দেশ

বিহারে মদ নিষিদ্ধ নিয়ে কড়া মন্তব্য হাইকোর্টের

High Court strongly condemns liquor ban in Bihar

Truth of Bangla: নীতীশ কুমারের সরকারের আমলে বিহারে মদ নিষিদ্ধ। কিন্তু এর ফলে বেড়েছে বিষ মদের কারবার। অভিযোগ উঠেছে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রশাসনের একাংশ। বিষ মদ পানের কারণে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসছে। রাজ্যেরই একাংশ বলছে, এর থেকে ভাল মদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া। পাশাপাশি চোরা পথে অন্য রাজ্য থেকে মদ নিয়ে এসে চড়া দামে বিক্রিও করা হচ্ছে। এক্ষেত্রেও অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধে। এবার পাটনা হাইকোর্টও রাজ্যে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলল। পাটনা হাইকোর্ট একটি মামলার শুনানি করতে গিয়ে মদ নিষিদ্ধের বিষয়ে কড়া মন্তব্য করেছে। হাইকোর্টের মতে, রাজ্যে নিষেধাজ্ঞার জেরে বাড়ছে অবৈধ মদের ব্যবসা।

আদালত বলেছে, পুলিশ, আবগারি, কর এবং পরিবহণ দফতরগুলি মদের উপর নিষেধাজ্ঞা পছন্দ করছে, কারণ তাদের বিশাল উপার্জন। শুধু তাই নয়, নিষেধাজ্ঞা গরিবদের ওপর নিপীড়ন বাড়িয়েছে এবং পুলিশ ও চোরাকারবারিদের যোগসাজশে এটাকে আয়ের উৎস হিসাবে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছে বিহারের শীর্ষ আদালত। বিহারে মদ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এই কড়া মন্তব্য করেছেন পাটনা হাইকোর্টের বিচারপতি পূর্ণেদু সিং। বিচারপতি পূর্ণেদু সিং একটি মামলার শুনানি করছিলেন এবং এই সময় তিনি এই মন্তব্য করেন। রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ নিয়ে পাটনা হাইকোর্ট থেকে এই প্রথম এমন মন্তব্য এল।

জানা গিয়েছে, পুরো বিষয়টি এক পুলিশ অফিসারের পদত্যাগের সঙ্গে সম্পর্কিত, যাঁর উপর হাইকোর্টে শুনানি চলছিল। ২০২০ সালে, বিহার পুলিশের এসআই মুকেশ কুমার পাসওয়ান পাটনার বাইপাস থানায় পদোন্নতি পেয়েছিলেন। এসআই মুকেশ পাসোয়ানের থানা এলাকা থেকে কিছুটা দূরে আবগারি দফতর অভিযান চালিয়ে বিদেশি মদ বাজেয়াপ্ত করেছিল। এই অভিযানের পরে, ২৪ নভেম্বর ২০২০ সালে জারি করা একটি সরকারি আদেশে এসআই মুকেশ পাসওয়ানকে পদচ্যুত করা হয়েছিল।

মুকেশ পাসোয়ানের পদত্যাগের ভিত্তি সরকারের নির্দেশে তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল, যে পুলিশ অফিসারের এলাকায় মদ ধরা পড়বে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসআই মুকেশ পাসোয়ান বিভাগীয় তদন্তে তাঁর পক্ষ উপস্থাপন করতে গিয়ে নিজেকে নির্দোষ ঘোষণা করেছেন। নিজের স্বপক্ষে বলতে গিয়ে এসআই বলেন, তাঁর এলাকার কোন বাড়িতে মদ আছে তা কীভাবে বুঝবেন। বিভাগ যখন মুকেশের পক্ষ নেয়নি, তখন তিনি বিচার চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন।

ই-আদালত এই মামলায় এসআই মুকেশ পাসওয়ানকে স্বস্তি দিয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা আইনে কড়া মন্তব্য করেছে। ২৯ অক্টোবর এই মামলায় রায় দেওয়ার সময়, হাইকোর্ট এসআই মুকেশ পাসোয়ানের পদত্যাগের সাজা এবং পুরো বিভাগীয় ব্যবস্থা বাতিল করে।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল, পাটনা হাইকোর্টের বিচারপতি পূর্ণেদু সিং তাঁর মন্তব্যে যা বলেছেন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা আইন পুলিশের অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশ প্রায়ই চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে। আইন এড়াতে নতুন পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। এই আইনটি প্রধানত রাজ্যের দরিদ্র জনগণের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালে যখন রাজ্য সরকার মদ নিষিদ্ধ করেছিল, তখন এর পিছনে উদ্দেশ্য ছিল সঠিক। রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টা ছিল মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং তাদের স্বাস্থ্য যাতে বিরূপ প্রভাব না পড়ে তা নিশ্চিত করা। কিন্তু কিছু কারণে এটিকে এখন ইতিহাসে একটি খারাপ সিদ্ধান্ত হিসাবে দেখা হচ্ছে।

Related Articles