সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক আজও সংরক্ষিত
The brain of the greatest scientist, Einstein, is still preserved today.

Truth Of Bengal: অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন পৃথিবী বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৪ মার্চ ১৮৭৯ সালে জার্মানিতে। তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ১৮ এপ্রিল ১৯৫৫ সালে আমেরিকার নিউ জার্সিতে। তিনি ছিলেন আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং ভরশক্তির সমতুল্যতা সূত্রের জনক।
পরবর্তীতে সেই সূত্র বিশ্ব দরবারে সেরার স্বীকৃতি পায়। ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হন। ১৯৫৫ সালে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে প্রিন্সটন হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল আইনস্টাইনকে এবং ৭৬ বছর বয়সে ১৮ এপ্রিল ১৯৫৫ সালে তিনি দেহত্যাগ করেন। আইনস্টাইনের কথায়,’দীর্ঘদিন কৃত্রিম ভাবে এই বাঁচা স্বাদহীন, আমি আমার অংশের কর্ম করে ফেলেছি, এখন আমার যাওয়ার সময়’। এমনই মানুষ ছিলেন তিনি যে ডাক্তারকে একবার বলেছিলেন,’আমি তখনই যাব, যখন আমি যেতে চাই।’ হয়তো এমনটাই হয়েছিল বোধহয় যখন তিনি সত্যিই মারা যান।
আইনস্টাইন চেয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে যেন কবর না দিয়ে, পার্থিব শরীর আগুনে দাহ করা হয়। কারণ তিনি একদমই চাননি যে, মৃত্যুর পরে তাঁর লাশের ওপর স্মৃতিতে তৈরি হোক ও সেখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠুক। তাঁর সেই ইচ্ছেটা পূরণ করতে বন্ধু ওটো নাথন আইনস্টাইনের দেহভস্ম অর্থাৎ পোড়া ছাই গোপনে ডেলাওয়্যার নদীতে ছড়িয়ে দেন।
আইনস্টাইনের মৃত্যুর ২৩ বছর পরে হঠাৎ ‘দ্য নিউ জার্সি মান্থলি’র এক সাংবাদিক স্টিফেন লেভি দাবি করেন যে তিনি আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক দেখেছেন। মৃত্যুর প্রায় আড়াই দশক পর এমন একটি খবর সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। কারণ এই মহান বিজ্ঞানীর মস্তিষ্কের ভেতরে কী ছিল তা নিয়ে জনমানসে কৌতূহল থাকা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। আইনস্টাইনের মৃত্যুর সাড়ে সাত ঘণ্টার মধ্যে তাঁর মস্তিষ্ক সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।
সাংবাদিক স্টিফেন লেভি আইনস্টাইনের মৃত শরীরের অটোপসি যিনি করেছিলেন প্রিন্সটন হাসপাতালের প্যাথোলজিস্ট সেই থমাস হার্ভের দেওয়া তথ্য শুনে অবাক হয়ে যান। থমাস হার্ভে জানিয়েছিলেন যে, তাকে আইনস্টাইনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি তখন কারও অনুমতি বা পরামর্শ ছাড়াই একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আইনস্টাইনের মতো খ্যাতিমান মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে থমাস হার্ভেরও অধিক কৌতূহল ছিল।
তাই তিনি পরম যত্নে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কটি মাথার খুলির ভেতর থেকে বের করে প্রথমে ছবি তোলেন ও মস্তিষ্কটি ২৪০টি ব্লকে ভাগ করেন এবং সেই ব্লক থেকে হাজারের বেশি স্লাইড তৈরি করে সারা বিশ্বের নানা গবেষকদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সাংবাদিক স্টিফেন লেভি সেই সব তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রচার করতে থাকেন। গবেষণার ফলাফল ছিল একটাই সাধারণ মানুষের থেকে আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক ছিল আলাদা এবং মস্তিষ্কে গ্লিয়াল কোষের সংখ্যা অধিক ছিল নিউরনের তুলনায়। তিনি শৈশব থেকেই ছিলেন সৃষ্টিশীল। ছোটোবেলা থেকেই আইনস্টাইন কঠিন কঠিন গাণিতিক ধাঁধার উত্তর দিতে সক্ষম ছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া শহরের মেটা মিউজিয়ামে ১৮৬৩ সাল থেকে সংরক্ষিত হয়েছে পঁচিশ হাজারের বেশি ব্যতিক্রমী মানবদেহ, বিরল স্পেসিম্যান , চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি সহ হরেক বস্তু। সেখানেই কুড়িটি স্লাইড সহ সংরক্ষিত আছে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কও। বেশিরভাগ অংশই থমাস হার্ভে নিজের সংগ্রহে রেখে দিয়েছিলেন।
যদিও এমনটাও উল্লেখ আছে যে, চল্লিশ বছর পরে ১৭০টি ব্লক পুনরায় প্রিন্সটন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসে এবং ৪৬টি ব্লক ফিলাডেলফিয়া শহরের মেটা মিউজিয়ামে রাখা রয়েছে এবং ফেড্রিক লেপোরে তাঁর ‘ফাইন্ডিং আইনস্টাইন’স ব্রেন’ বইতে ২০১৮ সালে লেখেন যে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের অধিকাংশ অংশটা আইনস্টাইনের বংশধরদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই মহান বিজ্ঞানী আজ জীবিত নেই অথচ শতাব্দীর অন্যতম সেরা মস্তিষ্কের অংশ এখনও বিরাজমান এই তথ্য নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও এটা মনে বিস্ময় জাগায়।