লাইফস্টাইল

স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে ডায়েটে রাখুন পুষ্টিকর খাবার

Lifestyel

The Truth of Bengal,Mou Basu: স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে হলে নিয়মিত ডায়েটে রাখুন কিছু পুষ্টিকর খাবার। চুল তৈরি হয় কেরাটিন নামের একটি প্রোটিন দিয়ে তাই চুলের যত্ন নিতে প্রতিদিন খেতে হবে বাদাম, ডাল, দুধ, ডিম, ছোলা জাতীয় হাই প্রোটিনযুক্ত খাবার। এছাড়াও প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে খান সবুজ শাকসবজি। কারণ সবুজ শাকসবজিতে আছে লোহা, ফোলেট, ভিটামিন এ ও সি যা চুলের যত্নের জন্য খুব দরকারি। লোহার অভাবে চুলে ডগায় অক্সিজেন ভালো ভাবে পৌঁছোয় না তাই চুলের ডগা কমজোরি হয়ে পড়ে, অকালে চুল পড়তে শুরু করে। ভিটামিন সি লোহা শুষে নিতে সাহায্য করে। তাই প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি পেতে রোজ খান পাতিলেবু, আমলকি, কমলালেবু, গন্ধরাজলেবু। ভিটামিন সি কোলাজেন প্রোটিনের উৎপাদনে সাহায্য করে যা চুলের ডগাকে মজবুত করে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে দরকার হয় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। আমন্ড বাদাম, কাঠবাদাম, তিসিরবীজ থেকে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়।

আসুন দেখে নিই কোন কোন পুষ্টিকর খাবার খাবেন চুলের স্বাস্থ্য ফেরাতে–
১) গাজর: বলা হয় চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে গাজর সবচেয়ে উপকারী। শুধু চোখই নয় ভিটামিন এ সমৃদ্ধ গাজর চুলের জন্য খুবই ভালো। চুল আর মাথার স্কাল্পের স্বাস্থ্য ফেরাতে তাই নিয়মিত খান গাজর।

২) পালংশাক: চুল ভালো রাখতে ওয়ান্ডার ফুড হল পালংশাক। পালংশাকে পাওয়া যায় ভিটামিন বি, সি, ই, পটাশিয়াম, লোহা, ক্যালসিয়াম আর ম্যাগনেসিয়াম। তাই ভিটামিন আর খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ পালংশাকে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে। পালংশাকে যে লোহা পাওয়া যায় তা রক্তের লোহিত কণিকার সাহায্যে অক্সিজেন পৌঁছে দেয় মাথার গোড়ায় যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক।

৩) তিসির বীজ: আমাদের শরীরে আপনা আপনি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি হতে পারে না। অত্যন্ত দরকারি এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পেতে আমাদের ভরসা করতে হয় বিভিন্ন ফল, শাক সবজি ও খাবারের ওপর। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে হলে চুলের আর্দ্রতা ঠিক থাকা চাই। এর জন্য খাবারে রাখতে হবে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ প্রয়োজনীয় খাবার। তৈলাক্ত মাছের বিকল্প হল তিসিবীজ যা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে না কোলেস্টেরল মাত্রাও কমায়। ধমনীর ফুলে যাওয়া ও ব্লক হওয়া আটকায়।

৪) কিনোয়া: চুল ভালো রাখতে হলে আমাদের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া প্রয়োজন। ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন না থাকলে অথবা লো কোয়ালিটি প্রোটিন খেলে চুল কমজোরি হয়ে পড়ে, গোড়া ফেটে যায়, অকালে পেকে গিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গিয়ে চুল পড়তে শুরু করে। তাই চুল ভালো রাখতে খান কিনোয়া। ভেগান (নিরামিষাশী কিন্তু যারা দুধ বা দুগ্ধজাত কিছু খায় না) ডায়েটের অন্যতম এই কিনোয়া দানা। নিয়মিত কিনোয়া খেলে চুল মজবুত ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়।

৫) বিনস: মাথার স্কাল্পের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অর্থাৎ খুশকিমুক্ত রাখতে আর চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে আমাদের প্রয়োজন নানা রকম বায়োটিন, প্রোটিন ও ভিটামিন বি’র। মজবুত স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে আর চুল পড়া আটকাতে নিয়মিত নানান রকম মিক্সড বিন মিশিয়ে স্যালাড খান। কারণ বিনসে পাওয়া যায় প্রোটিন, ভিটামিন ও বায়োটিন।

