
The Truth of Bengal, Purnendu Banerjee: তিন দিনেই আড়াইশো কোটি ছুঁয়ে ফেলেছে শিহরুখ খান অভিনীত ছবি জওয়ান। শাহরুখের পাশাপাশি উঠে এসেছে এই ছবির পরিচালক অ্যাটলির নাম এবং ছবি ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরার অনিরুদ্ধের নাম। নেটনাগরিকরা দাবি করছেন, জওয়ান শুধু সুপার ডুপার হিটই নয়, এমন এক মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলেছে যাকে অতিক্রম করা আগামী দিনে যে কোনও ছবির ক্ষেত্রেই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণ এখন একটা নামই তোলপাড় তুলছে জওয়ান। এমনকী এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। যে দেশের জাতীয় ভাষা বাংলা, সেই দেশে একটি হিন্দি ছবি নিয়ে এতো উন্মাদনা আগে দেখা যায়নি। এখন প্রশ্ন এই ছবির মধ্যে এমন কী বিষয়বস্তু আছে, যা আগে কেউ দেখেনি! আর এতো উন্মাদনার কারণইবা কী?
জওয়ান জ্বরে আক্রান্ত উত্তর থেকে দক্ষিণ
সম্ভবত এই প্রথম কোনও ছবি, কলকাতার বুকে যার শো শুরু হয়েছে ভোরে। এবং সেই শে দেখেছেন কলকাতার মানুষ। এবং দেখার পরেই তাঁদের অধিকাংশের প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘সব শেষ, সব শেষ, সমস্ত রেকর্ড চুরমার করে দিয়েছেন অ্যাটলি এবং শাহরুখ খান’। এমন এক মাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে ছবিটিকে যা এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না। স্পেশাল এফেক্টস, ক্যামেরা, লাইট, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, সবেতেই একশোয় একশো সর্বপরি কিং খান যেন দৈত্যাকার শক্তি নিয়ে হল কাঁপাতে ফিরে এসেছে।
পুরো ছবি দেখার পর, দর্শকদের ঘোর কাটতেই সময় লেগে যাচ্ছে কয়েক ঘণ্টা। অনেকে আবার ছবিটি দেখেছেন একবার দুবার তিনবারও। কলকাতার পাশাপাশি, বাংলাদেশেও ব্যাপক প্রসংশা পেয়েছে এই ছবি, ওই দেশের নেট নাগরিকদের মত, টলিউড ও বলিউডের এতো ভালো মিশ্রণ আগে কোনও ছবিতে ধরা পড়েনি। এতো গেল ছবি কথা, আসলে ভালো লাগার পিছনে রয়েছে অন্য রহস্য, আর সেই রহস্যও উঠে এসেছে, সোশ্যাল মিডিয়াতেই। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পরেই, একটা অংশ থেকে এই ছবির বিরোধিতা শুরু হয়েছে।
সক্রিয় ‘জওয়ানের শত্রুরা’?
জওয়ান ছবির আগে হল কাঁপিয়েছিল পাঠান ছবি। সেই সময়ও একটা অংশ ময়দানে নেমেছিল এই ছবির বয়কট ক্যাম্পেনে। আসলে খান ব্রাদার্সদের ছবি বাজারে এলেই এই অংশ সোশ্যাল মিডিয়াতে হাইপার অ্যাক্টিভ হয়ে যায়। যদিও, তাদের প্রচেষ্টাকে চুরমার করে, বক্স অফিস কাঁপিয়ে ঢালাও ব্যবসা করে ছবিগুলি। জওয়ান ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়। গত তিনদিনের অঙ্কই বলে দিয়েছে ছবি দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে অপ্ররিরোধ্য ভাবে। কিন্তু পাঠান বা অন্যান্য ছবিতে সেভাবে যে প্রশ্ন ওঠেনি জওয়ানের ক্ষেত্রে এবার সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন হল, এই ছবিকি অত্যন্ত সচতুরভাবে রাজনীতির রঙে রাঙানো হয়েছে? নাকি স্রেফ কাকতালীয় ঘটনা? বা পুরোটাই সত্যিই কাল্পনিক, ?যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই?
মনোরঞ্জনের মোড়কে রাজনীতির সমীকরণ?
