
The Truth of Bengal: মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুর। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে মল্লরাজা বীর হাম্বিরের হাত ধরে সূচনা হয়, প্রথম মন্দিরের সূচনা। রাসমঞ্চ। এই মন্দিরের ব্যবহার হত, রাসউৎসবের সময়। পিরামিড আকৃতির অদ্ভুত স্থাপত্যের অনন্য উদাহরণ। পরবর্তী সময়ে জোড়বাংলো, পঞ্চরত্ন মন্দির, মদনমোহন মন্দির, লালজি মন্দির, রাধাশ্যাম মন্দির, নম্দলাল মন্দির, কালাচাঁদ মন্দির, রাধাবিনোদ মন্দির, মদনগোপাল মন্দির, রাধাগোবিন্দ মন্দির, জোড়মন্দিরসহ একাধিক মন্দির নির্মাণ করা হয়। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, একটি মন্দিরের স্থাপত্যের সঙ্গে অন্য মন্দিরের কোনও মিল নেই।
আর এই অনন্য স্থাপত্যের জন্যই, স্বতন্ত্র বাঙালি বাস্তুকলার জন্ম হয়েছে। যা বিশ্বব্যাপী বাস্তুকলা বিদ্যার্থীদের কাছে সমাদৃত। এতো গেল মন্দিরনগরীর কথা। সঙ্গীত শিল্পের ক্ষেত্রেও পূর্ব ভারতে অনন্য স্বাক্ষর বহন করে চলছে, শাস্ত্রীয় সঙ্গী বিষ্ণুপুর ঘরাণা। যা অবিভক্ত বাংলার একমাত্র ধ্রুপদী সঙ্গীত ঘরানা। ইতিহাস থেকে জানা যায়, বিষ্ণুপুরের সঙ্গীত ঘরানার সূচনা হয়েছিল ১৩ শতাব্দী থেকে। যদিও এর কোনও প্রমাণ্য তথ্য মেলে না। তবে উত্তরভারতের প্রতিষ্ঠিত ধ্রুপদশিল্পীদের যে নিয়ে আসা হত, তার কিছু প্রমাণ মেলে। কিংবদন্তী রয়েছে ১৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ, মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলে কট্টর ইসলামপন্থা শুরু হয়।
সেই সময়, সেই সময়, লখনউ, আগ্রা থেকে বহু খেয়াল সঙ্গীতশিল্পী বাংলায় চলে আসেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন তানসেনের বংশধর বাহাদুর খান। তাঁরই শিষ্য ছিলেন পণ্ডিত রামশঙ্কর ভট্টাচার্য, তাঁর হাত ধরেই বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রতিষ্ঠা হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর পর থেকে বিষ্ণুপুর সঙ্গীত ঘরানা এক উচ্চ শিখরে পৌঁছয়। বিষ্ণুপুর সঙ্গীত শুধু নয়, দ্যুত ক্রীড়ার ক্ষেত্রে এক অনন্য নজির এখনও রয়েছে এ শহরে। আজ সারা বিশ্ব জানে তাস খেলার কথা। কিন্তু এই বাংলার বুকেই কয়েক শতাব্দী আগে জন্ম নিয়েছিল, বাংলার নিজস্ব তাস খেলার ঘরানা। যা দশাবতার তাস নামে পরিচিত। আজ এই খেলা লুপ্তপ্রায়। কিন্তু কিছু শিল্পীর হাত ধরে বেঁচে রয়েছে, দশাবতার তাস। যা এক সময় রাজদরবারে খেলা হত সারা রাত ধরে।