
The Truth of Bengal, Mou Basu: স্বর্গ যদি কোথাও থাকে তবে তা এখানেই। ভূস্বর্গ কাশ্মীর সম্পর্কে এক কথায় একথাই বলা হয়৷ শ্বেতশুভ্র বরফে ঢাকা পাহাড়ের কোলে সবুজ ঘাসের গালিচা বিছানো কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে। রয়েছে টলটলে জলের ডাল হ্রদ, নাগিন হ্রদের হাতছানি। কাশ্মীর বেড়াতে গেলে পর্যটকদের বাকেট লিস্টে থাকে নানান পর্যটন স্থান। তবে বেড়ানোর জায়গা হিসাবেই নয় কাশ্মীরের খ্যাতি রয়েছে অভিনব খাদ্যের জন্যও। অতীত থেকে বর্তমান বাঙালি বিয়ের ভোজে জায়গা করে নেয় কাশ্মিরী আলুরদম। তেমনই জানেন কি কাশ্মীরে খাওয়া হয় নুন চা। শুধু পানীয় হিসাবে তৃপ্তি দেওয়াই নয় পুষ্টিতে ভরপুর এই নুন চা। হ্যা্ ঠিকই শুনেছেন নুনই দেওয়া হয় এই চাতে। খেতে নোনতা স্বাদের এই চা গোলাপি রঙের হয়।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, সপ্তম শতাব্দী থেকে প্রচলন হয় গোলাপি নুন চায়ের। এই চা কাশ্মিরী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সপ্তম শতকে তিব্বতে চায়ের মতো পানীয়তে ইয়াকের দুধ থেকে তৈরি মাখন আর নুন দেওয়ার প্রচলন ছিল। পার্বত্য অঞ্চলে প্রচণ্ড ঠান্ডায় প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে যুঝতে নুন চা খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা কাশ্মীরেও ছড়িয়ে পড়ে।
কাশ্মিরী সংস্কৃতিতে নুন চায়ের মাহাত্ম্য অসীম। যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, বিয়ে-শাদিতে নুন চা খাওয়ার প্রচলন আছে। অতিথিকে নুন চা খাওয়ানো হয়। কাশ্মিরীরা তো দিনে ২-৩ বার এই নুন চা খান। বিশেষ করে ঠান্ডার সময় এই চা শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে।
কাশ্মিরী নুন চা তৈরির পদ্ধতিও অভিনব-
প্রথমে জল গরম করতে হবে ভালো করে। জল ফুটতে শুরু করলে তার মধ্যে চা পাতা দিতে হবে। গ্রিন টি -ও চাইলে ব্যবহার করতে পারেন। ভালো করে চা পাতা ফোটাতে হবে। এরমধ্যে এক চিমটে বেকিং সোডা দিন ও ভালো করে নাড়িয়ে দিন।
আরো কিছুটা জল দিন। ভালো করে ফুটতে দিন। এলাচ গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে ফোটান। লালচে রঙ যতক্ষণ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ফোটাবেন। এরপর আঁচ কমিয়ে দুধ, মাখন দিন। ভালো করে নাড়ান। গোলাপি রঙের হয়ে যাবে। নুন দিন স্বাদমতো। ভালো করে মিশিয়ে দিন। কাপে ছেঁকে নিয়ে চা ঢালুন।
এনার্জিতে ভরপুর এই নুন চা। প্রাকৃতিক ভাবে শরীর গরম রাখে। বিশেষত, পাহাড়ি অঞ্চলে যেখানে শীতকালে প্রবল ঠান্ডা পড়ে সেখানে এই চা খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। চাতে দেওয়া ঘি বা মাখন স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে ভরপুর। নুন আর এলাচ গুঁড়ো হজমে সহায়তা করে। চা পাতায় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে যা ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেলস আর অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের হাত থেকে বাঁচায়।