জন্মের আগেই নির্ধারণ করা যেতে পারে ক্যান্সারের ঝুঁকি! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
Cancer risk can be determined before birth! What experts say

Truth Of Bengal: জন্মের আগেই গর্ভে থাকা শিশুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইঁদুরের উপর পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এই রিপোর্ট পেশ করেছে ‘নেচার ক্যান্সার’। এই গবেষনায় দুটি স্বতন্ত্র জেনেটিক অবস্থা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেটা ভ্রূণের বিকাশের সময় উদ্ভব হয়। আর এর জেরে একজন ব্যক্তির আজীবন ক্যান্সারের ঝুঁকিকে সম্ভাব্য আকার দেয়।
Online now!
TRIM28-dependent developmental heterogeneity determines cancer susceptibility through distinct epigenetic states
🖊️by Ilaria Panzeri & John Andrew Pospisilik and colleagues@Bi0lilla @PospisilikJ
— Nature Cancer (@NatureCancer) January 26, 2025
জেনেটিক অবস্থা এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি
গবেষণা অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, এই দুটি জেনেটিক অবস্থা একজন ব্যক্তির ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি বা কম কিনা তা প্রভাবিত করে। মিশিগানের গ্র্যান্ড র্যা পিডসের ভ্যান অ্যান্ডেল ইনস্টিটিউটের এপিজেনেটিক্সের চেয়ার ডঃ জে. অ্যান্ড্রু পসপিসিলিক এই গবেষণার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন। “এই দুটি এপিজেনেটিকভাবে ভিন্ন অবস্থার আমাদের সনাক্তকরণ ক্যান্সারের ভিত্তি সম্পর্কে গবেষণার একটি সম্পূর্ণ নতুন জগতের দ্বার উন্মোচন করে,” তিনি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ জেনেটিক অবস্থাযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যদি ক্যান্সার হয়, তবে তাদের ফুসফুস বা প্রোস্টেট ক্যান্সারের মতো কঠিন টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অন্যদিকে, যাদের ঝুঁকি কম তাদের লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমার মতো তরল ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
সময়ের সঙ্গে ক্যান্সারের ঝুঁকি কীভাবে বিকশিত হয়?
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডিএনএ ক্ষতি এবং পরিবেশগত কারণের জেরে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তবে, সমস্ত অস্বাভাবিক কোষ ক্যান্সারে পরিণত হয় না। যার ফলে গবেষকরা জেনেটিক্স এবং এপিজেনেটিক্সকে ক্যান্সারের ঝুঁকির সম্ভাব্য অবদানকারী হিসাবে অন্বেষণ করতে পরিচালিত করেন। পসপিসিলিকের ল্যাবের একজন গবেষণা বিজ্ঞানী ডঃ ইলারিয়া পাঞ্জেরি ব্যাখ্যা করেছেন: “প্রত্যেকেরই কিছু ঝুঁকি থাকে, কিন্তু যখন ক্যান্সার দেখা দেয়, তখন আমরা প্রায়শই এটিকে কেবল দুর্ভাগ্য হিসাবে ভাবি। তবে, কেবল দুর্ভাগ্যই পুরোপুরি ব্যাখ্যা করে না যে কেন কিছু লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং অন্যরা হয় না। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, দুর্ভাগ্যকে চিকিৎসার জন্য লক্ষ্য করা যায় না।” এই গবেষণাটি এই ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ করে যে ক্যান্সার সম্পূর্ণরূপে একটি এলোমেলো ঘটনা এবং পরামর্শ দেয় যে জেনেটিক প্রবণতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ক্যান্সার বিকাশে TRIM28-এর ভূমিকা
এই ঝুঁকির পিছনে জৈবিক প্রক্রিয়া বোঝার জন্য গবেষকরা TRIM28 জিন পরীক্ষা করেছেন। যা ক্যান্সারের সাথে যুক্ত জিন-সহ অন্যান্য জিন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে TRIM28 এর মাত্রা কম থাকা ইঁদুরগুলি জিনগতভাবে অভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও দুটি স্বতন্ত্র জিন প্রকাশের ধরণ প্রদর্শন করেছিল। ভ্রূণের বিকাশের সময় প্রতিষ্ঠিত এই ধরণগুলি তাদের আজীবন ক্যান্সারের ঝুঁকির অবস্থা নির্ধারণ করে। “মানুষের ক্যান্সারে এই একই জিনগত প্রক্রিয়া প্রায়শই পরিবর্তিত হয়,” গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন যে একই ধরণের বিকাশগত ঝুঁকির কারণগুলি মানুষের মধ্যে থাকতে পারে।
ক্যান্সার রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য ভবিষ্যতের প্রভাব
এই আবিষ্কার প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধ কৌশলের জন্য নতুন পথ খুলে দেয়। যদি এই জিনগত অবস্থাগুলি মানুষের মধ্যে সনাক্ত করা যায়, তাহলে এগুলি জীবনের অনেক আগেই ক্যান্সারের ঝুঁকি মূল্যায়নে সাহায্য করতে পারে, সম্ভাব্যভাবে আরও ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ করে দিতে পারে। ডঃ পাঞ্জেরি বিশ্বাস করেন যে এই গবেষণা বিজ্ঞানীদের ক্যান্সার গবেষণার পদ্ধতিকে নতুন করে আকার দিতে পারে।” আমাদের অনুসন্ধানগুলি দেখায় যে ক্যান্সারের শিকড় ভ্রূণের বিকাশের সংবেদনশীল সময়কালে শুরু হতে পারে। এটি আমরা কীভাবে রোগটি অধ্যয়ন করি তার উপর একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে এবং রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য নতুন বিকল্পের দিকে পরিচালিত করতে পারে।” সামনের দিকে, গবেষকরা এই জিনগত অবস্থাগুলি কীভাবে মানুষের বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারকে প্রভাবিত করে তা তদন্ত করার পরিকল্পনা করছেন। তাদের লক্ষ্য হল লক্ষ্যবস্তু থেরাপি তৈরি করা যা প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।