লাইফস্টাইলস্বাস্থ্য

স্বল্প সময়ের উপোস স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তোলে অ্যালঝাইমার্স রোগীদের

Short-term fasting improves memory in Alzheimer's Patients

The Truth of Bengal: সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে অ্যালঝাইমার্স রোগীরা যদি স্বল্প সময়ের জন্য উপোস করে। তবে তা তাদের শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লক ঠিক করা সম্ভব। খাদ্যের পরিমাণ না কমিয়েও যদি মাঝেমধ্যে উপোস করা যায় তাহলে তাদের ঘুমের পরিমাণ বাড়বে। একইসঙ্গে বাড়বে স্মৃতিশক্তি। প্রায় ৮০% অ্যালঝাইমার্স বা স্মৃতিভ্রংশ রোগীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। মস্তিষ্কের কগনিটিভ কার্যকারিতা অর্থাৎ লক্ষ্য স্থির রেখে হাঁটাচলা করা, কোনো বস্তুর থেকে একজন ব্যক্তির দৈহিক দূরত্ব, দিক সম্পর্কে বোধ, গণনা করার ক্ষমতা, মনে রাখার ক্ষমতা, তথ্য বিশ্লেষণ করা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এসব কমে যায় অ্যালঝাইমার্স রোগীদের ক্ষেত্রে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সান ডিয়াগো স্কুল অফ মেডিসিনের একদল গবেষক ইঁদুরদের ওপর গবেষণা চালান। Cell Metabolism নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্র। সেই গবেষণায় নির্দিষ্ট সময় মেনে ইঁদুরদের দিনে খাবার খেতে দেওয়া হয়। মাত্র ৬ ঘণ্টা খেতে দেওয়া হয়। দেখা গেছে, ওইসব ইঁদুরদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা তো বেড়েইছে তেমনই মস্তিষ্কে ক্ষতিকর অ্যামিলয়েড প্রোটিন কম জমা হচ্ছে। এই অ্যামিলয়েড প্রোটিন জমা হয় অ্যালঝাইমার্স রোগীদের মস্তিষ্কে।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যে সব ইঁদুর সারাক্ষণ খেয়েছে তাদের তুলনায় নির্দিষ্ট সময় অন্তর খাওয়া ইঁদুরদের স্মৃতিশক্তি ভালো রয়েছে। তারা রাতে কম হাইপারঅ্যাক্টিভ থাকছে। ভালো ভাবে ঘুমোচ্ছে, ঘুমে কম ব্যাঘাত ঘটছে। গবেষকদের দাবি স্বল্প সময়ের জন্য উপোস করলে মস্তিষ্কে অ্যামিলয়েড প্রোটিন কম জমা হয়। অ্যালঝাইমার্স রোগীই শুধু নয়, সকলের জন্যই স্বল্প সময়ের জন্য উপোস করাকে স্বাস্থ্যকর বলে মানেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। রোগ প্রতিরোধ করা আর স্বাস্থ্যকর উপায় ওজন কমানোর মাধ্যম হিসাব বলে মানা হয়।

উপোস কে কেন স্বাস্থ্যকর বলে মানা হয়?

উপোস করলে আমাদের শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায়। খাবার থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তাতে সাধারণত অনেক কোষ স্টিমিউলেট হয় না। উপোস করলে এসব কোষ সক্রিয় হবে।

উপোস করলে আমাদের শরীর নিজে নিজেই গ্লুকোজ বা শর্করা তৈরি করে। প্রাকৃতিক এই উপায়কে বলা হয় গ্লুকোনিওজেনেসিস। উপোস করলে লিভার বা যকৃত আর পেশি সঞ্চিত ল্যাকটেট, অ্যামিনো অ্যাসিড,  ফ্যাটকে গ্লুকোজ শক্তিতে পরিণত করে।

উপোসের সময় আমাদের শরীর শক্তি সঞ্চয় করতে শুরু করে। উপোসের সময় আমাদের ‘বেসাল মেটাবলিক রেট’ (বিশ্রামের সময় আমাদের শরীরে যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়) বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এটা হৃৎস্পন্দন আর রক্তচাপ কমায়। উপোসের সময় ফ্যাট বা চর্বি দ্রুত গলতে শুরু করে। ওজন কমানোর আর রক্তে শর্করার মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখার এই পদ্ধতিকে বলা হয় কেটোসিস।

শারীরিক কসরত করার সময় যেভাবে আমাদের পেশি আর কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে ওঠে। স্বল্প সময়ের উপোসের সময়ও একই ঘটনা ঘটে। ওভারঅল ফিটনেসের উন্নতি ঘটায় উপোস। স্থুলতা আর ক্রনিক রোগের হাত থেকেও রক্ষা করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে কেমোথেরাপির পর ক্যানসার রোগীরা উপোস করলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। পুরোনো টক্সিক ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস হয়। উপোস হার্টের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।

নির্জলা নয় উপোসে খান জল-

উপোসের সময় খাইখাই ভাব দূর করতে নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে জল খান। খাবার খান কি না খান, জীবন বাঁচাতে স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রতিদিন জল খাওয়া জরুরি। প্রতিদিন প্রায় ২ লিটার জল খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তার আর পুষ্টিবিদরা।

কাদের উপোস রাখা ঝুঁকির-

ডায়াবেটিস রোগী, যাঁদের খাবারের সঙ্গে ওষুধ খেতে হয়, শিশু ও বয়সসন্ধি, অন্তঃসত্ত্বা, সদ্যোজাত সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান যে প্রসূতি মায়েদের জন্য উপোস রাখা ঝুঁকির।

কী খেয়ে উপোস ভাঙবেন-

উপোস ভাঙতে প্রথমেই জল বা শরবত খান। অনেক বেশি পরিমাণে খাবার নয় অল্প অল্প করে খাবার খান। এতে ডাইজেস্টিভ সিস্টেমে চাপ পড়বে না। খাবার কমপক্ষে ৩০ গুণ বেশি করে চিবিয়ে খান। হজম ভালো ভাবে হবে। নতুন রকমের খাবার খেয়ে এক্সপেরিমেন্ট করবেন না। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সহজপাচ্য, হজম করা সহজ এমন খাবার খান।

Related Articles