৭৬তম ভারতীয় সেনা দিবস, ইতিহাসের আলোকে বীর সেনানিদের গৌরবগাঁথা…
76th Indian Army Day, a celebration of brave soldiers in the light of history

The Truth Of Bengal: তারিখ টা যখন ১৫ই জানুয়ারি, তখন দিনটির বিশেষ গুরুত্ব বলতেই হয়।ভারতীয় সেনার ইতিহাসে এই ১৫ই জানুয়ারি আলাদা করে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।আজ দেশের ৭৬ তম সেনা দিবস। প্রতি বছর ১৫ জানুয়ারি সেনা দিবস পালিত হয়। রাজধানীর গণ্ডি ছাড়িয়ে ২০২৩ সালেই সেনা দিবসের প্যারেড হয়েছিল বেঙ্গালুরুতে। এবার সেই অনুষ্ঠান হয় লখনউতে।
সর্বাগ্রে গৌরবের সাথে আজ বলতেই হয় আজ তাঁদের দিন, ১৪০ কোটি মানুষ যাঁদের কারণে শান্তিতে ঘুমোতে পারেন,যাঁরা স্বর্গের সমান জন্মভূমিকে রক্ষা করার জন্য জীবন উত্সর্গ করতেও পিছপা হন না,তাঁদের দেশবাসী কুর্নিশ জানাল আরও একবার কৃতজ্ঞ চিত্তে। স্বার্বভৌমত্ব,স্বাধীনতা রক্ষার স্বার্থে ভারতীয় জওয়ানরা আজও যেন কাজী নজরুলের কন্ঠে বলে ওঠেন, বল বীর ,- বল উন্নত মম শির! কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী,সৌরাষ্ট্র থেকে শিলচর,এই অখণ্ড মানচিত্রকে বুকে ধরে রাখতে যাঁরা জীবন দেন,যাঁরা স্বজনের মায়া ত্যাগ করে বাড়ি ঘর ছেড়ে সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরীর মতো জেগে থাকেন তাঁদের আমরা বরাবরই নতজানু হয়ে শ্রদ্ধা করি। আর দেশের ৭৬তম সেনা দিবসে সারা দেশ যেন একবাক্যে সেই সেনানীদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করল আরও একবার।সোমবার লখনউতে হয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।কুচকওয়াজ আর কসরতে সেনারা জানান দেন,তাঁরা শত্রু সেনাদের চোখে চোখ রেখে জবাব দিতে তৈরি।
প্রতি বছরই ১৫ জানুয়ারি দেশজুড়ে সেনা দিবস হিসেবে পালিত হয়।কেন এই দিনটি শুধুই সেনাদের জন্য উত্সর্গকৃত জানেন কী ?তাহলে ইতিহাসের দিকে একটু নজর দিই। ১৮৯৫ সালের ১ এপ্রিল ভারতীয় সেনাবাহিনী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে তৈরি হয়। তবে তখন নাম ছিল ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মি। স্বাধীনতার পর তা ইন্ডিয়ান আর্মি নামে পরিচিত পায়। ১৯৪৭ সালে ১৫ অগাস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করলেও তারপরেও ভারতীয় সেনার শীর্ষে ছিলেন ব্রিটিশরাই। অবশেষে ১৯৪৯ সালে ১৫ ই জানুয়ারি ব্রিটিশ কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল ফ্রান্সিস বুচার এই দিনেই ভারতীয়দের হাতে এই সেনাবাহিনীর দায়িত্ব তুলে দেন। ভারতের প্রথম লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেএম কারিয়াপ্পা দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁকে প্রথম ভারতীয় কমান্ডার-ইন-চিফ নিযুক্ত করা হয়। এর আগে পর্যন্ত ভারতে সেনা কমান্ডার ছিলেন ব্রিটিশ অফিসারেরাই। তাঁর মুখেই প্রথম শোনা যায় ‘জয় হিন্দি’ স্লোগানটি। ওই সময় ভারতীয় সেনায় প্রায় ২ লক্ষ সৈনিক ছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে ওই মুহূর্ত ছিল খুবই গর্বের।
১৯৪৭ সালে ইন্দো-পাক যুদ্ধের সময় দক্ষিণ সীমান্তে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন কারিয়াপ্পা। তাই তাঁর সাহস,বীর্ষ,দেশভক্তি আর জীবন উত্সর্গ করার মানসিকতাকে কুর্নিশ করে প্রতিবছরই এই আর্মি ডে বা সেনা দিবস পালন করা হয়।এবার লখনউতেও শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে সেনানীরা শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। সেনাপ্রধান সেনাবাহিনীর বীরত্ব পুরস্কার বা গ্যালান্টারি অ্যাওয়ার্ডও দেন এই অনুষ্ঠানে। এরপরে সেনা বাহিনীর তরফে নানা কসরত প্রদর্শন করা হয় । মোটরবাইকে স্টান্ট দেখান সেনাবাহিনীর সার্ভিস কর্পস টর্নেডো, প্য়ারাট্রুপাররা স্কাইডাইভিং ও করেন। এছাড়াও ডেয়ারডেভিল জাম্প, সেনাবাহিনীর এভিয়েশন কর্পসের হেলিকপ্টার নিয়ে ফ্লাই পাস্টও প্রদর্শিত হয়।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সকলেই জওয়ানদের আত্মত্যাগ,স্বদেশপ্রেমের কথা তুলে ধরে বার্তা দিয়েছেন। দেশভক্ত মানুষও মনে করেন,দেশের প্রতি এই ত্যাগ আর লড়াকু মানসিকতাকে সঙ্গী করে যেন জাতিয়াতাবাদের সুরে বাঁধা থাকে ভারতভূমি,কোনও শক্তিই যেন ভারতের ঐক্য-সংহতি –অখণ্ডতা রক্ষার অঙ্গীকারকে বিনষ্ট না করতে পারে।
Free Access