
The Truth of Bengal, Mou basu : চা-প্রেমী ভারতীয়দের সঙ্গে চায়ের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। চা পাতায় থাকে অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্লুয়োরিড, ম্যাগনেশিয়াম, দস্তা। এছাড়াও মূল যে উপাদানগুলো শরীরের জন্য বেশি উপকারী তা হল ক্যাফেনিন, এল-থিয়ানিন, ক্যাটেচিন।ক্যাটেচিন হল পলিফেনন জাতীয় উপাদান। এতে আছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। ক্যাফেনিন মন আর মাথা সজাগ আর চটপটে রাখে। এল-থিয়ানিন শরীরকে স্বস্তি দেয় অর্থাৎ রিলযাক্স করে। কমে। ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ কাপ লিকার অথবা গ্রিন টি খেলে ২১-৩৫% স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। ৪ কাপ গ্রিন টি খেলে ৩২% হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। চায়ের পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। চায়ের পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের বয়সকে ধরে রাখতে সাহায্য করে আর দূষণ থেকে বাঁচায়। হোয়াইট টিতে বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট মেলে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ৩-৪ কাপ গ্রিন টি খেলে কমে পার্কিনসন ডিজিজ, ডিমেনশিয়ার মতো স্নায়ুঘটিত নানান রোগ। চা খেলে বাড়তি মেদ ঝরে। ওজন কমে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় চা। তাই নিয়মিত চা খেলে সংক্রমণ হয় না।
আদা চা খেলে বমি বমি ভাব কমে। গ্রিন টিতে দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম মেলে। এছাড়া পাওয়া যায় লোহা, ভিটামিন এ, কে। হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে চা। জাপানের একদল গবেষক দাবি করেছেন চা খেলে দাঁতক্ষয় রোধ হয়। চা খেলে মুখের পিএইচ ভারসাম্য বদলায়। ক্যাভিটি হওয়া আটকায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিবার চা ফুটিয়ে খেলে বাড়াতে পারে শরীরে পিএইচ-এর মাত্রা। ফলে ভালোর থেকে মন্দ হতে পারে অনেক বেশি। তা অনেক রকম রোগের সৃষ্টি করে পারে। চা বেশি করে ফুটিয়ে খেলে এই সব উপাদাঙ্গুলো বেশি বেরিয়ে আসে। ফলে দিনে একাধিকবার একই চা পাতা ফুটিয়ে চা খেলে তা স্বাভাবিকভাবেই পিএইচ মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তার ফলে ক্ষতি করে। সে ক্ষেত্রে টি ব্যাগ অনেকটাই ভালো। কারণ টি ব্যাগ গরম হলে খুব বেশি হয়তো ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড ডুবিয়ে রাখতে হয়। তাতে যে পরিমাণ এই সব উপাদান বেরোয় তা যথেষ্ট। সেখানে খোলা চা পাতা দিয়ে চা তৈরি করলে করলে তা কম করেও দুই থেকে তিন মিনিট ফোটানো হয়। খোলা চা পাতা দিয়ে চা তৈরি করলে তাতে জলে বেশি পরিমাণে বায়ো অ্যাক্টিভ পদার্থ মেশে যার প্রভাব পড়ে চায়ের পিএইচ লেভেলেও। খোলা চায়ে পাতা বড়ো বড়ো গোটা গোটা হয়।
টি ব্যাগে ভাঙা পাতা, গুঁড়ো চা থাকে। খোলা চা পাতায় বেশি পরিমাণে বায়ো অ্যাক্টিভ পদার্থ আছে। চা যত বেশি ফোটানো হয় তত বেশি বায়ো অ্যাক্টিভ পদার্থ মেশে যাতে চা খেতে কড়া স্বাদ লাগে। সুতরাং, খোলা চা হলে বেশি না ফুটিয়ে অথবা টি ব্যাগ দিয়ে তৈরি চায়ের সঙ্গে পারলে মিশিয়ে নিন কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস। এই ভাবে তৈরি চা যেমন খেতেও ভালো তেমন স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো।কিন্তু টি ব্যাগের চা নিয়েও একটা চিন্তার বিষয় থেকে যাচ্ছে । Environmental Science and Technology নামক জার্নালে প্রকাশিতমন্ট্রিয়ালের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের অজান্তেই প্রতিদিন শরীরে ঢুকছে মাইক্রোপ্ল্যাস্টিক। টি ব্যাগের সৌজন্যে আমরা প্রতিদিন চায়ের সঙ্গে খাচ্ছি মাইক্রো প্ল্যাস্টিক। একটা প্ল্যাস্টিকের তৈরি টি ব্যাগ থেকে বেরোয় ক্ষতিকারক ১১.৬ বিলিয়ন মাইক্রোপ্ল্যাস্টিক আর ৩.১ বিলিয়ন ন্যানোপ্ল্যাস্টিক। তাই বেশি কোনোটাই ভালো নয়, তা সে চা বেশিবার ফোটানোই হোক কিংবা টি-ব্যাগ।