
The Truth of Bengal: বিলম্বে বিচার মানে বিচারের নামে প্রহসন। কয়েক শতাব্দী বছর আগে এই কথা বলে গিয়েছিলেন প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম এডওয়ার্ড গ্ল্যাডস্টোন। বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার ঘটনা ঘটলে বারবার এই কথাটির উদাহরণ দেওয়া হয়। জীবদ্দশায় বিচার পাননি, এমন অনেকের ক্ষেত্রে এই ঘটনা দেখা গিয়েছে। আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে শিক্ষা দুর্নীতি-কাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই এক বছরে বহুবার তাঁকে কোর্টে তোলা হয়েছে। কিন্তু, গত এক বছরে তাঁর বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি।
কয়েকদিন আগে সেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য অনুমতি দিয়েছেন রাজ্যপাল। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কোনও মন্ত্রী গ্রেফতার হলে তাঁর বিচার শুরু করার জন্য রাজ্যপালের অনুমতি প্রয়োজন হয়। সেই অনুমতি দিয়েছেন রাজ্যপাল। এবার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। গত এক বছর ধরে প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি রয়েছেন পার্থ। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিটও পেশ করা হয়েছে। নিজের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি বারবার জামিন চেয়েছেন। তাও জামিন পাননি তিনি।
গতবছর তৃণমূলের ২১ জুলাই সমাবেশের পরদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন ইডি অফিসাররা। সেদিনই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় কোটি কোটি টাকা। তিনি ছিলেন তৎকালীন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। পার্থর বাড়ি থেকেই চিরকূটের সূত্র ধরে অর্পিতার টালিগঞ্জে ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় ইডি। সেখান থেকে উদ্ধার হয় ওই হিসাব বহির্ভূত কোটি কোটি টাকা। সেদিনটি ছিল শুক্রবার। সকাল থেকে গভীর রাত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল ইডি।
প্রায় ২৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। এক টানটান নাটকীয় ঘটনা দেখেছিল রাজ্যবাসী। তারপর থেকে শুধু কোর্ট আর প্রেসিডেন্সি জেল। ৭০ বছর বয়সী স্থূলকায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় বারবার অসুস্থ হয়েছেন। তাই তিনি যে কোনও শর্তে একাধিকবার জামিন প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু, কোনও বারই তা মঞ্জুর হয়নি। অবশেষে বিচার শুরু হল। মামলার জন্য গত একবছর যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এবার বিচার হবে। আর বিচারেই নির্ধারিত হবে তিনি দোষী না দোষী নন। দোষী হলে সাজা পাবেন। আর না হলে ছাড়া পাবেন। কারণ আইন চলবে আইনের পথে। তবে যেটা বলার সেটা হল, বিচার শুরু করার জন্য গত একবছর সময় পেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এবার আর দীর্ঘসূত্রিতা নয়, দ্রুত হোক বিচার। যা প্রতিটি বিচারাধীন বন্দির মৌলিক অধিকার। না হলে আবার বলতে হবে।