সম্পাদকীয়

স্মরণে চারুচন্দ্র বসু

In memory of Charuchandra Bose

Truth Of Bengal: সুখময় সাহা: বঙ্গ বিপ্লবীদের ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন আশুতোষ বিশ্বাস। তিনি তৎকালীন ইংরেজ সরকার পক্ষের উকিল ছিলেন। বিপ্লবীদের দোষী সাব্যস্ত প্রমাণ করতে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে কাজ করতেন। তাই বিপ্লবীরা সংকল্প করলেন এই পথের কাঁটা সরাতেই হবে, কিন্তু কাজটা করবে কে? তখন স্বেচ্ছায় এই দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নিলেন ১৯ বছরের তরুণ চারুচন্দ্র বসু।
খুলনা জেলার শোভনা গ্রামে ১৮৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চারুচন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন কেশবচন্দ্র বসু। তিনি হাওড়ায় একটি প্রেসের কর্মী ছিলেন। বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন কলকাতার রসা রোডে। চারুচন্দ্র জন্মগতভাবে ছিলেন বিশেষ সক্ষমতা সম্পন্ন। তাঁর ডান হাত অসাড় ছিল। তবুও ছিপছিপে পাতলা গড়নের ছেলেটির মধ্যে ছিল অসম্ভব সাহস, অদম্য মানসিক দৃঢ়তা, ছিল গভীর স্বদেশ প্রেম। যোগ দিয়েছিলেন স্বদেশি আন্দোলনে এবং পরে অনুশীলন সমিতির সদস্য হন।
সেদিন ছিল ১৯০৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি, তিনি তাঁর অসাড় ডান হাতে শক্ত করে বেঁধে নিলেন রিভলবার, গায়ে চাদর জড়িয়ে সকাল সকাল পৌঁছে গেলেন আদালত চত্বরে। অপেক্ষা করতে লাগলেন, কিন্তু দেখা পাওয়া গেলো না আশুতোষের। প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিকেল চারটে নাগাদ দেখতে পেলেন আশুতোষকে। দৃঢ় প্রত্যয়ে চারুচন্দ্র মৃত্যুর দূত হয়ে দাঁড়ালেন আশুতোষের সামনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাম হাত দিয়ে নির্ভুল নিশানায় গুলি চালিয়ে হত্যা করলেন আশুতোষকে। গ্রেফতার করা হল চারুচন্দ্রকে।
বিচারের নামে চলল প্রহসন। তথ্য পাওয়ায় জন্য তাঁর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হল, তবুও তাঁর মুখ থেকে কোনও কথা বার করা যায়নি। অকুতোভয় চারুচন্দ্র বিচার পর্ব চলাকালীন বিচারককে বলেছিলেন, ‘না কিছুই আমি চাইনে… বিচার করে কালই আমাকে ফাঁসি দিন’।
বিচারের শেষে  আলিপুর কোর্টের বিচারক এফআর রো তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন ধার্য হয় ১৯০৯ সালের ১৯ মার্চ,  আলিপুর কেন্দ্রীয় জেলখানায়। ‘ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান’- এই দীর্ঘ তালিকায় যুক্ত হল আরও একটি উনিশ বছরের দুঃসাহসিক যুবক চারুচন্দ্রের নাম। ক্ষুদিরাম বসু, কানাইলাল দত্ত, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর পর তিনিই ছিলেন চতুর্থ বাঙালি বিপ্লবী, যিনি ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে দেশবাসীর কাছে মৃত্যুঞ্জয় হয়ে রইলেন।

Related Articles