সম্পাদকীয়

ট্রাম্প ট্যারিফে মন্দা আসন্ন তবে ভারতের সুযোগ আছে

Trump tariffs could lead to recession, but India has a chance

Truth Of Bengal: অধ্যাপক (ডঃ) রাজাগোপাল ধর চক্রবর্ত্তী: ২রা এপ্রিল নাকি আমেরিকার মুক্তি দিবস, শিল্পের পুনর্জন্মের দিন, বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বছরের ওই দিনে মিত্র-প্রতিপক্ষ তোয়াক্কা না করে আমেরিকা তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লিপ্ত সব দেশের ওপর ব্যাপক ট্যারিফ বা শুল্ক চাপিয়েছে, যা ১৯৬৮ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় শুল্ক বৃদ্ধি।

এতে আমেরিকার আমেরিকার ভাগ্য পুনরুদ্ধার হবে, সে আরও সম্পদশালী হবে, সেরকমই বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এই শুল্ক বসতেই চিন পাল্টা শুল্ক চপিয়েছে আমেরিকার পণ্যের ওপর। শুরু হয়েছে শুল্ক যুদ্ধ। এখনও আর কোনও দেশ পাল্টা জবাব দেওয়ার আগেই শেয়ারবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা ধরা পড়েছে। এরই মধ্যে মার্কিন শেয়ারবাজার চার ট্রিলিয়ন ডলার মূল্য হারিয়েছে।

কোভিড ১৯ যে ভাবে ধাক্কা মেরেছিল বিনিয়োগ বাজারে, ট্রাম্প-২ বাণিজ্য নীতির ধাক্কা আরও সুদূরপ্রসারী হওয়ার সম্ভাবনা।  ওয়াল স্ট্রিট ধসের ধাক্কায় ভারতের সেনসেক্স-নিফটিও ব্যাপক পতনে। ভারতীয় শেয়ার বাজারের সূচক গত ১০ মাসের সর্বনিম্ন স্থানে নেমেছে। ট্রাম্পের উগ্র বাণিজ্য নীতির কারণে আতঙ্কিত এশিয়ান ইক্যুইটি বাজার।

দারুণভাবে মার খাচ্ছে আইটি, অটো, মেটাল কোম্পানির শেয়ার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তিনটি শেয়ার বাজার সূচক স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস ৫০০, ডো জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ এবং নাসডাক কম্পোজিট বিরাট পতনের মধ্যে। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০, পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কায়।

ট্যারিফ অন্য দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যগুলির উপর চার্জ করা কর। সাধারণত, কোনও পণ্যের মূল্যের শতাংশ হিসাবে এই কর তোলা হয়। যেসব কোম্পানি বিদেশি পণ্য দেশে নিয়ে আসে সরকারকে তারা এই কর দেয়। উদাহরণস্বরূপ, হাজার ডলার মূল্যের পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৬ % শুল্কের অর্থ ২৬০ ডলার শুল্ক।

আমদানিকারক সংস্থা পণ্যের চাহিদা ও জোগানের স্থিতিস্থাপকতার ওপর ভিত্তি করে, আমদানি শুল্কের একটা অংশ ভোক্তার ঘাড়ে চাপায়। পণ্য অত্যন্ত জরুরি হলে পুরো কর ভোক্তার ওপর পড়ে। আবার পণ্যের অনেক সম গুরুত্বের বিকল্প থাকলে, ভোক্তার ওপর শুল্ক চাপানো যায় না।

দাম বাড়লেই ভোক্তা অন্য বিকল্পের দিকে ঝোঁকে। বোঝাই যাচ্ছে, আমদানি শুল্কে পণ্যের দাম বাড়ে। সরকারের ঘরে কর আসলেও ভোক্তা ও আমদানিকারক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত। ফলে, আমদানিকারক সংস্থা কম বিদেশিশী পণ্য আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বা পুরোপুরি আমদানি বন্ধ করে দিতে পারে।

তাই আমেরিকা শুল্ক বসালে, সেখানে আমদানি কমবে, আভ্যন্তরীণ উত্পাদন বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। স্বাভাবিক ভাবেই ট্যারিফ স্বদেশীয় উত্পাদকের রক্ষাকর্তা হিসাবে কাজ করে। ট্রাম্প দর্শনে, শুল্ক মার্কিন ভোক্তাদের আরও বেশি আমেরিকান তৈরি পণ্য কিনতে উত্সাহিত করবে।