৬) রাঙা আলু: চুলের জন্য খুবই দরকারি হল বিটা ক্যারোটিন। রাঙা আলু থেকে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের শরীর নিজে নিজেই ভিটামিন-এ তে পরিণত করে নিতে পারে। ভিটামিন এ ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া আটকায় আর খুশকির সমস্যা দূর করতে পারে। ভিটামিন এ প্রাকৃতিক হেয়ার অয়েল যা মাথার তালু থেকে বের হয় সেই সেবামের নিঃসারণে সাহায্য করে। সেবাম অয়েলই চুলের রুক্ষ ও শুষ্ক হওয়া আটকায়। মাথার তালুকেও প্রাকৃতিক ভাবে আর্দ্র রাখে। শুধু রাঙা আলুই নয় গাজর, পালংশাক, লেটুসপাতা, টমেটো আর ব্রকোলিতেও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন যা চুলের প্রতিটি কোষকে স্বাস্থ্যকর রাখে। আমাদের সারাদিনে যত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন দরকার হয় তা মাত্র ১০০ গ্রাম রাঙা আলু থেকেই পাওয়া যায়।

৭) ডাল: চুলের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য দরকার প্রোটিন, বায়োটিন আর দস্তা যা আমরা ডাল থেকে পাই। তাই মজবুত চুল পেতে ডায়েটে রাখুন ডাল। চুলের বৃদ্ধিতেও সহায়ক ডাল।

৮) দুধ আর ডিম: চুলের বেশিরভাগ অংশই প্রোটিন দিয়ে তৈরি। তাই চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে প্রোটিন নির্ভর ডায়েট খেতে হবে। দুধ আর ডিম থেকে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। চুলের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি দুধ আর ডিম। শরীর যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন না পায় তখনই চুল অকালে ঝরে পড়তে শুরু করে। প্রোটিন ছাড়াও ডিম আর দুধে পাওয়া যায় লোহা যাও চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। তাই যারা দুধ আর ডিম খায় না তাদের প্রোটিন পেতে অবশ্যই খেতে হবে বিভিন্ন রকমের ডাল, কাঠবাদাম, ছোলা আর কাবুলিচানা।

৯) চিয়াদানা: চিয়াদানা বাঙালিদের কাছে একটু অপরিচিত নাম তবে আজকাল বড়ো বড়ো শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, মুদির দোকানে মেলে চিয়াদানা। চিয়াদানা থেকে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন, ফসফরাস, ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ আর প্রোটিন যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন সকালে প্রাতরাশে এক গ্লাস গরম দুধে এক চামচ চিয়াদানা মিশিয়ে খান।

১০) গ্রিন টি: গ্রিন টি থেকে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা সেবাম অয়েল নিঃসারণে সাহায্য করে যা মাথার তালুকে আর্দ্র রাখে।

১১) পাতিলেবু: পাতিলেবু থেকে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা কোলাজেন প্রোটিন তৈরি করতে সাহায্য করে। চুলের মজবুত গঠনের পাশাপাশি আমাদের শরীর যে লোহা শুষে নেয় সেক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কোলাজেন প্রোটিন।

১২) পাস্তা, আটার রুটি, পাঁউরুটির মতো হোল গ্রেনে কার্বোহাইড্রেট ছাড়াও থাকে বায়োটিন, ভিটামিন বি, দস্তা চুলের ডগাফাটা রোধ করে চুল মজবুত করে। সয়াবিনের গুঁড়োতে পাওয়া যায় বায়োটিন যা চুল শক্তপোক্ত করে। চুলের সবচেয়ে বড়ো বন্ধু হল নারকেল তেল যা শুধু আমাদের চুলকে প্রবল গরম থেকেই রক্ষা করে না নারকেল তেলে পাওয়া যায় ফ্যাটি অ্যাসিড। অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল আর অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল গুণ থাকায় নারকেল তেল চুলের জন্য দারুণ পুষ্টিকর।

Free Access

Related Articles