দেশ

আড়াইশো বছর ধরে দরগায় একসঙ্গে দীপাবলি পালন হিন্দু ও মুসলিমদের

Diwali is celebrated by Hindus and Muslims

The Truth of Bengal,Mou Basu: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ছে রাজস্থানের ঝুনঝুনুর কামরুদ্দিন শাহ দরগা। ৫ দিন ব্যাপী আলোর উৎসব দীপাবলি হিন্দুদের উৎসব। কিন্তু গত আড়াইশো বছর ধরে এই দরগায় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে মিলেমিশে দীপাবলি পালন করেন। দীপালোকে শুধু চারিপাশের অন্ধকার দূর করাই নয়, মনের অমানিশা দূর করার অসাধারণ নজিরও সৃষ্টি করছেন ঝুনঝুনুর বাসিন্দারা।আসলে এই প্রাচীন দরগা যাঁর নামে সেই সুফি সাধক কামরুদ্দিন শাহ আর হিন্দু সাধু চঞ্চলনাথজী ছিলেন অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু। মাঝেমধ্যেই তাঁরা দেখা করতেন দরগা আর আশ্রমের মধ্যবর্তী একটি গুহায়। তাই সুফি সাধক কামরুদ্দিন শাহ আর হিন্দু সাধু চঞ্চলনাথজীর ঐতিহ্য আজও সমান ভালোবাসা ও সম্মানের সঙ্গে বহন করাকে নিজেদের পরম কর্তব্য বলে মনে করেন ঝুনঝুনুর বাসিন্দারা।

তাই আজও সাড়ম্বরে কামরুদ্দিন শাহর দরগায় হিন্দু ও মুসলিমরা একসঙ্গে মিলেমিশে দীপাবলি পালন করেন।
আসলে আলোর উৎসব দীপাবলি শুধু রাজস্থানের এই দরগাতেই নয় হিন্দুদের সঙ্গে মিলে মুসলিমরাও পালন করেন মুম্বইয়ের হাজি আলি দরগা, দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিন দরগা ও পুনের বাবা হজরত মকবুল হুসেন মাদানি দরগাতেও। এসব ধর্মীয় স্থানে দীপাবলির দিন চারিদিকে প্রদীপ আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো হয়। ইতিহাসের পাতা ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যায়, মহম্মদ বিন তুঘলকই প্রথম শাসক যিনি দিল্লিতে নিজের সভায় দীপাবলি পালন শুরু করেন। মোগল সম্রাট আকবরের আমলেও দীপাবলি সাড়ম্বরে পালন করা হত। মোগল আমলে দিকে দীপাবলিকে বলা হত ‘জশন-এ-চিরাগন’ বা দীপোৎসব। লালকেল্লার রঙ মহল আলো দিয়ে সাজানো হত এমন ভাবে যে চোখ ধাঁধিয়ে যেত। আকবর নিজেও উৎসবে শরিক হতেন। মোগল সম্রাট আকবর দীপাবলিতে সবার বাড়িতে বাড়িতে মিষ্টি পাঠানোর প্রচলন করেন। দীপাবলির দিন আকবরের প্রাসাদে আসা প্রত্যেক অতিথিকে মিষ্টি খাওয়ানো হত। আইন-ই-আকবরিতে আবুল ফজল লিখেছেন, আকবরের দরবারে রামায়ণও পাঠ করা হত দীপাবলির দিন।

শাহজাহানের আমলেও দীপাবলিতে ৫৬টি প্রদেশ থেকে আসা ছাপ্পান্ন রকমের রকমারি মিষ্টি দিয়ে সাজানো হত ‘ছাপ্পান্ন থাল’। ঔরঙ্গজেবের আমলেও দীপাবলিতে বাড়িতে বাড়িতে মিষ্টি পাঠানোর চল ছিল বলে জানা যায়। মোগল আমলে দীপাবলির দিন সূর্যক্রান্ত বা ঐতিহ্যবাহী দীপে আলো দেওয়ার প্রথা চালু ছিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে শাহজাহান আকাশ প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা চালু করেন। প্রতি বছর দীপাবলির দিন যমুনাতীরে আতসবাজির প্রদর্শনীর আয়োজন করতেন মোগল সম্রাট শাহজাহান। শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফারের আমলে লালকেল্লায় দীপাবলি উপলক্ষ্যে নাটকের আয়োজন করা হত। লালকেল্লায় লক্ষ্মী পুজো করা হত। ওইদিন লালকেল্লার দরজা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হত। William Dalrymple তাঁর ”The Last Mughal: The fall of Delhi, 1857’ বইয়ে লিখেছেন দীপাবলির দিন বাহাদুর শাহ জাফর নিজের ওজনের সমপরিমাণ সোনাদানা, শস্য গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতেন।

Related Articles