তাতে অভ্যন্তরীণ উত্পাদন ও বিনিয়োগ বাড়বে, উত্থাপিত করের মাধ্যমে দেশের পরিকাঠামো বাড়ানো যেতে পারে। ট্রাম্প অর্থনীতিতে ‘শুল্ক’ অত্যন্ত জরুরি, এর কয়েক দশকের ব্যবহারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়া উচিত। ট্রাম্প যুক্তিতে, শুল্ক মুক্ত বাণিজ্যে আমেরিকা বিদেশিদের দ্বারা প্রতারিত ও লুন্ঠিত হয়েছে।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৩১.৪ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে, আমদানি সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪০১.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে বা আমদানি কমাতে যে হারে শুল্ক বসানো প্রয়োজন তাকে রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পারস্পরিক শুল্ক বলা হয়। ট্রাম্পের বাণিজ্য দফতর প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা করে শুল্ক হার হিসাব করেছে।

প্রথমে রয়েছে, ১০% হারে ‘বেসলাইন’ শুল্ক” বা সর্বনিম্ন শুল্ক– ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, চিলি, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, তুরস্ক, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, এল সালভাদর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব প্রভৃতি দেশ এই করের আওতায় পড়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে, ‘জঘন্যতম অপরাধী’ তকমা লাগানো ৬০টি দেশ, যেখানে মার্কিনি আমদানির ওপর বেশ ভালো রকমের শুল্ক ও অন্যান্য বিধি নিষেধ রয়েছে।

আগামী ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই শুল্ক হার চাপছে এইরকম ভাবে– কম্বোডিয়া ৪৯ শতাংশ, ভিয়েতনাম ৪৬ শতাংশ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কা ৪৪ শতাংশ, বাংলাদেশ ৩৭ শতাংশ, থাইল্যান্ড ৩৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও তাইওয়ান ৩২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০ শতাংশ, পাকিস্তান ২৯ শতাংশ, জাপান ২৪শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০ শতাংশ, ফিলিপাইন ১৭ শতাংশ।

ভারত ও চিনের ওপর ‘ডিসকাউন্টেড রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’: মার্কিন আমদানিতে ভারত বসায় ৫২ শতাংশ, আর চিন ৬৭ শতাংশ, ট্রাম্প অর্ধেক ডিসকউন্ট দিয়ে ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ এবং চিনের ওপর ৩৪ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের ঘোষিত নীতি অনুসারে, তামা, ওষুধ, সেমিকন্ডাক্টর, কাঠ, সোনা, শক্তিপণ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যায় না এমন নির্দিষ্ট খনিজগুলির মতো নির্দিষ্ট পণ্যগুলিতে পারস্পরিক শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। বিদেশি সব ধরনের গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসেছে।

চিন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসাবে জানিয়ে দিয়েছে ১০ই এপ্রিল থেকে সমস্ত মার্কিন পণ্য আমদানিতে ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসবে। তাছাড়া, ‘রেয়ার আর্থ মিনারলস’ বা বিরল খনিজ যা কম্পিউটার চিপ এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির মতো উচ্চ-প্রযুক্তির পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত হয় তার উপর আরও রফতানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে।

উপরন্তু, তারা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা বা রফতানি নিয়ন্ত্রণের অধীনে কোম্পানির তালিকায় ২৭টি সংস্থাকে যুক্ত করেছে। শুল্ক ইস্যুতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় মামলা করার ঘোষণাও দিয়েছে বেজিং। এত তাড়াতাড়ি চিন জবাব দেবে ট্রাম্প ভাবতেই পারেননি। ওই দিনের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লিখলেন, ‘চীন এটা ভুল খেলেছে, তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে– এমন একটি জিনিস যা তারা করতে পারে না।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুগামীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শক্ত হয়ে দাঁড়াও। ‘আমরা হারতে পারি না’।

বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনের অঙ্গীকার করা ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার অত্যন্ত শক্তিশালী, পারস্পরিক শুল্ক বসানোর কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে না মার্কিন দেশে। যেটা বোঝা দরকার, শুল্ক বসলে দেশে উপলব্ধ পণ্যগুলি আরও ব্যয়বহুল হবে। মানুষ আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য কম কিনবে সন্দেহ নেই।

আমদানি করা যন্ত্রাংশ ও উপকরণ ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত পণ্যের দামও যে বাড়তে পারে, তা ট্রাম্প বুঝতে পারছেন না। আজকের উত্পাদন ব্যবস্থায়, সাধারণত যে কোনও ভারী শিল্প দ্রব্য সম্পূর্ণরূপে একত্রিত হওয়ার আগে বিভিন্ন দেশের উপকরণ ব্যবহার করে। কোনও কোনও দ্রব্য যেমন, মোটর গাড়ি একাধিকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডার সীমানা অতিক্রম করে।

