সম্পাদকীয়

লোকসভা-বিধানসভা ভোটের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের মাপকাঠির পরিবর্তন প্রয়োজন

There is a need to change the criteria for electing public representatives for the Lok Sabha-Vidhan Sabha polls

Truth of Bengal, কাজলব্যানার্জি: একটি লোকসভা কেন্দ্র গঠিত হয় ৭টি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে আবার২৪০-৩২০টি পোলিং স্টেশন বা বুথ থাকে। ফলে প্রতিটি লোকসভা ক্ষেত্র কমবেশি১৮০০ থেকে২০০০ বুথ নিয়ে গঠিত হয়। লোকসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশ পেলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ৭টির মধ্যে ৫ বিধানসভা ক্ষেত্রে জয়ী হওয়াসত্ত্বেও মাত্র ২টি বিধানসভা ক্ষেত্রে অপর প্রার্থী বিপুল ব্যবধানে জয়ী হওয়ার কারণে লোকসভা ভোটে জিতে যান।একই ভাবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়১২০০ বুথেপরাজয়সত্ত্বেও মাত্র ৮০০টি বুথে জয়ী হয়ে কোনও প্রার্থী লোকসভার সদস্য হয়ে যান।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা বিধানসভা বা লোকসভা ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করি। একজন জনপ্রতিনিধির প্রতিটি বুথের মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে প্রতিটি বুথের স্বার্থে কাজ করার কথা। তাই যিনি অধিকাংশ এলাকায় জয়ী হয়েছেন, যাঁকে অধিকাংশ বুথের মানুষ জনপ্রতিনিধি হিসাবে চেয়েছেন, তাঁকেই জনপ্রতিনিধি হিসাবে মান্যতা দেওয়া উচিত। অন্ততপক্ষে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে মোট প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা উচিত নয় বলেই আমার ব্যক্তিগত ধারণা। পঞ্চায়েত ও পুরসভা ভোটের ক্ষেত্রে যেহেতু প্রতিটি বুথের পৃথক প্রার্থী থাকেন তাই সেখানে এই প্রচলিত ব্যবস্থা ঠিক আছে। সেক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতিই চলা উচিত।

আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রচলিত পদ্ধতিতে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে ক্ষমতাসীন দলগুলির জালিয়াতি করা সুযোগ বেশি থাকে। কারণ একটি লোকসভা বা বিধানসভা অন্তর্গত পোলিং বুথগুলির মধ্যে কিছু এলাকায় বিশেষ কোনও জনগোষ্ঠী, জনজাতি, বিশেষ কোনও সম্প্রদায় বা বিশেষ কোনওমতাবলম্বী মানুষ বসবাস করায় সেই বুথগুলিতে তারা সংখ্যায় অনেক বেশিথাকে। সেখানে তাদের বিরোধী মতাবলম্বী মানুষ সংখ্যায় কম থাকায় সংখ্যাগুরুরা যা ইচ্ছা তাই করে। ধরা যাক একটি বুথে ১০০০ ভোটার ভোট দিলেন।

নিরপেক্ষ ফলাফল হওয়ার কথা ৭০০ ও ২৫০ ও ৫০। কিন্তু ৭০০-মানুষেরা পেশির জোরে সেই ফলাফলকে৮৫০-৯০০তে নিয়ে যান। সেখানে ২৫০ বা ৫০যারাপায়তাদেরকিছু বলার থাকে না। সেই অতিরিক্ত ভোট দিয়ে অন্য বুথগুলির নিরপেক্ষ নির্বাচনী ফলাফল উল্টে যায়। তাই একটি বুথে জয়ের জন্য পয়েন্ট হওয়া উচিত মাত্র এক। সেখানে ১০ ভোটের ব্যবধানের জয়ী হলেও এক, আবার ২০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হলেও এক। একটি লোকসভার ২০০০ বুথের মধ্যে ১০০১টি বুথে যিনি জয়ী হবেন তাঁর পয়েন্ট হবে ১০০১।

ফলে এই পদ্ধতিতে তিনিই জয়ী হবেন যাঁকে অধিকাংশ এলাকার মানুষ চাইবে। প্রসঙ্গত বলে রাখা প্রয়োজন যে, এক্ষেত্রে দুজন প্রার্থী সমান সংখ্যক বুথে জয়ী হলে সেক্ষেত্রে দেখা উচিত কে অধিকাংশ সংখ্যক বিধানসভায় জয়ী হয়েছেন। তাতে ফলাফল সমান হলে সর্বশেষ পর্যায়ে মোট প্রাপ্ত ভোটকে ভিত্তি হিসাবে ধরা যেতে পারে। আর প্রতিটি বুথের ভোটার সংখ্যা মোটামুটি কাছাকাছি থাকা আবশ্যক।

এতক্ষণ যে কথা বললাম তা কিন্তু অবাস্তব বা কল্পনাপ্রসূত কিছু নয়। আমাদের দেশের সংবিধানেরও পরিপন্থী নয়। কারণ আমাদের দেশে সরকার গঠন করতে হলে কোনও দল সারা দেশে মোট প্রাপ্ত ভোটে এগিয়ে তা দেখা হয় না। অতএব সেখানেও দেশের অধিকাংশ সংখ্যক ভোটার কাকে চাইছেন তা দেখার সুযোগ নেই। দেখা হয় অধিকাংশ সংখ্যক এলাকায় কারা জয়ী হয়েছে।

সরকার তারাই গঠন করে যারা অর্ধেকের বেশি সংখ্যক কেন্দ্রে জয়পায়। তাহলে কোনওপ্রার্থীর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম হওয়া উচিত। অর্থাৎ, যে প্রার্থী অর্ধেকের বেশি সংখ্যক বুথে জিতবেন তাঁকেই বিজয়ী ঘোষণা করা উচিত।
এই নিয়ম চালু করা গেলে উপরোক্ত বিশেষ জনগোষ্ঠী, জনজাতিগুলির একই এলাকায় বসবাস না করে সর্বত্র ভাগ হয়ে বসবাস করা শুরু করবে।

ফলে তাঁদের মধ্যে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও দর্শনের পরিবর্তন ঘটবে। দেশবিরোধী কার্যকলাপ কমবে। সর্বত্র একই ধরনের দেশীয় সংস্কৃতি সুনিশ্চিত হবে। শক্তি সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে এক একটি বিশেষ স্থানে একসঙ্গে বসবাস করে দেশের মধ্যে থেকেই সমান্তরাল প্রসাশন ব্যবস্থা তৈরির প্রয়াসও অনেকটাই প্রতিহত হবে।

Related Articles