সরস্বতী পুজোর পরদিন হেঁশেলে গোটা সিদ্ধর প্রচলন কেন?
The day after Saraswati Puja, why is the entire Siddhar tradition

The Truth of Bengal,Mou Basu: সরস্বতী পুজোর দিন এদেশীয় অর্থাৎ এপার বাংলায় গোটা রান্নার প্রচলন আছে। অনেকে আবার রান্না নয় গোটা সেদ্ধ খান। দারুণ উপাদেয় এই গোটা রান্না। মূলত সরস্বতী পুজোর পরদিন শীতলষষ্ঠীর দিন পান্তা ভাত, টোপা কুলের চাটনি, গোটা রান্না আর দই দিয়ে খাওয়া হয়।
কতটা স্বাস্থ্যকর গোটা রান্না-
★গোটা রান্না তৈরি করা হয় মাস কলাই ডাল দিয়ে। এই ডাল অত্যন্ত পুষ্টিকর। অন্য ডালের মধ্যে মাস কলাই একমাত্র ডাল যাতে রয়েছে ১০ গুণ বেশি ফসফরাস আর প্রোটিন। ওজন আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এই ডাল। অ্যাজমা, পক্ষাঘাত, কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা রোগীদের মাস কলাই খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে এই ডাল খেতে বলা হয়। তিল তেল আর মাস কলাই একসঙ্গে ফুটিয়ে লাগালে গাঁটে গাঁটে ব্যথা, আর্থ্রাইটিসের ব্যথা থেকে উপশম মেলে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্তচাপ কমায় ব্যাড কোলেস্টেরল মাত্রা কমায় মাস কলাই। হার্ট ভালো রাখে। শরীর থেকে টক্সিন বের করে কিডনি ভালো রাখে। পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, ফসফরাস আর ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ মাস কলাই বোন ডেনসিটি বাড়ায়, হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
★অত্যন্ত পুষ্টিকর আলু বিনা বাঙালির রসনা অসম্পূর্ণ। ফ্যাট আর কোলেস্টেরল মুক্ত আলুতে সোডিয়ামের মাত্রাও কম। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে আলুতে। আলুতে পাওয়া যায় ‘রেসিসট্যান্ট স্টার্চ’ নামে এক বিশেষ ফাইবার যা অন্ত্রকে ভালো রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য আর ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম দূর করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় হার্টের রোগ আর ক্যানসার প্রতিরোধ করে। আলুর খোসায় আলুর চেয়ে ১২ গুণ বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মেলে। সেদ্ধ আলুর খোসায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম আর ম্যাগনেসিয়াম মেলে যা রক্তচাপ কমায়। আমাদের সারাদিনে যত ভিটামিন সি লাগে তার ৪০% পাওয়া যায় একটা আলুতে। সারাদিনে যত পরিমাণ ভিটামিন বি৬ ভিটামিন লাগে তার অর্ধেক পাওয়া যায় আলুতে।
★গোটা রান্না করা হয় পালং শাক দিয়ে। প্রচুর পরিমাণে লোহা পাওয়া যায় শাকে। একেবারে ফ্যাটমুক্ত পালং শাক। পালং শাকে রয়েছে ২৫% সলিউবল আর ৭৫% ইনসলিউবল ফাইবার যা হৃদযন্ত্রের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ঠিক রাখে। শরীর থেকে টক্সিন বের করে কোলোন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন, ভিটামিন এ আর জ্যানথিন থাকায় চোখের জন্য অত্যন্ত ভালো। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় হৃদযন্ত্রের পেশিকে মজবুত রাখে পালং শাক। অত্যন্ত কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকায় পালং শাককে বলা হয় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুপার ফুড। ভিটামিন সি থাকায় পালং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ক্যালসিয়াম হাড়কে মজবুত করে। ফোলেট আর ভিটামিন বি৬ রক্তের লোহিত কণিকা বাড়ায়। হার্টের রোগের জন্য দায়ী হোমোসিস্টিন মাত্রা কমায় পালং শাকে থাকা ফোলিক অ্যাসিড।
★বেগুন কোনো সবজি নয় এটা এক ধরণের ফল। ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড থাকায় নিয়মিত বেগুন খেলে কমে ব্যাড কোলেস্টেরলের মাত্রা। বেগুনে আছে পলিফেনলস যা ক্যানসার প্রতিরোধ করে। অ্যান্থোসায়ানিন আর ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ক্যানসার কোষ দেহে ছড়িয়ে পড়া কমায়। বেগুনে আছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, যা খিদে কমাতে সাহায্য করে। বেগুনে পাওয়া যায় ভিটামিন বি-সিক্স, ফ্ল্যাভোনয়েডস যা হার্টের রোগ প্রতিরোধ করে। প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় হার্টের ধমনি ভাল থাকে আর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়। পটাসিয়াম আর অ্যান্থোসায়ানিন থাকায় বেগুন খেলে রক্তচাপ ঠিক থাকে। বেগুনে থাকা ফাইটোনিউট্রিন্টস মস্তিষ্কের কোষ সুস্থ রাখে। লুটেইন আর জিয়াজ্যান্থিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ বেগুন চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। নিয়মিত বেগুন খেলে অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।
★দারুণ পুষ্টিকর কড়াইশুঁটিতে থাকা কুমেস্ট্রল পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধ করে। ফ্ল্যাভোনলস, ক্যারোটেনয়েডস, ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের আর স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। গ্রিন পিজে থাকা স্যাপোনিনস প্রস্টেট ক্যানসার-সহ বিভিন্ন রকমের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।
★শিমে থাকা ডায়েটারি ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়, নিয়ন্ত্রণে রাখে দেহের ওজনও। ক্যারোটিন, লিউটেন, জিয়াজ্যান্থিনের মতো অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস ফ্ল্যাভোনয়েডস থাকায় শিম খাওয়া দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তোলে, ফুসফুস ও মুখগহ্বরের ক্যানসার থেকে রক্ষা করে। লোহা, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ সমৃদ্ধ শিম নিয়মিত খেলে বোন মিনারেল ডেনসিটি বাড়ে। প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় নিয়মিত শিম খেলে অবসাদজনিত সমস্যা রোধ করা সম্ভব।
আসুন দেখে নিই কী দিয়ে বানানো হয় গোটা রান্না-
গোটা রান্না তৈরি করতে লাগবে, মাস কলাই ডাল, শিস পালং শাক (অনেকে কচি লাউ শাকও দেন), লম্বা লম্বা নুরকি বেগুন, সাদা শীম (না পাওয়া গেলে এমনি শীমও দেওয়া যাবে), কড়াইশুঁটি, কাঁচালঙ্কা আর ছোট আলু। শাক আর ডাল ছাড়া সবই গোটা দিতে হবে। বেগুনের বোঁটা কেটে নিয়ে, নিচের দিকে অল্প চিরে দিতে হবে। শীমের মুখের দিকটা অল্প কেটে নিতে হবে। আলুর খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। কড়াইশুঁটি অল্প ছাড়িয়ে আর বাকি গোটা রাখতে হবে। পালং শাক কুচিয়ে নিতে হবে। সর্ষের তেলে রান্না হবে। তবে মনে রাখতে হবে এটা সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর রান্না তাই বেশি তেল দিয়ে রান্না হবে না। হলুদ গুঁড়ো, কাঁচালঙ্কা, ধনে ও জিরে গুঁড়ো আর স্বাদানুসারে নুন আর গুড় দিতে হবে।