লাইফস্টাইলস্বাস্থ্য

সুগন্ধী মোমবাতিতে হবে ডেঙ্গুর মোকাবিলা

Scented Candles will protect you for Dengue

The Truth of Bengal, Mou Basu: “পুষ্পা নাম সুনকর ফ্লাওয়ার সমঝি ক্যয়া? ফ্লাওয়ার নহি ফায়ার হ্যায় ম্যায়”—ভূভারত কাঁপানো পুষ্পা সিনেমার এই সংলাপের মতোই দীপাবলির বাজার আলোকিত করার পাশাপাশি অসীম চট্টোপাধ্যায়ের ‘পুষ্পা’ ব্র্যান্ডের পরিবেশবান্ধব সুগন্ধী মোমবাতিতে জব্দ পোকামাকড়, ডেঙ্গুর মশকবাহিনীও। আলোর উৎসব দীপাবলিতে শব্দবাজি নিষিদ্ধ হলেও অনেকেই সেই নিয়মের তোয়াক্কা করে না।বীরবিক্রমে শব্দবাজি ফাটিয়ে নিজের ক্ষমতা জাহির করে। করোনার পর থেকে অনেকেরই শরীর দুর্বল হয়েছে। শুধু শব্দবাজিই নয় আতসবাজি থেকেও যে বায়ুদূষণ হয় তার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের শরীর। প্রত্যেক বছর দীপাবলি বা বছরের অন্য সময় আমরা প্রচুর পরিমাণে মোমবাতি জ্বালাই। তাতে একদিকে হয়ত মোমবাতি প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হয়। কিন্তু একইসঙ্গে বাতাসও দূষিত হয় মোমবাতির আলোতে। কারণ, বায়ুদূষণের মূল কারণ হল কার্বন ডাই-অক্সাইড। মোমবাতিতে ব্যবহৃত সুতো পুড়েই কার্বন ডাই-অক্সাইড নিসৃত হয় যা বায়ুদূষণের মূল কারণ। এই পরিস্থিতিতে দীপাবলি যাতে সত্যিকারের আলোর উৎসব হয়ে ওঠে সে কথা ভেবেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন আধিকারিক অসীম চট্টোপাধ্যায়। তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পোকামাকড় বিশেষ করে ডেঙ্গুর মশা-মাছির উপদ্রব ঠেকাতে বিশেষ রকমের ভেষজ সুগন্ধী ও পরিবেশবান্ধব মোমবাতি তৈরি করেছেন অসীমবাবু ।

নিমপাতা, নিসিন্দাপাতা মেশানো বিশেষ ধরণের মোমবাতি তৈরি করেছেন তিনি। মোমবাতিতে ব্যবহার করা হয়েছে ভেষজ রঙ। তবে এসেন্সটা হার্বাল নয় বলে স্পষ্টই জানিয়েছেন অসীম চট্টোপাধ্যায়। কারণ, ফুলের নির্যাসের প্রচুর দাম তাই তা দিয়ে তৈরি মোমবাতি সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখা সত্যিই অসম্ভব। প্রচুর দাম হলে সাধারণ মানুষ তা কিনতে পারবেন না বলে মনে করেন তিনি। অসীম চট্টোপাধ্যায়ের ব্র্যান্ডের নাম ‘PUSPA’। নিজের তৈরি ভেষজ সুগন্ধী ও পরিবেশবান্ধব মোমবাতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সিন্থেটিক রঙ যে ব্যবহার করা হয় রঙিন মোমবাতিতে তার জায়গায় ভেষজ রঙ ব্যবহার করেছি। কারণ, সিন্থেটিক রঙের তৈরি রঙিন মোমবাতি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। আকর্ষণ করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই রঙিন মোমবাতির।  বিভিন্ন আকৃতির ভেষজ রঙ দিয়ে তৈরি করেছি মোমবাতি। মশা, মাছি, সংক্রামক ব্যাধি থেকে রক্ষা করতে লেমনগ্রাস, নিমপাতা, গাঁদাফুল,  ইউক্যালিপটাস, নিশিন্দা পাতার রস, সিট্রোনেল্লা অয়েলের নির্যাস দিয়ে তৈরী জীবাণুনাশক মোমবাতি বানিয়েছি। আরেকটা এমন মোমবাতি করেছি যাতে মোমবাতি জ্বলবে, মোম পুড়বে কিন্তু সুতো পুড়বে না। একেবারে পুরোটাই থেকে যাবে। কার্বন নিঃসারণ কমবে। কারণ সুতো বেশি পুড়লে কার্বন নিঃসারণ বেশি হয়।রঙ্গনগাছের ছাল, সিঁদুরফলের বীজ দিয়ে মোমবাতির ভেষজ রঙ করি।ছাল  দিয়ে তৈরী মোমবাতির রঙ হবে গোলাপী।বীজ দিয়ে কমলারঙের মোমবাতি তৈরী করেছি।

২০০৭-০৮ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে প্রথম ভেষজ আবীর তৈরি হয়। কৃষকদের উৎপাদিত ফুল,বেলপাতা, পানপাতা যাতে ফেলে না দিতে হয়, নষ্ট না করে তা কীভাবে বাজারজাত করা হয় তা নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার উপাচার্য অধ্যাপক অশোকনাথ বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন কৃষকনেতা পীতবসন দাস। উপাচার্য তখন নিজেই উদ্যোগী হয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সিদ্ধার্থ দত্তর সঙ্গে কথা বলেন। অধ্যাপক দত্তই ফুল, পাতার মতো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ভেষজ আবীর বানাতে উদ্যোগী হন। তারপরই  যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ প্রথমে ভেষজ আবীর পরে পান থেকে সফট ড্রিঙ্ক, হার্বাল রঙের সুগন্ধী মোমবাতি, ফল থেকে স্বাস্থ্যসম্মত আইসক্রিম বানাতে শুরু করে। এখন নিজস্ব কারখানায় প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে এসব দ্রব্য তৈরি করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন আধিকারিক অসীম চট্টোপাধ্যায়। বিভিন্ন বড়ো বড়ো কর্পোরেট সংস্থা পেটেন্টের জন্য অসীম চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এলেও তিনি কারোকে পেটেন্ট দেননি । গরিব উদ্যোগী মানুষ প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বনির্ভর হয়ে উঠুক এমনই চান তিনি। অসীম চট্টোপাধ্যায়ের পণ্যের গুডউইল এখন লোকমুখেই ছড়িয়ে পড়েছে।

Free Access

Related Articles