল নামক গ্রন্থে আরও একটি কিংবদন্তি উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন যে, ধনপতি বণিক সিংঘল যাত্রার সময় তমলুকে কিছু বিরতি নিয়েছিলেন। এবং তিনি দেখতে পান, এক ব্যক্তি জঙ্গলের রাস্তা ধরে যাচ্ছেন, তাঁর হাতে সোনার অলঙ্কার। তিনি ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন, এই সোনার অলঙ্কার তিনি কোথায় পেলেন? ওই ব্যক্তি জানান, জঙ্গলের কাছেই একটি কুণ্ড রয়েছে, সেখানে পিতলের অলঙ্কার ডোবানোর পরেই, তা সোনার অলঙ্কারে রূপান্ত হচ্ছে। এই কথা শুনে, ধনপতি বণিকও তাঁর বজ্রায় থাকা পিতলের বাসনপত্র, জঙ্গলের কুণ্ডে ডুবিয়ে দেখেন তা সোনায় পরিণত হচ্ছে। এবং তা নিয়েই তিনি সিংঘল যাত্রা করেন। ফেরার পথে, তিনিই তমলুকে এই মন্দির নির্মাণ করিয়ে দেন।

বর্গভীমা দেবীর মন্দিরটি তমলুকের একটি প্রাচীন কীর্তি। এই মন্দিরের অপূর্ব শিল্প নৈপুন্য দেখে, সাধারণ মানুষ বলে থাকেন, এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। যদিও এই মন্দির ঠিক কার আমলে নির্মাণ হয়েছিল, তার কোনও সঠিক প্রমাণ মেলে না। তবে মন্দিরের বাইরের গঠন প্রণালী দেখে বোঝা যায় উৎকল বাস্তুকলার ছাপ রয়েছে। এবং মন্দিরটি যে একটি বৌদ্ধ বিহারের উপর স্থাপিত তার গঠনগত দিক বিচার করলেই বোঝা যায়। বর্গভীমার মন্দিরকে ঘিরে আরও কিছু লোকশ্রুতি রয়েছে, যেমন কালাপাহাড় যখন উড়িষ্যা আক্রমণ চালায়, আসার পথে বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে। বর্গভীমা মন্দিরের কথা শুনে কালাপাহাড় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে, তার সেনারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। অবশেষে এই মন্দিরের উপর হামলা করার পরিকল্পনা বাতিল করলে, তার সেনারা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়। ফলে এই মন্দিরের মাহাত্ম্য বোঝার পরেই, আর হামলা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেনি কালাপাহাড়।

 

Related Articles