আন্তর্জাতিক

বালোচিস্তানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ: ২০০-র বেশি কফিন পাঠানো হচ্ছে বোলানে

Bloody clashes in Balochistan: Over 200 coffins being sent to Bolan

Truth Of Bengal: বালোচিস্তানে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে! বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ ও সামরিক অভিযানের ফলে বিপুল প্রাণহানি ঘটেছে। সরকারি সূত্র থেকে এখনও মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়নি। তবে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোয়েটা রেলস্টেশন থেকে বোলানে ২০০-রও বেশি কফিন পাঠানো হচ্ছে। এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৯০টি খালি কফিন প্ল্যাটফর্মে আনা হয়েছে, যা জাফর এক্সপ্রেসে করে পাঠানো হবে। আরও ১৩০টি কফিন ট্রেনে তোলার অপেক্ষায় রয়েছে।

জাফর এক্সপ্রেসে সশস্ত্র হামলা

১১ মার্চ, বালোচিস্তানের বোলান জেলায় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলা চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বালোচ লিবারেশন আর্মি (BLA)। ট্রেনটি কোয়েটা থেকে পেশোয়ার যাচ্ছিল, তখন একটি টানেলের ভেতরে হামলাকারীরা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়।

BLA দাবি করেছে, তারা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের আটক করেছে এবং সাধারণ যাত্রীদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। পরে তারা নারী, শিশু ও বালোচ যাত্রীদের মুক্তি দিলেও সামরিক সদস্যদের আটকে রাখার দাবি করেছে। তবে হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনো নিশ্চিত নয়।

আখতার মেঙ্গলের তীব্র প্রতিক্রিয়া

বালোচিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আখতার মেঙ্গল এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এক টুইটে তিনি বলেন: “সরকার বালোচিস্তানের ওপর সমস্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। আমরা বহুবার সতর্ক করেছি, কিন্তু তারা আমাদের উপহাস করেছে। আজকের এই রক্তপাত তারই ফল।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, বালোচ জনগণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে এবং প্রতিটি সরকার এই দমননীতিতে একমত থেকেছে।

BLA-র উত্থান ও বিদ্রোহের ইতিহাস

বালোচিস্তানের স্বাধীনতার দাবিতে BLA গঠিত হয়েছে। পাকিস্তান ১৯৪৮ সালে বালোচিস্তানকে সংযুক্ত করার পর থেকেই সেখানে বিদ্রোহ চলছে। ১৯৭৩-৭৭ এবং ২০০০ সালের পর বিদ্রোহ তীব্রতর হয়। বর্তমানে BLA পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও চীনা বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে। বিশেষ করে, CPEC প্রকল্পকে তারা শোষণের প্রতীক হিসেবে দেখে।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

সরকার সামরিক অভিযান আরও জোরদার করেছে। নিরাপত্তা বাহিনী বালোচ বিদ্রোহীদের দমনে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের মাধ্যমে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। সরকার কিছু বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দিলেও তা সফল হয়নি। বরং দমননীতির কারণে বালোচ তরুণরা আরও বেশি বিদ্রোহে যোগ দিচ্ছে।

ভবিষ্যৎ পরিণতি

এই হামলার ফলে পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। সেনাবাহিনী কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাবে, যা স্থানীয় ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, CPEC প্রকল্পের ভবিষ্যৎও হুমকির মুখে পড়তে পারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পাকিস্তানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ হারাতে পারেন। সামরিক অভিযানের তীব্রতা বাড়লে আরও প্রাণহানি হতে পারে, যা পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।

বালোচিস্তানে চলমান সংকট পাকিস্তানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি কীভাবে সামলানো হবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

Related Articles