অফবিট

এই দ্বীপে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল প্রায় দেড় লক্ষ মানুষকে, তারপর থেকেই এমন কিছু ঘটেছিল, তা আজও রহস্যময়

Poveglia

The Truth of Bengal: সময়টা ১৩৪৮ ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ল ভয়ঙ্কর এক রোগ প্লেগ। ইটালির ভেনিস শহর থেকে কিছুটা দূরে একটি দ্বীপে রাখা হত প্লেগ আক্রান্ত রোগীদের। সেই দ্বীপই হয়ে উঠেছিল একটি সময়ে ইটালির কোয়ারানটাইন সেন্টার। কিন্তু তারপর সেই দ্বীপে যা যা ঘটল বরং বহু শতাব্দী পার করার পরেও সেই দ্বীপে আজও যা ঘটে তা রহস্যময়।ইটালি সফরে যাওয়ার পর অনেকেই ভেনিস বেড়াতে যান। প্রায় জলের মধ্যে থাকা একটি শহর। গন্ডোলা রাইড আপনাকে অন্য জগতে নিয়ে যাবে। প্রাচীন শহরের ছাপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আশে পাশে। ইটালির ভেনিস শহর থেকে কাছে পীঠে যাওয়া যায় কয়েকটি দ্বীপে। সেগুলি অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। কিন্তু একটি দ্বীপ রয়েছে, যা অদ্ভুত রোমাঞ্চকরতো বটেই, সেই সঙ্গে এই আইল্যান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক কুখ্যাত ইতিহাস।পোভোগ্লিয়া দ্বীপের ছবি যদি দেখানো হয়, তাহলে কারও মনে হতেই পারে এটি ভালো বেড়ানোর জায়গা। দ্বীপটি অবস্থিত ইতালির ভেনিস ও লিডো শহরের মাঝামাঝি জায়গায়। এই দ্বীপের আদি মালিক কে তা এখনও জানা যায়নি। কিন্তু এই দ্বীপ একাধিকবার হাত বদল হয়েছে তার ইতিহাস মেলে।

কেউ কি পোভেগ্লিয়া দ্বীপে বাস করে?

না এই দ্বীপে বর্তমানে কেউ বাস করে না। কারণ কতগুলি রহস্যময় ঘটনা। আর এই দ্বীপে না থাকার কারণ লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাসে। এই দ্বীপের কথা প্রাচীন রোমান ইতিহাসে মেলে। নবম শতকেও এই দ্বীপে বেশ কিছু মানুষ বসবাস করতেন এবং চাষাবাদ করতেন। রোমান সময়েও এই দ্বীপটি ব্যবহার করত জাহাজের দিক নির্দেশের পয়েন্ট হিসেবে। সেই সময় নাবিকরা এই পোভেগ্লিয়া দ্বীপের পয়েন্টকে কেন্দ্র করেই জাহাজ ভেড়াতো। তার কিছুকাল পরে এই দ্বীপ হয়ে ওঠে, ইউরোপীয়দের জন্য কাস্টম হাউস। জাহাজ থেকে মালপত্র ওঠানামা হত, এবং ছোট নৌকা করে শহরে পণ্য আসা যাওয়া করত।কিন্তু ১৩৪৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ গোটা ইউরোপ জুড়ে ভয়ঙ্কর প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে। বাদ যায় না ইটালিও। সেই সময় এই দ্বীপকে  কোয়ারানটাইন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হল। ব্রিটিশরা যেহেতু দেহ পোড়ায় না, তাই মৃতদের এই দ্বীপেই কবর দেওয়া শুরু হল। একটা সময়, এতো দেহ জমতে শুরু করল, যে জমির অভাব দেখা দিল এই দ্বীপে। একটি দেহ পুরোপুরি মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার আগেই একের পর এক লাশ জমতে শুরু করে। তারপরেই ছড়িয়ে পড়ে পোভেগ্লিয়া আইল্যান্ড অপরূপ মায়াবী একটি মৃত্যুপুরী দ্বীপ।অগত্যা গলা পচা লাশের মধ্যে ফেলে কবর দেওয়া হত আরও নতুন লাশ। একটা সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেহ আর কবর দেওয়া হবে না, বরং পোড়ানো হবে। প্লেগের প্রাদুর্ভাব এমন একটা জায়গা নিল, কোনও ব্যক্তির মধ্যে প্লেগের লক্ষন দেখা দিলেই, সেই দ্বীপে নিয়ে গিয়ে জীবন্ত পোড়ানো হত। তারপর ইউরোপ থেকে প্লেগের প্রাদুর্ভাব কমলে, ওই দ্বীপকে পুরোপুরি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর কয়েক শতক কাটে।

শাটার দ্বীপ পোভেগ্লিয়া ভিত্তিক একটি দ্বীপ কেন?

১৯২২ সালে এই দ্বীপে মানসিক রোগীদের একটি হাসপাতাল তৈরি করা হয়। ব্যাপক প্রচার ছড়িয়ে পড়ে, সেখানকার রোগীরা প্রায়ই মৃতদের দেখতে পেত। চিকিৎসকমহল বলতে শুরু করল এটা তাদের মানসিক সমস্যা। কিন্তু ধীরে ধীরে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মীরাও নিজেদের কোয়ার্টারে ফিরে অদ্ভুত পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছেন। কিছু চিকিৎসক বারবার একই স্বপ্ন দেখেছেন, যেন একদম জীবন্দ দ্বগ্ধ মানুষ, বাঁচার জন্য আর্তি জানাচ্ছেন। তারপর এই দ্বীপে যতবারই চিকিৎসক ও কর্মীদের পাঠানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ উন্মাদ হয়ে গিয়েছে। তারপর থেকেই সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর জায়গা পোভেগলিয়া দ্বীপ। এরপরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ওই দ্বীপে হাসপাতালটিকে বন্ধ করে দেওয়ার। ফের পরিত্যক্ত হয়ে ওঠে ওই দ্বীপ।কয়েক বছর পর শুধুমাত্র আঙ্গুর উৎপাদনের সময়েই এই দ্বীপে মানুষজনকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। কিন্তু চাষিরা, কয়েক মাসের মধ্যে পালাতে শুরু করে। অগত্যা ইতালির পুরসভা দ্বীপটিকে বেসরকারি হাতে লিজে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৬০ সালে এক ব্যক্তিকে লিজে দেওয়া হয়, তিনি চেয়েছিলেন ট্যুরিজিম হাব তৈরি করবেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে তিনি তিন দিনের মাথায় একটি দুর্ঘটনায় মারা যান।  তার কয়েকবছর পর আরও এক ব্যবসায়ীকে লিজে দেওয়া হয়, তিনিও মাসখানেকের মধ্যে উন্মাদ হয়ে যান। তারপর থেকে এই দ্বীপ কেউ কেনার সাহস পাননি। তাই অনেকে মনে করেন অভিশপ্ত এই দ্বীপ পোভেগ্লিয়া।

দ্বীপটিতে যেতে অবৈধ কেন?

এই দ্বীপে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি সরকার। কিন্তু সন্ধের মধ্যে ফিরে আসা বাধ্যতামূলক। এখানে কেউ লুকিয়ে যদি রাত্রিবাস করতে যায় এবং কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, তার দায় নেয় না সরকার।