ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য “সুপার ফুড”! রাঙা আলুর পাউডার তৈরির চেষ্টা কৃষি দফতরের
Super Food

The Truth of Bengal, Mou Basu: ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর বিগত এক দশকে বাংলার বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া নানান সুগন্ধি ধানের পুনর্জীবন ঘটিয়ে নতুনভাবে বাজারজাত করা হয়েছে। নতুন প্রজাতির ধানও চাষ করছেন রাজ্যের কৃষকরা কৃষি দফতরের তত্ত্বাবধানে। এবার রাজ্যের অসংখ্য ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের সুরাহা দিতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের কৃষি দফতর। ডায়াবেটিক রোগীদের কাছে সুপার ফুড হল রাঙা আলু। সেই রাঙা আলুর পাউডার তৈরিতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে জলপাইগুড়ি কৃষি দফতর। যে সব খাবারে গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স (জিআই) বা শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে তা খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে জন্য ডায়াবেটিক বা মধুমেহ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা আলুর থেকে শতহস্ত দূরে থাকে। কিন্তু রাঙা আলুতে সাদা বা সাধারণ আলুর চেয়ে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকার কারণে তা অ্যান্টি ডায়াবেটিক। রাঙা আলু খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় না তাই রাঙা আলু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
বিজ্ঞানীদের মতে, আদতে জাপানের ফসল এই রাঙা আলু। মনে করা হয়, জাপানিদের দীর্ঘায়ু হওয়ার মন্ত্র লুকিয়ে আছে রাঙা আলুতেই। রাঙা আলুকে অ্যান্টি কার্সিনোজেনিক বা ক্যানসাররোধকারী বলে ধরা হয়। ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট আর্য়ুবেদিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের বিশেষজ্ঞদের মতে, আয়ুর্বেদে যে ১০টি গুণের উল্লেখ রয়েছে তা আছে রাঙা আলুতে। এছাড়াও রাঙা আলুতে মেলে বিটা-ক্যারোটিন নামে এক ধরনের কারোটেনয়েড যা ভিটামিন এ-তে ভরপুর। চোখের স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ দরকারি ভিটামিন-এ। ভিটামিন সিতে সমৃদ্ধ রাঙা আলু আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। রক্তের লোহিত কণা তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় লোহা, তাও ভরপুর রয়েছে রাঙা আলুতে। শরীরের জন্য অপরিহার্য ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থও রয়েছে রাঙা আলুতে। এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড নিউট্রিশন নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, রাঙা আলুতে আছে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনলস যা খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) এর মাত্রা কমিয়ে তোলে।
ডায়াবেটিস রোগীদের পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কথা ভেবে তাই এহেন উপকারী রাঙা আলুর চাষ করতে ও তার থেকে পাউডার তৈরিতে উদ্যোগ নিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা কৃষি দফতর। জাপানে বেগুনি রঙের রাঙা আলুর প্রজাতির নাম মুরা শাকি আর কমলা রঙের প্রজাতির নাম আকা নামা। বাংলাদেশের একটি সংস্থার মাধ্যমে এই বীজ জাপান থেকে আনা হয়েছে। এই ২ প্রজাতির রাঙা আলু চাষ করা হবে জলপাইগুড়িতে। জাপান থেকে আনা আলুর বীজ পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বীজ জীবাণুমুক্ত করার পর কাটিং পদ্ধতিতে গাছের চারা তৈরি করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জেলার প্রতিটি ব্লকে কৃষকদের এই মুরা শাকি ও আকা নামা প্রজাতির রাঙা আলুর বীজ বিতরণ করা হয়েছে। পাইলট প্রকল্পের জন্য জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ির পশ্চিম মাগুরমারিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে জলপাইগুড়ির সদর ব্লকে রাঙা আলুর চাষ শুরু হয়েছে। কোনো রকম রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে না। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে। মাগুরমারিতে রাঙা আলুর থেকে পাউডার ও চিপস তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে। এখন কারখানা গড়ে তোলার কাজ চলছে। এই কারখানা পুরোদমে চালু হলে এখান থেকে তৈরি হওয়া রাঙা আলুর পাউডার ও চিপস বিদেশে রফতানি করা হবে।