আন্তর্জাতিক

সর্বাত্মক অবরোধের জেরে শনিবার স্তব্ধ পার্বত্য চট্টগ্রাম!

Chittagong Hill Tracts stalled on Saturday due to total blockade!

Truth Of Bengal : শনিবার স্তব্ধ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা। আদিবাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপল্‌স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট মুসলিম কট্টরপন্থীদের হামলা এবং সেনাবাহিনীর গুলির প্রতিবাদ করতে সর্বাত্মক অবরোধ ডাকা হয়, তার জেরেই পার্বত্য অংশ স্তব্ধ হয়ে যায়। ‘বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’ নামের সংগঠনটি চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, বান্দারবন ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ‘সিএইচটি ব্লকেড’ নামে ৭২ ঘণ্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছে।

গত ৭২ ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন আদিবাসি গোষ্ঠীর উপর ধারাবাহিক হামলা করা হয়েছে। অন্তত ১০ জন অমুসলিম খুন হয়েছেন। ত্রিপুরা, কুকি, ব্রু, চাকমা, মারমা এবং অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের হাজার হাজার বাড়িঘর, দোকান, ধর্মস্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পোড়ানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী দমনের অছিলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, সেনা এবং র‌্যাব বাহিনী অমুসলিমদের উপর নির্বিচারে হামলা করে চলেছে। খাগড়াছড়িতে বৃহস্পতিবার রাতে তিন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাকমাকে খুনের যে ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে বাংলাদেশ সেনা বলেন, ‘‘ইউপিডিএফ অশান্তিতে প্ররোচনা দিচ্ছে। আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে সেনা।’’

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার পাহাড়ে অবস্থানকারী চাকমা-সহ বহু অমুসলিম জনজাতি সংগঠন খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি-সহ একাধিক এলাকায় সমাবেশ করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। পাহাড়ি অমুসলিমেরা ‘মার্চ ফর আইডেন্টিটি’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তাঁদের ‘আদিবাসী’ তকমা ছিনিয়ে নিতে সক্রিয় হয়েছে। ঢাকার সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চট্টগ্রামের পার্বত্য অংশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশের এক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে— ‘‘৭২ ঘণ্টার এই অবরোধের শুরুতেই তিন জেলায় দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলছে না। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।’’

জানা গিয়েছে, খাগড়াছড়ি নোয়াপাড়া এলাকায় গত বুধবার মহম্মদ মামুন নামক এক ব্যক্তি মোটরসাইকেল চুরি করে পালাতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। দুর্ঘটনার জেরে তিনি আহত হয়ে পড়েন, সে অবস্থায় মোটরসাইকেল চুরি করার জেরে তাঁকে পাকড়াও করে মারধর চালায় কিছু মানুষ। শেষে হাসপাতালে প্রাণ হারান ওই ব্যক্তি। মানুনকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় দিঘিনালা সরকারি কলেজের বিএনপি এবং জামাতে ইসলামির সমর্থক ছাত্রেরা। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি শহরের বোয়ালপাড়া বাজার, লারমা স্কোয়ারের মতো এলাকায় কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে গিয়ে অমুসলিম আদিবাসীদের বাড়িঘর, ধর্মস্থান, দোকানে ভাঙচুর করা হয়, সাথে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি কয়েকজন মানুষকে  পিটিয়ে হত্যাও করা হয়।

রাঙামাটির জনজাতি ছাত্রেরা এর প্রতিবাদে মিছিল বার করলে নিরাপত্তা বাহিনী এবং জামাত আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হামলা। সেখানেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়। এমনকি, চট্টগ্রামের সমতল এলাকাতেও বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিস্টানদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ উঠেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে জনবিন্যাসের চরিত্র বদলে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার পরিকল্পিত ভাবে হিংসা ছড়াতে চাইছে। শনিবার চট্টগ্রামের পার্বত্য অংশে হাজির হয় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।

Related Articles