স্বাস্থ্য

গরমে নাজেহাল, প্রাণান্তকর অবস্থা, গরমকে ঠেকাতে ভরসা থাকুক শ্রীফলে

In the heat, let there be hope to prevent the heat, the life-threatening situation, Srifale

The Truth Of Bengal Desk:মৌ বসু , গরমে প্রাণান্তকর অবস্থা আট থেকে আশি সকলের। নাজেহাল গরমে তেষ্টা মেটাতে ও প্রাণ জুড়োতে তাই কৃত্রিম চিনিযুক্ত ঠান্ডা পানীয় নয় ভরসা থাকুক আদি অকৃত্রিম প্রাকৃতিক প্রাণ জুড়োনো বেলের শরবতেই।

ইংরেজিতে বেলকে বলা হয় ‘উড অ্যাপেল’। সংস্কৃতে বলা হয় শ্রীফল আর বিল্ব। ভারত ছাড়াও মালয়েশিয়া, তাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেখা মেলে বেলগাছের। বৈজ্ঞানিক নাম ‘Aegle marmelos’। হিন্দু ধর্মেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বেলগাছ। মনে করা হয়, দেবাদিদেব মহাদেবের প্রিয় হল বেলগাছ। বলা হয়, বেল ও বেলপাতাতেই সন্তুষ্ট মহাদেব। বেলগাছে বসত করেন মা লক্ষ্মী।

প্রতি ১০০ গ্রাম বেলে মেলে ১৩৭ কিলোক্যালরি শক্তি, ৩১.৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ০.৩ গ্রাম ফ্যাট, ১.৮ গ্রাম প্রোটিন। এছাড়াও পাওয়া যায় ভিটামিন এ, সি, বি১, বি২, থায়ামিন, রাইবোফ্ল্যাভিন, নায়াসিন, ক্যারোটিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, লোহা, পটাসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ, ফাইবার আর ৬১.৫ গ্রাম জল।
অসম্ভব পুষ্টিকর বেলে এ, বি১, বি২, সি’র মতো ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, লোহার মতো খনিজ পদার্থ আছে বলে বেল আলসার, টিবি, হেপাটাইটিসর মতো রোগ সারাতে সাহায্য করে। প্রচুর ট্যানিন পাওয়া যায় বেলে যা কলেরা প্রতিরোধ করতে পারে।

কেন খাবেন বেলের শরবত?

১) প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকায় শরীরে শক্তি জোগায় বেল। নিয়ন্ত্রিত ভাবে বেল খেলে তাতে মস্তিষ্কের কোষ ভালো ভাবে কাজ করে। হজমে সহায়তা করে আর কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে বেল।
২) প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে বলে বেল হাইপার টেনশনের রোগীদের জন্য দারুণ উপকারী। ধমনীর মোটা হয়ে যাওয়া আটকায় বেল, স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় বেল। প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে বলে বেল শরীরে জমা হওয়া সোডিয়াম প্রস্রাবের সঙ্গে বের করে দেয়।
৩) হাড় মজবুত রাখতে দরকার ক্যালসিয়াম। বেলে প্রচুর ক্যালসিয়াম মেলে বলে তা দাঁত, হাড় মজবুত করে। অস্টিওপরোসিসের মতো হাড় ক্ষয়ের রোগ আটকায়।
৪) প্রচুর পরিমাণে লোহা থাকায় বেলকে প্রাকৃতিক ভাবে রক্ত শোধন করে বলে মনে করা হয়। রক্তে লোহিত কণিকা আর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় বেল। তাই যারা অ্যানেমিয়ায় ভুগছেন তাদের জন্য বেল খুব উপকারী।
৫) একাধিক ভিটামিনে সমৃদ্ধ বেল চোখের রোগ, হজমের গণ্ডগোল, হৃদরোগ, ত্বকের সমস্যা সারাতে সাহায্য করে। তেমন ভাবেই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে জীবাণু সংক্রমণও ঠেকায়।
৬) বেলকে বলা হয় পাওয়ার হাউজ অফ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস। ফ্ল্যাভোনয়েডসের মতো ফাইটোকেমিক্যালস সমৃদ্ধ বেল হৃদরোগ আর লিভারের রোগ সারায়। ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
৭) বেল গাছের ডালে পাওয়া যায় ‘ফেরোনিয়া গাম’ নামে এক ধরনের অ্যাক্টিভ পদার্থ যা ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করে। বেলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিনের নিঃসারণও ঠিক রাখে বেল। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের রোজ সকালে অল্প কিছু খাবার খেয়ে এক গ্লাস বেলের শরবত খেতে বলা হয়।
৮) ট্যানিনের পাশাপাশি অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়া আর অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক গুণ সমৃদ্ধ বেল ডায়েরিয়ার জন্য দায়ী শিগেলোসিস নামে সংক্রমণ ঠেকাতে পারে। কলেরাও সারাতে পারে বেল। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন বেল খেলে সেরে যায় কলেরা, ডায়েরিয়ার মতো সংক্রমক রোগ।
৯) পেটের আলসারের রোগীরা বেল খেলে উপকার পাবেন।

Related Articles