খেলা

ভারতে ক্রিকেটের রমরমায় বঞ্চিত অন্য সব ধরনের খেলা

All other sports are deprived of the excitement of cricket in India

Truth of Bengal, বিপ্লব চৌধুরীঃ ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত প্যারিস অলিম্পিকে ভারত মাত্র ৬টি পদক জিতে পদক তালিকায় ৭১তম স্থান দখল করেছে। সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ হয়েও সাফল্যের হার এত খারাপ কেন? বিগত পাঁচটি অলিম্পিক ধরে মাত্র দুটি স্বর্ণপদক ভারতের ঝুলিতে এসেছে। অলিম্পিকে ভারতের  হতাশাজনক পারফরম্যান্স অনেকগুলি প্রশ্ন সামনে তুলে ধরে। এইরূপ ফলাফলের প্রধান কারণ কি? ভারতে ক্রিকেট ছাড়া অন্য খেলার প্রতি বৈমাত্রেয় দৃষ্টিভঙ্গি? একটি পরিসংখ্যান দিলেই বিষয়টি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।

২০২৪ সালে ভারত সরকারের ক্রীড়া বাজেটে হল ৩৪৪২.৩২ কোটি টাকা। তার মধ্যে ‘খেলো ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের জন্য সবচেয়ে বেশি ৯০০ কোটি। অপরদিকে ২০২৩-২৪ সালে ভারতীয় ক্রিকেটের বাৎসরিক বাজেটে হল ১৮৭০০ কোটি। ২০২৫ সালে যে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) অনুষ্ঠিত হবে তার বাজেট হল ৯০০৩৮ কোটি টাকা। ভারতে ক্রিকেটের বিজয়রথের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৩ সালে কপিল দেবের হাত ধরে বিশ্বকাপ জয় দিয়ে।

পরবর্তীতে ক্রিকেটের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও উন্মাদনা দুটোই চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতীয় ক্রিকেটের সাফল্য সত্যিই দারুণ। এই বছর ২০২৪ সালে ভারতের টি২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় আবারও দেশকে গৌরবান্বিত করেছে। ভারতে ক্রিকেট এখন আর শুধু একটি খেলা নয়, ক্রিকেট এখন মানুষের আবেগ, ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। উঠুক, তাতে ক্ষতি কীসের? তবে মনে একটা প্রশ্ন জন্ম নেয় যে ক্রিকেটর অত্যাধিক জনপ্রিয়তা ভারতে অন্য খেলাগুলিকে ‘হত্যা’ করছে না তো? হয়তো না।

তা হলে ব্যাডমিন্টনে পিভি সিন্ধু , টেনিসে  লিয়েন্ডার পেজ, মহেশ ভূপতি, সানিয়া মির্জা, জ্যাভলিন থ্রোয়ে নীরজ চোপড়া, রাইফেল শ্যুটিংয়ে অভিনব বিন্দ্রা থেকে শুরু করে মানু ভাকের, সরবজোত সিং ও সপ্নিল কুসলে, কুস্তিতে সুশীল কুমার, যোগেশ্বর দত্ত, সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়া, আমন শেরায়তদের সাফল্য  দেখতে পেত না দেশ। তবে এই সব সাফল্য এসেছে ব্যক্তিগত স্তরে, দলগতভাবে সাফল্য কোথায়? কয়েক বছর আগে প্রো কবাডি লিগ আশার আলো সঞ্চার করেছিল। স্পনসরশিপ, বিভিন্ন দলগুলির প্লেয়ার কেনার দৃশ্য আমরা দেখেছি।

কিন্তু এখন আর সেইরূপ আশাব্যঞ্জক দৃশ্য দেখা যায় না। অন্যদিকে ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতিতে নেই কোনও খামতি। এর জন্য ভারত সরকারের ক্রীড়া পরিকল্পনা অনেকাংশে দায়ী। ভারতের জাতীয় খেলা হকি। একদা ভারতীয় পুরুষ হকি দল ভারতকে অলিম্পিক পদক পর্যন্ত এনে দিয়েছে। সেই খেলার উন্নয়নে ভারতের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। ক্রিকেটে সরকারি, বেসরকারি বিনিয়োগ দুটোই বেশি। মিডিয়া কভারেজও পর্যাপ্ত। ফলে ক্রিকেট দিনে দিনে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। আর অন্য খেলাগুলি বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে।

ভারত একদা ফুটবলে অলিম্পিকে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিল। ১৯৫০-৬০ সালের সেই গৌরবময় ঐতিহ্য আজ হয়েছে ম্লান। ভারতে ফুটবলের প্রতি আগ্রহী মানুষের সংখ্যাও কম নয়, কিন্তু ফুটবলের ক্রিকেটের মতো বৈভব কোথায়? ভারতে ক্রিকেট ছাড়া অন্য খেলাগুলি বঞ্চিত থাকার পেছনে হয়তো অনেকগুলি কারণ যেমন– ক্রীড়াক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক কম অর্থ বরাদ্দ, খারাপ পরিকাঠামো যা বিশ্বমানের সমতুল্য নয়।

ক্রীড়াবিদদের অপুষ্টি, অদক্ষ ক্রীড়া প্রশাসন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, সব রাজ্যের প্রতি সমান কেন্দ্রীয় সরকারের যত্নের অভাব বা কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, কর্পোরেট স্পনসরশিপের অভাব, তৃণমূল স্তর থেকে ক্রীড়াবিদ তুলে আনা ও নির্বাচন পদ্ধতিতে খামতি, কেরিয়ার হিসেবে খেলাকে বেছে নেওয়া যেতে পারে এমন ইচ্ছেতে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় ক্রীড়া সাফল্যের পর চাকরি পাওয়ার সুযোগের অভাব ইত্যাদি।

প্রসঙ্গত, সদ্যসমাপ্ত বিহারের রাজগিরে অনুষ্ঠিত এশিয়ান মহিলা হকি চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের মহিলা হকি দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সুতরাং ক্রিকেট ছাড়া অন্য খেলায় যুক্ত খেলোয়াড়দের যোগ্যতা কোনও অংশে কম নয়। তাই সরকারের উচিত সব ধরনের খেলাকে সমান প্রাধান্য দেওয়া। তবেই আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মানচিত্রে ভারত উজ্জ্বল এক নক্ষত্র হয়ে উঠতে পারবে।

Related Articles