না ছবির কাহিনী এখানে বলবো না, কিন্তু কিছু দৃশ্যপটের কথা এই প্রতিবেদনে বলা হবে, যাকে নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। গল্পের কাহিনী, আরও পাঁশটি গল্পের মতোই। সেটি হল, বিক্রম রাঠোর নামে এক সেনা অফিসার একটি যুদ্ধে গিয়ে ২৭জন সহকর্মীকে হারিয়েছিলেন। কারণটা ছিল, সেনা জওয়ানরা যে বন্দুক নিয়ে গিয়েছিলেন, সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে লড়াইয়ের সময় সেই বন্দুক কাজ করেনি। ফলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গুলি খেতে হয়েছিল। এরপরেই সেই আর্মস ডিলারের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয় বিক্রম রাঠোরের। এরপর ঘটনাচক্রে, রাজনৈতিকনেতা, আমলা, ও অসাধু ব্যবসায়ীদের আঁতাত নজরে আসে। ছবিতে তারই প্রতিশোধ নেওয়া হয়। ছবির মধ্যে একটি ঘটনা দেখানো হয়।
যেখানে একটি হাসপাতালে এক চিকিৎসক বেশ কিছু শিশুদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, এবং হাসপাতালে সেই সময় অক্সিজেনের অভাব। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের ফোন করেও কোনও রকম সাহায্য পাচ্ছে না ওই চিকিৎসক। অগত্যা অক্সিজেন সংগ্রহের জন্য তিনি নিজেই বেরোচ্ছেন। অবশেষে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে শিশুমৃত্যুর দায় চাপানো হয় ওই চিকিৎসকের উপরেই। ঘটনার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের শিশুমৃত্যুর ঘটনা। পাশাপাশি যে আর্ম ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন বিক্রম রাঠোর। সেই একটা সময় বড় শিল্পপতি হয়ে ওঠে। তারই বিপুল অঙ্কের ঋণ মকুব করে দেয় সরকার। এই ঋণ মকুবের ঘটনাটিও মেলে বিজয় মালিয়ার সঙ্গে।
এমন কিছু ঘটনাকে তুলে ধরার পাশাপাশি, ছবিতে সরাসরি বার্তা দেওয়া হয়, আপনি এমন নেতাদের বাছুন যে ধর্ম, বর্ণের পরিবর্তে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবে আপনার পাশে দাঁড়াবে।
বিতর্ক দানা বেঁধেছে এখান থেকেই। একটি গোষ্ঠী ফের সক্রিয় হয়েছে জওয়ানের বিরোধিতায়। এখন প্রশ্ন, এই গোষ্ঠী কি শুধুমাত্র খান ব্রাদার্সের ছবির ক্ষেত্রেই বিরোধিতা শুরু করেছে, নাকি এই চিত্রনাট্যে রয়েছে অন্য লিঙ্ক? হ্যাঁ আন্ডারকারেন্ট লিঙ্ক রয়েছে। একাংশ মনে করছে, এই ছবি তৈরি করা হয়েছে, INDIA জোটের হয়ে কথা বলতে, এবং সুপরিকল্পিতভাবে এই ছবির বিষয়বস্তুতে ঢোকানো হয়েছে, শিল্পপতির ঋণ মকুবের ঘটনা। সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে আর্মস ঘোটালা। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মারাত্ম গাফিলতির কথা। সর্বপরি এই ছবিতে কোনও বড় মাপের নেতা বা আমলাকে ভিলেন হিসেবে দেখানো হয়নি, দেখানো হয়েছে একজন অসাধু শিল্পপতিকেই।
রাজনীতির পাটিগণিতে যুক্তির সমীকরণ
এবার আসা যাক এই প্রতিবেদনের ক্লাইম্যাক্স পর্বে। ছবিটি প্রযোজনা করেছে রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট অর্থাৎ শাহরুখ খানের কোম্পানি। আর ছবিটি ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্ব নিয়েছে, যশরাজ ফিল্মস, রেড জায়েন্ট মুভিস, এসভিএফ, পেন স্টুডিও এবং শ্রী ভেঙ্কটেশ্বরা ক্রিয়েশনস। আর এই ডিস্ট্রিবিউটারদের তালিকায় এমন একটি নাম রয়েছে, যাঁকে ঘিরেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সেটি হল রেড জায়েন্ট মুভিস। এই সংস্থার মালিক হলেন, তামিলনাড়ুর ক্রীড়ামন্ত্রী এবং ব্যবসায়ী উদয়নিধি স্ট্যালিন। অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের পুত্র। যিনি অতি সম্প্রতি হিন্দু ধর্মকে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার সঙ্গে তুলনা করে রোষের মুখে পড়েছিলেন।
এই সমস্ত সূত্রকে এক করে, গল্পের গরুকে গাছে না চড়িয়ে একদম শাটল স্পেসে চাপিয়ে মহাকাশে পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। ২৪-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে, একটি মনোরঞ্জনে ভুরপুর ছবির মধ্যে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে। তাঁদের মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, বয়কট ক্যাম্পেনের পরেও, বক্স অফিসে যেভাবে হড়পা বান ডেকে আনছে জওয়ান ছবি, সেইভাবে, রাজনীতির হাওয়া ঘুরে যাবে নাতো? উত্তর মিলবে চব্বিশে। The Truth of Bengal: