ফিচার

ভারতের এক আজব গ্রাম, এখানে কোনও বাড়িতে ব্যবহার করা হয় না তালা চাবি, নেই দরজাও

Shani Signapur Shani Temple

The Truth of Bengal: আপনারা অনেকেই বেড়াতে যান। কিন্তু কখনও বাড়িতে দরজা বা তালাচাবি না দিয়ে বেড়াতে গিয়েছেন? প্রশ্নটি দেখার পরেই হয়তো ভাবছেন, নেহাত উন্মাদ বা ভুলো মনের মানুষ না হলে, এমন কর্ম কেউই করবেন না। কিন্তু যদি আপনাদের বলা হয়, এই ভারতের বুকেই এমন এক গ্রাম রয়েছে, যেখানে অধিকাংশ বাড়িতে নেই কোনও দরজা। এমনকী তালাচাবিও ব্যবহার করা হয় না। তাহলে বিষয়টি কেমন লাগবে! কি অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ এই ভারতের বুকেই রয়েছে এমন একটি আজব গ্রাম। যেখানে অধিকাংশ বাড়িতে নেই দরজা এমনকী ব্যবহার করা হয় না তালাচাবি। কারণ এই গ্রামের রক্ষাকর্তা এক অদৃশ্য শক্তি। শনিদেবতা।

মহারাষ্ট্রের সিরডি থেকে সত্তর কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই গ্রাম আহমেদনগর জেলায়। গ্রামের নাম শনি শিগ্নাপুর। ভারতে যে দুটি বিখ্যাত প্রাচীন শনিমন্দির রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম এই শনি শিগ্নাপুর মন্দির। সারাবছরই এই গ্রামে বহু পুণ্যার্থীর ভিড় লেগে থাকে। অনেকের বিশ্বাস, শনির দশা কাটাতে হলে, আপনাকে আসতেই হবে এই গ্রামে।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে শনিদেব হলেন সূর্যের পুত্র। তিনি কর্মফলদাতা। যেমন কর্ম করেন তার ফল দিয়ে থাকেন। এমনকী পূর্বজন্মের কর্মফলের হিসেব রাখেন তিনি। তাঁর কৃপী না পেলে ভালো কর্ম করলেও জীবনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলা কার্যত অসম্ভব। পাশাপাশি অনেকের বিশ্বাস, জীবনে বড় কোনও অঘটন ঘটার আশঙ্কা থাকলে, শনিদেব তার ইঙ্গিত দেন। সচেতন না হলেই বিপদ অবশ্যম্ভাবী।

এই গ্রামে এতো বড় শনি মন্দির হল কীভাবে? কিংবদন্তী রয়েছে প্রায় ৩০০ বছর আগে এক রাখাল পানসনালা নদীর পাড়ে একটা কালো পাথর দেখতে পায়। সে সেই পাথরটিকে লাঠি দিয়ে দু তিনবার টোকা মারার পরেই রক্ত বেরোতে থাকে। বিষয়টি দেখে রাখাল বালক ঘাবড়ে গিয়ে গ্রামবাসীদের জানান। তাঁরা পাথরটিকে তুলে আসেন। পরের দিনই, ওই রাখালবালক স্বপ্নে দেখে শনিদেব তাঁকে বলছে, ওই পাথরটি তাঁর স্বয়ম্ভু লিঙ্গ, তাঁকে যেন এই গ্রামের মানুষেরা পুজো করেন। এবং তাঁর নামে মন্দির তৈরি হলেও, পাথরটি যেন খোলা জায়গায় রাখা হয়। সেই নির্দেশ পালন করা হয়। লোকশ্রুতি রয়েছে, তার পর থেকে এই গ্রামে কোনও রকম অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেনি।

স্থানীয়দের বিশ্বাস যেহেতু এই গ্রামের রক্ষাকর্তা স্বয়ং শনিদেব, তাই গ্রামের কোনও মানুষ বাড়িতে দরজা জানালাও বসাননি। চোর ডাকাতের ভয়ও নেই। মহারাষ্ট্র পুলিশের রেকর্ড বলছে, এই গ্রামে একটি থানা থাকলেও চুরি, ছিন্তাই, ডাকাতির, খুন, ধর্ষণের কোনও রেকর্ড নেই। তবে কয়েকবছর আগে দুটি চুরির মামলা রুজু হয়েছিল। কিন্তু চোরেরা একদিনের মধ্যেই সমস্ত চুরির মাল থানায় জমা দিতে বাধ্য হয়।

এই গ্রামে গিয়ে পুজো দিতে চাইলে, বা বিস্তারিত জানতে শনিশিগ্নাপুরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যোগাযোগ করতে পারেন