সম্পাদকীয়

র‍্যাগিং: ছাত্র সমাজের অভিশাপ

Ragging: The curse of the student community

শম্পা পাল: মানুষ উন্নত জীব। বহু বিবর্তনের হাত ধরে আজকের এই প্রযুক্তির যুগে মানুষ উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছে। তবুও মাঝে মাঝে মানুষের কোনও কোনও আচরণ আমাদের অতীতের বর্বরতা, পশুর স্বভাবকে মনে করিয়ে দেয়। তখন মানব সভ্যতার সম্পর্কেই প্রশ্ন জাগে। এমনই এক বর্বরতার নাম র‍্যাগিং। মূলত এটি হয়ে থাকে ছাত্রাবাস এবং ছাত্রী নিবাসে। নবাগত অর্থাৎ সদ্য নতুন আসা ছাত্র বা ছাত্রীর উপর চলে পুরনোদের দৈহিক, মানসিক নিপীড়ন। র‍্যাগিং কখনো সহ্যের সীমার মধ্যে থাকে আবার তা কখনও মারাত্মক আকার ধারণ করে। শুধুমাত্র নিছক মজা নেওয়ার জন্য এই ধরনের শারীরিক, মানসিক অত্যাচার কখনও কখনও মৃত্যু ডেকে আনে। সাম্প্রতিককালে সারা পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিতে এই ঘটনা আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।

আসলে একটি বিকৃত মানসিকতার ফল। অপেক্ষাকৃত দুর্বলকে পীড়ন করে এক ধরনের বিকৃত আনন্দ পাওয়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন প্রথা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। নানা উপায় নবাগতদের বোকা বানানো, উদ্ভট কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা, প্রচণ্ড শীতের মধ্যে নবাগতদের স্নান করতে বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় যখন ছাদের কার্নিশের ওপর হাঁটতে বলা বা জোর করে কোন শারীরিক নিগ্রহ করা হয় তখনই মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়। এভাবেই ছলে নানা নির্যাতন। মূলত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এই ধরনের র‍্যাগিং বেশি দেখা দিলেও বর্তমানে অন্যান্য ক্ষেত্রেও র‍্যাগিং প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রথার ফলে অনেক ছাত্র-ছাত্রীর অকালে প্রাণ চলে যাচ্ছে যা শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চশিক্ষা ভবিষ্যৎ জীবন তৈরি করতে আসছে সেখানে এই প্রথা আগামী প্রজন্মের জীবন নষ্ট করছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একবিংশ শতাব্দীতে এই ঘৃণ্য প্রথা অবসান হওয়া দরকার। সরকার, সংশ্লিষ্ট কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উভয়কেই এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। র‍্যাগিং করলে তার দৃষ্টান্তস্বরূপ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের মনে এ বিষয়ে ভীতি তৈরি হয়। আইন করে এই প্রথার উচ্ছেদ করতে হবে। তাই ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেই। তারা তাদের ভবিষ্যতের সুরক্ষিত জীবনের জন্য এই বিকৃত প্রথার অবসান ঘটাতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করবে।

Related Articles