দেশ

বিশ্বরেকর্ড গড়ল টিউলিপ গার্ডেন

Tulip garden create World Record

The Truth of Bengal, Mou Basu:  আমির খুসরুর লেখা ফারসি কাব্যে একটা পংক্তি আছে। তা যথাক্রমে “আগর ফিরদৌস বার রু-ই জমিন অস্ত/হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত…”। বাংলা তর্জমা করলে এর মানে দাঁড়ায়, পৃথিবীতে যদি স্বর্গ কোথাও থাকে তবে তা এখানেই, এখানেই, এখানেই…..। শ্রীনগরের ফুলে ফুলে ঢাকা এই সুদৃশ্য টিউলিপ গার্ডেনে আসলে একথাই মনে হবে। সত্যি বলতে কী আপনি যদি এই বাগিচায় আসেন তাহলে আপনার মনে হবে বুঝি বা স্বর্গের কোনো উপত্যকায় এসে পড়েছেন। শ্রীনগরের এই টিউলিপ গার্ডেন সম্প্রতি বিশ্বরেকর্ডও গড়েছে। এক মরসুমে ১৫ লাখ টিউলিপ ফুল ফুটেছে এই টিউলিপ গার্ডেনে। ব্রিটেনের “ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ডস”-এ নাম উঠেছে শ্রীনগরের টিউলিপ গার্ডেনের। এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো টিউলিপ বাগানের খেতাব জিতেছে শ্রীনগরের টিউলিপ গার্ডেন। সোমবারই সুখবরটি প্রকাশ্যে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

মার্চে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় শ্রীনগরের টিউলিপ গার্ডেন। বাগান খোলার এক সপ্তাহের মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭১ জন পর্যটক বাগান দর্শন করেন বলে জানিয়েছিলেন সায়িক রসুল। এরমধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন ৪২,৯৬৭ জন, ভিনরাজ্যের বাসিন্দা ৭২,৬৭৩ জন আর বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ৪৩১। শ্রীনগরের টিউলিপ গার্ডেনের পোশাকি নাম ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন। গত ১৯ আগস্ট টিউলিপ গার্ডেনেই এক অনুষ্ঠানের আসর বসে। সেখানে ফ্লোরিকালচার কমিশনার সেক্রেটারি শেখ ফয়াজ আহমেদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেন ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ডস (লন্ডন)-এর সিইও সন্তোষ শুক্লা। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তরফে অন্য আরো একটি সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য টিউলিপ গার্ডেন কর্তৃপক্ষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর লন্ডনে হবে সেই অনুষ্ঠান।

বরফে ঢাকা হিমালয়ের জাবারওয়ান পর্বতশ্রেনির পাদদেশে শ্রীনগরের ডাল হ্রদের কোলে অবস্থিত এই টিউলিপ গার্ডেনে ৬০ রকমেরও বেশি ভ্যারাইটির টিউলিপ ফুল দেখতে পাওয়া যায়। টিউলিপ ছাড়াও গোলাপ, ড্যাফোডিল, লিলি, গোলাপ, মুসকারি, সাইক্লামেনস প্রভৃতি ফুলও ফোটে এই বাগানে। শ্রীনগরে পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে টিউলিপ ম্যানিয়া ফেস্টিভ্যাল চালু করেছে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। এই বাগানে অনেক হাইব্রিড ভ্যারাইটির ফুলের পাশাপাশি অনেক বিরল প্রজাতির ফুলও ফোটে। ফুলের পাশাপাশি এই বাগিচায় দেখা মেলে অনেক রকমের পাখিরও। ফুলের মধু, পোকামাকড় খেতে হাজির হয় কোকিল, প্যারাকিট, মাছরাঙার পাশাপাশি ব্ল্যাক-নেকড ক্রেন, স্পটেড আউলের মতো অনেক বিরল প্রজাতির পাখিও। এছাড়াও এই বাগানেই আছে ঐতিহাসিক সৌধ হরিপর্বত ফোর্ট। ১৫৯০ সালে এই সৌধ নির্মাণ করেন মোগল সম্রাট আকবর। এছাড়াও আরো ছোটো বড়ো নানান সৌধ আছে যার ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অপরিসীম। আগে এই বাগিচার নাম ছিল সিরাজ বাগ। ৩০ হেক্টর জমিতে ২০০৭ সালে গড়ে ওঠে এই বাগিচা। পাহাড়ের কোলে ঢালু জমিতে ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছে এই বাগিচা। প্রতি বছর বসন্তের শুরুতে হয় টিউলিপ ফেস্টিভ্যাল। তাই কাশ্মীর গেলে অবশ্যই আপনার গন্তব্য হোক টিউলিপ গার্ডেন। সেখানে প্রিয়জনের হাত ধরে বেড়াতে বেড়াতে গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠতেই পারেন, “চম্পা চামেলি, গোলাপেরই বাগে” কিংবা “দেখা এক খোয়াব হ্যায় তো সিলসিলে হুয়ে….”

Related Articles