মোবাইলে আসক্ত কিশোর মন! অভিভাবকের হাতেই নিয়ন্ত্রণের লাগাম, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
Teenagers' minds are addicted to mobile phones! The reins of control are in the hands of parents, say experts

Truth Of Bengal: আজকের দিনে স্মার্টফোন কেবল বড়দের নয়, কিশোরদের হাতেও সবসময় সঙ্গী। ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক—সব প্ল্যাটফর্মেই তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সম্প্রতি ব্রিটিশ ওয়েব সিরিজ অ্যাডোলেসেন্স বিষয়টিকে নতুন আলোচনায় এনেছে—কিশোর মনের পরিবর্তন ও সমাজমাধ্যমের প্রভাব।
অনেক কিশোর ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিল দেখে, ডিজিটাল লেনদেন করে, এমনকি ‘সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার’ হতেই চায়। তবে এই ভার্চুয়াল জগতের নেশা থেকে দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা—মন খারাপ, হীনম্মন্যতা, মানসিক চাপ, এবং কখনও কখনও সাইবার অপরাধের ফাঁদে পড়ে যাওয়া।
সমীক্ষায় কী বলছে?
এই বছর একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বিশ্বের ১৩-১৮ বছর বয়সি কিশোররা প্রতিদিন গড়ে তিন ঘণ্টা সমাজমাধ্যমে কাটায়। ভারতেও এই সংখ্যা বাড়ছে। ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, দেশের প্রায় ২৭% কিশোর সমাজমাধ্যমে আসক্ত। এতে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, সঙ্গে মানসিক স্থিতিও নষ্ট হচ্ছে।
কেন এতটা প্রভাব?
পেরেন্টিং এক্সপার্ট পায়েল ঘোষ জানাচ্ছেন, কৈশোরে মানসিক গঠনে বড় পরিবর্তন আসে। এই বয়সে ছেলে-মেয়েরা গুরুত্ব পেতে চায়, স্বীকৃতি খোঁজে। সেটা না পেলেই অনেক সময় ভুল পথে হাঁটে—যেমন সাহসী ছবি পোস্ট করা, অচেনা লোকের সঙ্গে যোগাযোগ, বা হতাশ হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া।
তিনি বলেন, “এই সময়ে সন্তানের পাশে থাকা দরকার। শুধু উপদেশ দিলে হবে না, তাদের চোখ দিয়ে দুনিয়া দেখার চেষ্টা করতে হবে।”
কী কী করা উচিত অভিভাবকদের?
- সন্তান কিছু জিজ্ঞেস করলে লজ্জা না পেয়ে খোলাখুলি উত্তর দিন।
- ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম সম্পর্কে নিজেরাও জানুন।
- ফোনের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে তবেই হাতে দিন।
- কড়া শাসনের বদলে বুঝিয়ে বলুন মোবাইলের খারাপ দিক।
- সন্তান কী ভালোবাসে—গান, খেলা, বা বই—তা জানুন, উৎসাহ দিন।
- প্রশংসা করুন, যেন সে অন্যের লাইক খোঁজার চেয়ে আপনাদের স্বীকৃতি পায়।
- সময় থাকতেই মোবাইল ব্যবহারের নিয়ম করুন।
- প্রয়োজন হলে ইউটিউব কিডস বা পেরেন্টাল কন্ট্রোল চালু করুন।
- বাচ্চার ব্রাউজিং বা লোকেশন সম্পর্কে খোঁজ রাখুন, কিন্তু গোপনে নয়—বিশ্বাস রেখে।
- এবং সবথেকে জরুরি, আপনি যেমন ব্যবহার করবেন, সন্তানও তেমনটাই শিখবে।
সামাজিক মাধ্যম একদিক থেকে দরকারি হলেও, অতিরিক্ত নির্ভরতা অনেক সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই বাবা-মায়ের দায়িত্ব শুধু ফোন কেনা নয়, বরং সন্তানের মন বোঝার চেষ্টাও করা।