ট্যারিফ রাজ্যে এইসব দ্রব্যের উত্পাদনে বিড়ম্বনা, সঙ্গে উত্পাদন খরচ বৃদ্ধি।  চীন ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে, ট্যারিফ কমিয়েই। ভারতের ‘লুক ইস্ট’ নীতি যা মূলত চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর থেকে শিক্ষা নাও নীতি। ভারতের মূল শিক্ষা ছিল, উন্মুক্ত বাণিজ্য বাড়ানো আর সেটা সম্ভব হয়েছেল ট্যারিফের হার কমিয়ে। আজকের বিশ্বে ট্যারিফ বসিয়ে শিল্পোন্নয়ন অসম্ভব।

একই সঙ্গে, ট্যারিফ রাজে রপ্তানিকারক দেশগুলির বাজার সংকুচিত হয়, তাদের উত্পাদন কমে। অন্যত্র বাজার দখল না করতে পারলে বিদেশি জোগানদারদের যে বড় বিপদ আসে সন্দেহ নেই। ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণা করে শিল্পের সঙ্গে সমগ্র মার্কিন অর্থনীতিতেও আঘাত হানতে পারে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন মার্কিন দেশে আর্থিক মন্দা আসন্ন। এই মার্কিনী মন্দা অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেবে না। মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক অবশ্য বলেছেন, শুল্ক আরোপের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও তা ‘মূল্যবান’।

নিচের টেবিলে আমেরিকার সঙ্গে ভারত, চিন সহ আটটি দেশ বা অঞ্চলের বাণিজ্যের হিসাব রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, মার্কিন বাজারের কত বড় অংশ বিদেশিরা দখল নিয়েছে। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬৮.১ বিলিয়ন পাউন্ডের পণ্য রফতানি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রধানত যন্ত্রপাতি, গাড়ি এবং ওষুধ।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কেইর স্টারমার বলেছেন, নতুন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে ‘স্পষ্টতই অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে’। তবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য আলোচনা চলছে এবং তিনি ‘ব্রিটেনের জন্য সবচেয়ে ভালো চুক্তির জন্য লড়াই করবেন। যুক্তরাজ্য সরকার এখন পর্যন্ত মার্কিন আমদানির ওপর কোনও শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়নি। অন্য সব দেশ বলছে ‘গভীরভাবে দুঃখজনক’ শুল্ক আরোপের কোনও যৌক্তিকতা নেই।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধান মন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেন, ‘এটা কোনও বন্ধুর কাজ নয়। দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু বলেছেন, ‘বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। জাপান বলেছে, তাদের ২৪ শতাংশ কর আরোপ ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ এবং এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্র-জাপান চুক্তির লঙ্ঘন।

ভারতে রফতানি জাতীয় আয়ের মাত্র ২১.৮ শতাংশ, পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ রপ্তানির ওপর বড় মাত্রায় আস্থাশীল। রফতানি মোট অভ্যন্তরীণ আয়ের (জিডিপি)-এর ১৭৬.৮ শতাংশ হংকংয়ে, সংযুক্ত অমিরশাহিতে ১০৮.৬ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ১৭৪.৩ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৮৭.২ শতাংশ মালদ্বীপ ৭৪.৪ শতাংশ, মালয়েশিয়া ৬৮.৬ শতাংশ, কাতার ৬৮.৬ শতাংশ, থাইল্যান্ড ৬৫.৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়া ৪৪.০ শতাংশ। এইসব দেশের আর্থিক অস্থিরতা ভারত থেকে অনেক বেশি দীর্ঘ মেয়াদি ও ব্যাপক হওয়ার সম্ভাবনা।

শপথ নেওয়ার পর থেকেই ভারত ট্রাম্পের আনুকূল্য লাভের চেষ্টা চালিয়েছে, আড়াই হাজার কোটি ডলারের মার্কিন জ্বালানি আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার পর্যালোচনা করছে, বোর্বন হুইস্কি শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ এ নামিয়েছে, বিলাসবহুল গাড়ি এবং সৌর কোষগুলিতেও শুল্ক হ্রাস করেছে।

