রাতে পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি, ঘুমের সঙ্গে আপস নয়
Adequate sleep at night is essential, sleep is not compromised

Truth Of Bengal, Mou Basu : সুস্থ থাকতে প্রত্যেকদিন রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ঘুম কোনো লাক্সারি নয়, শরীরকে সুস্থ রাখতে ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রচণ্ড সাহায্য করে ঘুম। ঘুমের সময় শরীর রিচার্জ করে, ক্ষত মেরামত করে, টিস্যুর গ্রোথ হয়। মস্তিষ্কে যে নতুন তথ্য জমা হয় তাও সংগঠিত হয় ঘুমের সময়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক আছে ঘুম আর ‘সিরকাডিয়ান সিস্টেমের’।
ঘুমের সময় শরীরকে রোগভোগের হাত থেকে বাঁচায় যে ‘আন ডিফারেনশিয়েটেড টি-সেলস’ আর ‘প্রো-ইনফ্লেমটরি সাইটোকিনস’ কোষের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়। আবার আমরা যখন জেগে থাকি তখন সাইটোটক্সিক ন্যাচারাল কিলার সেলস ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরি সাইটোকিন কোষের সংখ্যা বেড়ে যায়। সে জন্যই পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
ডাক্তারদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। শরীরে স্বাভাবিক ভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এটা খুব জরুরি। ভালো ভাবে না ঘুমোলেই দুর্বল লাগবে। ক্লান্তি লাগবে, মস্তিষ্কে তার প্রভাব পড়বে সরাসরি। পর্যাপ্ত ঘুম না হলেই শরীর চাঙ্গা হতে পারবে না তার প্রভাব শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মে পড়বে। তবে তার মানে এই নয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে ঘুমোন। সেটাও ভালো নয়। ঘুমোলে আমাদের শরীরে জমা হওয়া টক্সিন নিউট্রোলাইজ হয়। মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে। শরীর আর মনকে শান্ত রাখতে, রিল্যাক্স রাখতে সাহায্য করে। ঘুম কম হলেই ক্লান্তি, অবসন্ন, আচ্ছন্ন ভাব থাকলে সামান্য কাজেও অনেক ভুল হয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে ঘুম কম হলে হৃদযন্ত্রের সমস্যা, শ্বাসকষ্টের সমস্যা, সর্দিকাশি, ঠান্ডা লেগে শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। আবার বেশি ঘুমের সঙ্গে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, মাথার যন্ত্রণা, পিঠের যন্ত্রণা, স্থুলতার সমস্যা বাড়ে। বেশি ঘুম মেটাবলিজম কমায়। শরীরে বেশি করে টক্সিন জমা হতে শুরু করে। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। কম ঘুম হলেও যেমন বিভিন্ন অসুখ হতে পারে। তেমনই বেশি ঘুমের সঙ্গে থাইরয়েড, হৃদরোগ সমস্যা, ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা, মানসিক অবসাদের সমস্যা জড়িত হতে পারে। বেশি ঘুমের কারণে দুশ্চিন্তা, লো এনার্জি, স্মৃতিভ্রংশের সমস্যা হতে পারে।চারপাশের ভারাক্রান্ত পরিবেশ আমাদের শরীর ও মনকে ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করছে।
দুশ্চিন্তা কমাতেই হবে। সেলফ কেয়ারের ওপর জোর দিন। সারাক্ষণ টিভি বা মোবাইলে ঘাঁটাঘাঁটি না করে রিল্যাক্স করুন। যেটা ভালো লাগে সেটা করুন। বাগান করুন, বই পড়ুন, গান শুনুন, যেভাবে হোক মনকে চিন্তামুক্ত রাখুন। সারাক্ষণ মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করলে মোবাইলের স্ক্রিনের আলো মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে স্লিপ হরমোন মেলাটোনিনের নিঃসারণ বন্ধ করে দেয়। দিনের বেলায় ঘুমোলে আর রাতে না ঘুমোলে ঘুমোনোর নির্দিষ্ট টাইম টেবিলকে বিগড়ে দেয়। তাই নির্ধারিত সময় ঘুমোনোর চেষ্টা করলেও ঘুমোনো যায় না। মন চিন্তায় ভারাক্রান্ত থাকলে, লো এনার্জি আর দিনের বেলায় ঘুমোলে রাতে চোখে আসে না ঘুম।
অভ্যাস বদলালে কীভাবে ভালো ঘুম হবে-
১) কতটা ঘুমোনো জরুরি সেটা শারীরিক অবস্থা বুঝে নিজে ঠিক করুন। সেই অনুযায়ী রাতে ঘুমোন। কারোর ৬-৯ ঘণ্টা ঘুমোনোর প্রয়োজন হয় কারোর আবার ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। তাই বেশি রাত পর্যন্ত না জেগে ঠিক সময় ঘুমোতে যান।
২) রাতে ঘুমোনোর এক ঘণ্টা আগে অন্তত মোবাইল ফোন সুইচড অফ করে দিন। মোবাইলে চোখ নিবিষ্ট রাখবেন না ঘুমোনোর আগে। তাহলেই দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন।
৩) ঘুমোনোর আগে নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করুন। এই ‘মি টাইম’-এ ফোন দেখবেন না, ধরবেনও না। রোজ এক ঘন্টা নিজের জন্য সময় বের করুন। এই সময় গান শুনুন, টিভি দেখুন, বই পড়ুন। দিনের বেলায় কমপক্ষে ৩০ মিনিট চোখ বন্ধ করে রিল্যাক্স করুন।
৪) ঘুমোনোর আগে কিছুক্ষণ ডিপ ব্রিদ এক্সারসাইজ করুন। ঘুমোনোর পরিবেশ যেন ঠিক থাকে। চড়া আলো, প্রচণ্ড আওয়াজে ঘুম একেবারে ভালো হয় না। স্ট্রেসমুক্ত থাকতে পুরোনো পছন্দের অভ্যাস ঝালিয়ে নিন। নিজের জন্য একটা রুটিন ঠিক করুন।
অনিদ্রার থেকে মুক্তি দিতে পারে বাইনরাল বিটস। গান শুনে যেমন মানসিক চাপ কমে, ঘুম আসে, তেমনই এই বিটস ঘুম পাড়ানোর ক্ষেত্রে জাদুর মতো কাজ করে। কী এই বাইনরাল বিটস? এটি এক ধরনের শ্রুতিবিভ্রম অর্থাৎ অডিও ইলিউশন। দু’ ধরনের শব্দ বা টোন আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি অর্থাৎ তরঙ্গে এক সঙ্গে শোনা। দু’টি শব্দ বা টোন মিলে একটি তৃতীয় শব্দ বা সাউন্ড তৈরি করে। এটি সাধারণত ছন্দময় শব্দতরঙ্গ বা রিদমিক বিট হয়। এই রিদমিক বিট নিউরনকে নির্দেশ দেয় বৈদ্যুতিক বার্তা পাঠাতে। বাইনরাল বিটসের শব্দতরঙ্গ মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানসিক চাপ দূর করে। মস্তিষ্কের ক্রিয়াকর্মকে নিষ্ক্রিয় করে যাতে তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসে।