আজকের দিনে
Trending

দেশের প্রথম সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সাইন্স গড়ার নেপথ্যে ছিলেন কৃতী বাঙালি মহেন্দ্রলাল সরকার

Kriti Bengali Mahendralal Sarkar was behind the creation of Indian Cultivation of Science.

The Truth Of Bengal, Mou Basu : দেশের বিজ্ঞান গবেষণা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য খ্যাতি রয়েছে ইন্ডিয়ান কালটিভেশন অফ সায়েন্সের। জানেন কি? দেশের বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া দেশের প্রথম সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেছিলেন এক বঙ্গসন্তান। তিনি মহেন্দ্রলাল সরকার। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেধাবী ডাক্তার মহেন্দ্রলাল দূরদর্শী ছিলেন। তিনি বুঝতে পারেন ব্রিটিশ শাসনে থাকলেও ভারতে বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র বা অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তোলা খুবই দরকার। দেশের বিজ্ঞান গবেষণা চালিয়ে নিয়ে যেতে এই অ্যাসোসিয়েশনের চালিকাশক্তি ভারতীয় বিজ্ঞানীদের হাতে থাকা দরকার। একথা ভালোই বুঝেছিলেন মহেন্দ্রলাল সরকার।

ব্রিটিশদের হাত ধরেই ভারতে অত্যাধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির প্রসার ঘটে। আর এদেশে বিজ্ঞান গবেষণার সঠিক প্রসার ঘটে বঙ্গসন্তান মহেন্দ্রলাল সরকারের হাত ধরে। হাওড়ার পাইকপাড়া গ্রামে জন্ম মহেন্দ্রলাল সরকারের। খুব ছোটোবেলাতেই বাবা-মাকে হারান মহেন্দ্রলাল। মাত্র ৫ বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবাকে হারান। এরপর ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে ঠাঁই হয় মহেন্দ্রলালের বিধবা মায়ের। মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন। উত্তর কলকাতার নেবুতলায় মামার বাড়িতে ২ মামা ঈশ্বরচন্দ্র ঘোষ ও মহেশচন্দ্র ঘোষের তত্ত্বাবধানে মানুষ হন তিনি। ছোটবেলা থেকেই মহেন্দ্রলাল সরকার মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৮৪০ সালে হেয়ার স্কুলে ফ্রি স্টুডেন্ট বা বিনেপয়সাতে পড়াশোনা করা ছাত্র হিসাবে ভর্তি হন। ১৮৪৯ সালে তিনি জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় পাশ করে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। কিন্তু মহেন্দ্রলাল ডাক্তারি পড়বেন বলে জেদ ধরেন। তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। মেধাবী ছাত্র হিসাবে তাঁর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপকদের মধ্যে এতটাই খ্যাতি ছিল যে ডাক্তারি পড়ার দ্বিতীয় বছরেই তাঁকে লেকচার দেওয়ার জন্য অধ্যাপকরা আমন্ত্রণ জানান। ১৮৬০ সালে তিনি চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাশ করেন।

মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছিলেন মহেন্দ্রলাল সরকার। ১৮৬৩ সালে তিনি এমডি পাশ করেন। তিনিই ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় এমডি পাশ করা ছাত্র। অ্যালাপ্যাথি নিয়ে পড়াশোনা করলেও একটা সময় উইলিয়াম মর্গানের দ্য ফিলোসোফি অফ হোমিওপ্যাথি পড়ে হোমিওপ্যাথিতে আকৃষ্ট হন মহেন্দ্রলাল সরকার। এর পাশাপাশি কলকাতার তৎকালীন বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি ডাক্তার রাজেন্দ্রলাল দত্তেরও সংস্পর্শে আসেন। এর ফলে ব্রিটিশ ডাক্তারদের রোষানলে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত হন মহেন্দ্রলাল সরকার। পরে অবশ্য ফের ডাক্তারি করার সুযোগ পান। এক সময় ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের চিকিৎসা করেন মহেন্দ্রলাল সরকার। ১৮৬৭ সালে ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন গড়ার জন্য তিনি প্রচার শুরু করেন। ১৮৭৬ সালে তাঁর তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স। তিনিই ছিলেন সংগঠনের প্রথম সম্পাদক। ১৯ শতকে বাংলায় মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন মহেন্দ্রলাল সরকার।

 

FREE ACCESS