২০১৬ সালে ভারত বিশ্বের প্রথমদেশগুলির অন্যতম যে ৬ শতাংশ হারে অনলাইন বিজ্ঞাপন শুল্ক যা ‘ডিজিটাল বিজ্ঞাপন কর’ বা ‘ডিএটি’ নামে পরিচিত তা চালু করে। মার্কিন স্বার্থে ভারত সেটাও বাতিল করেছে। ট্রাম্পের অভিন্ন হৃদয় ইলন মাস্কের স্টারলিংকের চূড়ান্ত অনুমোদন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবু শুল্ক যুদ্ধ থেকে রেহাই পায়নি ভারত। একটাই বাঁচোয়া, ওষুধ পারস্পরিক শুল্ক থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত। ভারতের জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারকদের জন্য একটি স্বস্তি। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সমস্ত জেনেরিক ওষুধের প্রায় অর্ধেক সরবরাহ করে। আমেরিকায় জেনেরিক ওষুধই এখন যথেষ্ট জনপ্রিয়।

কী অর্থনীতি কি জীবনযুদ্ধ বাধা বিপত্তি থেকেই নতুন উন্মাদনা জন্মে। রবীন্দ্রনাথ বলাকা কবিতায় লিখলেন, ‘আপদ আছে, জানি আঘাত আছে তাই জেনে তো বক্ষে পরান নাচে’। কোভিড ১৯-এর যন্ত্রণা ভারতকে নতুন উদ্ভাবনী চেতনার দিকে নিয়ে যায়, কোভিড প্রতিষেধক থেকে উত্পাদন পদ্ধতি ও বণ্টন ব্যবস্থার নতুনত্বে ভারত বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ট্রাম্প ট্যারিফ হাঙ্গামা থেকে বেরিয়ে আসতে ভারত যে সচেষ্ট তা পরিষ্কার।

চিনের মতো আমরা আমেরিকার সঙ্গে কোনও প্রীতিহিংসায় যাইনি। আমরাই একমাত্র দেশ যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু করেছি অনেক দিন ধরেই। বাংলাদেশ একতরফা ভারত বিদ্বেষ ছড়ালেও, ভারত সরকার বাংলাদেশ বিদ্বেষে নামেনি। বিমস্টেক বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন এখন বাংলাদেশের সভাপতিত্বে। সার্কের গতিপথ এখন রুদ্ধ। তাই, বিমস্টেকের সাতটি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যের সুযোগ ভারত হাতছাড়া করেনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ব্যাঙ্ককে বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলনে গেছেন এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বাহরাইন ও কাতারের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু হচ্ছে। শুল্ক দ্বারা প্রভাবিত ভারতের সমস্ত রফতানি দ্রব্য, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ ও জুয়েলারির নতুন বাজার সন্ধানে ভারত ব্যস্ত।

শুল্কের হার ভারত থেকে অনেক বেশি ভারতের রফতানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকা দেশ যেমন চিন (৩৪ শতাংশ), ভিয়েতনাম (৪৬ শতাংশ), বাংলাদেশ (৩৭ শতাংশ), থাইল্যান্ড (৩৬ শতাংশ), তাইওয়ান (৩২ শতাংশ) এবং ইন্দোনেশিয়া (৩২ শতাংশ) অনেক বেশি শুল্ক বন্ধনে আটকে, তাই শুরুতে ভারতের অ্যাডভান্টেজ।

তাইওয়ানের সেমি কন্ডাক্টর, চিন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের খেলনা শিল্প, বাংলাদেশের রেডিমেড গার্মেন্টস এখন প্রবল ভারতীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তবে এই ট্যারিফ অ্যাডভান্টেজ পুরোপুরি কাজে লাগাতে ভারতকে অবশ্যই বুঝতে হবে বিদেশি বাজারের সংবেদনশীলতা, বিদেশি বাজার দেশের মতো নয়, যা কিছু বাজারে আনলে তা সহজে বিকোবে নয়, যদি তাতে কঠোর ভাবে বৈজ্ঞানিক মান নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে।

দুগ্ধজাত দ্রব্য, মাছ, মাংস কঠোর ভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করে বিদেশি বাজারে পাঠানো দরকার। একই সঙ্গে প্রয়োজন ব্যবসার স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ানো, নীতির স্থিতিশীলতা এবং লজিস্টিক ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ। বিশ্বজুড়ে ম্যান মেড, বিশেষ করে ট্রাম্প মেড আর্থিক মন্দা আসন্ন। সব দেশই অল্প বিস্তর অস্থিরতার মুখে। তবে ভারত কিছুটা সুবিধাজনক স্থানে, যদি সুযোগ কাজে লাগতে পারে।

Related Articles