বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি অতীত, মোড় ঘোরাতে জাত-পাত-ধর্ম বিজেপির
The promise of 2 crore jobs per year is a thing of the past, BJP is using caste, religion and religion to turn the corner

ইন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় (বিশিষ্ট সাংবাদিক): রাজস্থানের বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার পিওন পদের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছে। নিয়োগ করা হবে ৫৩ হাজার ৭৪৯ জনকে। যেখানে আবেদনকারীর সংখ্যা ২৫ লক্ষ, পদ পিছু দাড়াচ্ছে ৪৬ জন। এখানেই শেষ নয়, ওই পিওন পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন দশম শ্রেণি। কিন্তু আজকের দিনে বেকারত্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখানে এমটেক, বিটেক, এমবিএ, পিএইচডি’র মতো উচ্চশিক্ষিতরাও আবেদন করেছেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী রাজস্থানে বেকারের সংখ্যা ১৮ লক্ষ। আসলে সবটাই আচ্ছে দিন, সবকা সাথ সবকা বিকাশের ফল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বেকারদের পকোড়া বিক্রির পরামর্শ দিয়েছিলেন। বিজেপি শাসিত ওই রাজ্যের এই বেকারত্বের বিষয়টি একটি নমুনা মাত্র। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতরে পদ খালি থাকলেও নিয়োগ হচ্ছে না। ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস কোনওটাতেই নয়। সেনা বাহিনীতে এক লক্ষ পদ খালি থাকলেও নিয়োগ হচ্ছে না। বিহারে নীতীশ কুমারের মিলিজুলি সরকার চলছে।
যেখানে মানুষের রুজি-রোজগার অনেকটাই নির্ভরশীল বাংলার ওপরে। শীতের মরসুমে ৪-৫ মাস ভিড় করে বাঙালি পর্যটকরা। বিশেষত রাজগির, নালন্দা, গয়া, বুদ্ধগয়াতে। সেই সময় হোটেলগুলিতে যেমন ব্যবসা করে তেমনই টাঙ্গা, টোটো, পাশাপাশি সরকারি রাজস্ব আদায় ও নেহাত কম হয় না। কিন্তু দুঃখজনক পরিস্থিতি হল এই যে, সেখানে লাগামছাড়া দারিদ্রতা এখনও বিরাজমান, মন্দিরগুলোর সামনে শিশু থেকে যুবক, বৃদ্ধা, বৃদ্ধ ভিক্ষাবৃত্তি করছেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা। দিনের শেষে ভিক্ষার টাকায় জীবন ধারণ। এটা আমার মনগড়া কথা নয়, যাঁরা ওইসব জায়গায় গিয়েছেন, তাঁরা অবশ্যই জানবেন।
বেড়াতে গিয়ে আমি রাজগিরের বাঙালি পাড়ার বিজয় নামে একটি হোটেলে উঠেছিলাম। একদিন একটি ম্যারেজ পার্টিতে লক্ষ্য করলাম এবং দেখলাম, হল অজানা অভিজ্ঞতা। নীতীশ কুমারের সরকার আইন করে মদ বন্ধ করে দিয়েছে। সত্যিই কি তা কার্যকরী হয়েছে? ওই হোটেলেই ম্যারেজ পার্টিতে দেখলাম মদের ফোয়ারা ছুটতে। ব্যাপারটা কেমন কী? অবৈধভাবে যত্রতত্র মদের ব্যবসা চলছে। মাঝখান থেকে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে না। কর্মসংস্থান নিয়ে বলতে কিছুটা ধান ভানতে শিবের গীত এসে গিয়েছে। তবে কিছুটা হলেও প্রাসঙ্গিকও। কেন না মদ যখন বন্ধ করা যাবেই না তখন, বৈধ হলে ক্ষতি কী ছিল? আর এতে সরকারি রাজস্ব হতো মোটা টাকা অঙ্কের। আর বিষ মদে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতো না। তা ছাড়া ওই টাকাতে উন্নয়ন, কর্মসংস্থানও ঘটতো।
বিহারে আবারও সম্প্রতি ঘুরেও এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চলছে নতুন করে ভাঙা ক্যাসেটের কচকচানি। আচ্ছে দিন, সবকা সাথ সবকা বিকাশ- কর্মসংস্থান হোক বা না হোক। রোটি কাপড়া আউর মকান নয়, ঘুরে ফিরে জাত-পাত-ধর্ম। মানুষ বিশ্বাস করেছিল বিজেপিকে, বিশ্বাস করেছিল নরেন্দ্র মোদিকে, প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে ২ কোটি চাকরি, প্রত্যেকের জিরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ করে টাকা। এইসব প্রতিশ্রুতি আজ পর্যন্ত তো পূরণ হয়ই-নি উল্টে আরও নতুন করে বেকারত্ব বেড়েছে।
করোনাকালে হাজার হাজার মানুষ কাজ হারিয়েছেন, ক্ষুধার্ত পরিযায়ী শ্রমিকের মৃতু ঘটেছে। ঘটেছে রেলে কেটে মৃত্যুর ঘটনা। স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে তিনি দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। যা আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। তাই তো আজ রাজস্থানের বিটেক, এমটেক, পিএইচডি করা উচ্চশিক্ষিতদের পিওন পদে আবেদন করতে হয়। বিজেপি অবশ্য তাদের প্রতিশ্রুতি অতীত করে দিয়েছে। তারা এখন জাত-পাত -ধর্মে মন দিয়েছেন। সবটাই পরিকল্পিত। তাঁরা ভাল করে জানেন, চাকরি দিতে পারবেন না, কর্মসংস্থান হবে না, উন্নয়ন হবে না, পরিস্থিতির মোড় ঘোরাতে তাদের তাঁবেদার কিছু সংবাদ মাধ্যম রয়েছে।