নাব্যতা হারানোয় প্রতি বছর বন্যা, কেন্দ্রের উদাসীন তার মাসুল দিতে হচ্ছে
Loss of navigability has to be paid every year by the flood center

Truth of bengal, প্রশান্ত দাশগুপ্ত: উত্তর থেকে দক্ষিণ–নদী দিয়ে ঘেরা আমাদের এই বাংলা। রাজ্যের প্রধান নদী গঙ্গা। এছাড়াও রয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নদী। বর্ষাকালে জলের টইটুম্বুর করে। নদীর দু’ধারে চাষবাস যেমন ভাল হয় আবার বর্ষাকালে দু’কূল ভাসিয়ে প্লাবন ঘটায়। ব্যাপক ক্ষতির শিকার হতে হয় কৃষক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে। দীর্ঘ বছর ধরে নাব্যতা হারিয়েছে নদীগুলি। দীর্ঘদিন ধরে এই বাংলার বিভিন্ন নদীতে ড্রেজিং না হওয়ার কারণে নাব্যতা হারিয়ে গিয়েছে।
এবং উপযুক্ত ড্রেজিং-এর ব্যবস্থা না থাকায় বাংলার সমস্ত নদী নাব্যতা হারিয়ে বসে আছে দীর্ঘ একটা যুগ ধরে। কেন্দ্রীয় সরকার এই বাংলা থেকে নিয়মিত ট্যাক্স আদায় করে নিয়ে যায়। কিন্তু এই খাতে টাকা খরচ করছে না। পরিকল্পনা মাফিক নদীগুলির নাব্যতা বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থাও করছে না। যার জন্যই ছোট বড় সমস্ত নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে এবং সমস্ত নদী নাব্যতা হারানোর ফলেই প্রতিবছরেই বন্যার সৃষ্টি হয়।
বাংলার একাধিক জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়। প্রতিবছর বন্যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বিপর্যস্ত হয়।কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয় রাজ্যের। নদীগুলিতে যদি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের মাধ্যমে ঠিকঠাক কাজ পরিচালিত হতো তা হলে এই পরিস্থিতির শিকার হতে হতো না। কে কার কথা শোনে? এ বছর ভয়াবহ আরও একটি বন্যার সাক্ষী হতে হল বাংলাকে।
দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ দুর্গত। ঘর বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, চাষের জমিতে জল ঢুকে ফসল নষ্ট হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ। বন্যার জল সরতে শুরু করলেও গঙ্গার ভাঙন বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।রাজ্যকে না জানিয়ে লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ছে ডিভিসি। এই নিয়ে বহুবার কেন্দ্রীয় সরকারকে অবগত করেছে রাজ্য। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই।
যখন ডিভিসি বা ফারাক্কা থেকে জল ছাড়া হয়, তখন বার বার বাংলার বিভিন্ন জেলায় বন্যার সৃষ্টি হয় ও গ্রামাঞ্চলকে ভাসিয়ে দেয়, জনপদকে ভাসিয়ে দেয়। জীবজগৎও বানভাসির মতো ভেসে যায়, সেগুলি মানুষের সম্পদ, যাদের ভেসে গেল তো ভেসে গেল তাদের দিকে কোনও লক্ষ্য নেই কেন্দ্রীয় সরকারের। কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৯-এর লোকসভায় ক্ষমতায় আসার পর কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নমামি গঙ্গে প্রকল্পের পেছনে খরচ করেছিল।
নমামি গঙ্গের এই প্রকল্পের টাকা শুধু গঙ্গার নোংরা পরিষ্কার বা গঙ্গাকে শুধু স্বচ্ছতা রাখা নয়, এই নমামি গঙ্গের প্রকল্পের টাকায় নাব্যতা বাড়াতে দামোদর-সহ বিভিন্ন নদীর ড্রেজিং করানো যেত, কিন্তু সেই প্রকল্পের টাকায় দামোদর, গঙ্গা, কংসাবতী-সহ একাধিক নদীর না বোঝা প্রতিরোধে ড্রেজিং করানো হয়নি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে। যার জন্যই প্রতি বছর বাংলাকে বন্যার কবলে পড়তে হয়। সর্বগ্রাসী বন্যার কবলে প্রতিবছরই গ্রাম বাংলার মানুষকে সর্বস্বান্ত হতে হচ্ছে। তা সত্ত্বেও সরকার বাহাদুরের টালবাহানা ও রাজনৈতিক তরজা গ্রামবাংলার মানুষকে গিলতে হচ্ছে।
২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিজেপি ১১ বছর ক্ষমতায় থেকেও ডিভিসি-সহ অন্যান্য নদীর নাব্যতা বাড়াতে ড্রেজিং করানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পেও বিভিন্ন নদীর নাব্যতা হারানোর প্রতিরোধে উদার ভাব দেখানো হয়নি, যার জন্য প্রতিবছর সারা বাংলায় ও অন্যান্য রাজ্যেও সর্বগ্রাসী বন্যার আবির্ভাব ঘটে। গোমুখ থেকে শুরু হয়েছিল নমামি গঙ্গে, গঙ্গা নদীর স্বচ্ছতা অভিযান ও গঙ্গাকে নোংরা করা যাবে না, এই শপথ নিয়ে নমামি গঙ্গে প্রকল্প শুরু করেছিলেন নরেন্দ্র দাস দামোদর মোদি।
কিন্তু মানুষকে বন্যা কবলিত অকাল গ্রাস থেকে বাঁচানোর জন্য দামোদর ফারাক্কা মাইথন-সহ বিভিন্ন ব্যারেজে ড্রেজিং হয়নি। যেখানে সাড়ে চার লাখ কিউসেক জল ধরে রাখার মতো ক্ষমতা সম্পন্ন জলাধার হল ডিভিসি তথা দামোদর। সেই সব জলাধার আজ পলি পড়ে পড়ে নাব্যতা হারিয়েছে। যার জন্য অতিরিক্ত জল ধরে রাখার মত ক্ষমতা নেই ডিভিসি’র।ফলেকীহতেতাদেখাগিয়েছেপ্লাবনে।
দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজিং না হওয়ার কারণে এবং উপযুক্ত ড্রেজিং-এর ব্যবস্থা না থাকায় বাংলার সমস্ত নদী নাব্যতা হারিয়ে বসে আছে দীর্ঘ একটা যুগ ধরে। কেন্দ্রীয় সরকারের নদী রক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে নদীমাতৃক সর্বত্র সংস্কারের কাজে যদি ড্রেজিং-এর কাজ চলতে থাকতো বা বজায় রাখতে পারতো তা হলে এই ম্যানমেড বন্যার সৃষ্টি হতো না। একটা সময় জ্যোতিবাবুর সরকারে থাকা পরিবহণ মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী গঙ্গা সহ বেশ কিছু নদীর ড্রেজিং করিয়েছিলেন।
কিন্তু এত খরচ বহুল প্রকল্পের জন্য নদী ড্রেজিং করা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর যখন রঞ্জিত কুণ্ডু পরিবহণ মন্ত্রী হন, তখন তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন ড্রেজিং করানোর বিষয়টিতে।কিন্তু পরে আর ড্রেসিং করা হল না। সেই বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।কেন্দ্রতারদায়িত্বপালনকরেনি।শুধুরাজনীতিকরেগিয়েছে।সর্বগ্রাসী বন্যা থেকে মনুষ্যজগৎকে বাঁচানোর তাগিদে কোনও রাজনীতি না করে কেন্দ্র কি পারে না রাজ্যের সঙ্গে হাতেহাত মিলিয়ে কাজ করতে?