দেশে প্রথম আলিপুর চিড়িয়াখানায় বসল ‘ব্রেইল কোড’, দৃষ্টিহীনদের জন্য নয়া উদ্যোগ রাজ্যের
'Braille Code', the state's new initiative for the visually impaired, has been installed in Alipore Zoo, the first in the country

The Truth Of Bengal : কথায় বলে অন্ধের কিবা দিন কিবা রাত! কিন্তু তাই বলে কি তাদের পড়াশোনা করতে নেই? কিংবা কোথাও বেড়াতে গেলে সেখানকার দৃশ্য সম্পর্কে জানতে নেই? হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। তাই শুধুমাত্র তাদের কথা মাথায় রেখে এই প্রথম দেশের মধ্যে আলিপুর চিড়িয়াখানায় বসানো হল ব্রেইল কোড। মূলত যে সমস্ত ব্যক্তিরা চোখে ভালো করে দেখতে পান না বা অস্পষ্ট দেখেন তাদের আঁধার দুনিয়াকে কিছুটা হলেও অনুভূতির মাধ্যমে দৃশ্যমান করে গড়ে তোলার জন্যই এই পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার।
ব্রেইল কোড কী?
দৃষ্টিহীন ও স্বল্পদৃষ্টিজনিতদের জন্য লেখাপড়া ও যোগাযোগের বিশেষ পদ্ধতির নাম ব্রেইল। এর আবিষ্কারক হলেন লুইস ব্রেইল। ব্রেইন কোড হল এক বিশেষ পদ্ধতি যেখানে নেভিগেশন করে দৃষ্টিহীনদের কোন বিষয় সম্পর্কে বোঝানো হয় বা তথ্য নিরূপণ করা থাকে।
দৃষ্টিহীন পর্যটকদের জন্য এক নতুন উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। আলিপুর চিড়িয়াখানায় বসানো হল ব্রেইল কোড। আর তার শুভ উদ্বোধন করেন রাজ্যের বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। যে সমস্ত দৃষ্টিহীনরা কোথাও বেড়াতে গেলে শুধুমাত্র সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনুভূতির মাধ্যমে উপভোগ করেন কিন্তু কোন তথ্য হয়ত তেমনভাবে জানতে পারতেন না তাদের জন্য এনক্লোজার এর গায়ে বসানো হল ব্রেইল কোড। এই ব্রেইল কোডের মধ্যে লেখা থাকবে ওই স্থানটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিবরণ। তবে দেশের মধ্যে আলিপুর চিড়িয়াখানাতেই এই প্রথম বসানো হল ব্রেইল কোড। অর্থাৎ এরপর থেকে দৃষ্টিহীনরা শুধু মাত্র ব্রেইল কোডে স্পর্শ করে বুঝতে পারবেন নানান রকমের পশুদের বিবরণ।
জানা যায়, গত রবিবার অরণ্য সপ্তাহের শুরুর দিন ছিল। সেই দিনেই বনমহোৎসবের আমেজে আলিপুর চিড়িয়াখানায় ছিল সাজো সাজো রব। আর এই শুভ দিনেই স্বয়ং বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা নিজে আলিপুর চিড়িয়াখানায় গিয়ে দৃষ্টিহীন শিশু কিশোরদের সঙ্গে নিয়ে ব্রেইল কোডের উদ্বোধন করেন। ঐদিন উপস্থিত ছিলেন দপ্তরের একাধিক আধিকারিক ও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সবমিলিয়ে প্রায় ২১ টি এনক্লোজারে ব্রেইল কোড বসানো হয়েছে। এরপর পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে দার্জিলিং চিড়িয়াখানা, শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্ক সহ রাজ্যের সর্বত্র বসানো হবে এই ব্রেইল কোড। এদিন বনমন্ত্রী জানান, ” আমি তাঁদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, এতে কি কিছু সুবিধা হল? তাঁরা বললেন, এতদিন লোকে বলত, আমরা শুনতাম। কিন্তু সেটা বেশিদিন মনে থাকে না। এবার থেকে হাতে ছুঁয়ে দেখব। তাতে মনে থাকবে বেশিদিন।” নিজের ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে মন্ত্রী বলেন, “ছোটবেলায় আমাদের কোনও কিছু পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা লিখতেও বলা হত। তাতে সেটা বেশি করে মনে থাকত। চিড়িয়াখানায় দৃষ্টিহীনদের জন্য এই ভাবনার কারণও একই।”
এর আগে রাজ্য বা ভিন রাজ্যে এই ধরনের ব্রেইল কোড দেখা গিয়েছে চিড়িয়াখানা বা নেচার ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টারে মূলত বিশেষ দিকনির্দেশের জন্য। তবে পশুদের সম্পর্কে জানতে ব্রেইল কোড বসানো হয়তো এই প্রথম, যেটা বানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল আই ব্যাঙ্ক। দেশের মধ্যে প্রথম আলিপুর চিড়িয়াখানাতে এটি বসানো হয়েছে। তবে পরবর্তীকালে এটি দার্জিলিং চিড়িয়াখানা, শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্ক-সহ রাজ্যের সর্বত্র বসানো হবে।