অফবিট

পুরনো জামাকাপড় ও ছিট কাপড় দিয়ে গরিব শিশুদের জন্য নতুন জামা বানান তনয়

Katran Foundation

The Truth of Bengal, Mou Basu: পুরনো জামাকাপড় এখন গোটা পৃথিবীর মাথা ব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা পৃথিবীই এখন ভীষণ ভাবে চিন্তিত দূষণের মূল কারণ কার্বন নিঃসারণ বা কার্বন এমিশন নিয়ে। গোটা বিশ্বে যত পরিমাণ কার্বন নিঃসারণ হয় তার ১০%-র পেছনে রয়েছে বয়নশিল্পের ভূমিকা। গোটা বিশ্বে বৃহত্তম বয়নশিল্প হচ্ছে ভারতের বাজার। এদেশের অসংখ্য মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রেডিমেড জামাকাপড় তৈরির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু পুরনোই হোক কিংবা জামাকাপড় তৈরির সময় যে ছিট কাপড় বেঁচে যায় তা ডাঁই হয়ে পড়ে থেকে দূষণ সৃষ্টি করছে। প্রতি বছর ভারতে ৭,৭৯৩ কিলো টন জামাকাপড় নষ্ট হয়। ফ্যাশন প্রতিদিন বদলে যায়।

তাই আজ যা ডিজাইন হটকেকের মতো বিক্রি হচ্ছে কাল তাই চলে যাচ্ছে বাতিলের দলে। তাই গোটা পৃথিবীকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে কাপড়ের রিসাইক্লিং করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দূষণের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে ও গরিব শিশুদের জন্য নতুন জামাকাপড় তৈরি করতে এক অভিনব ভাবনা ভেবেছেন কলকাতার তরুণ তনয় জৈন। বছর ১৮-র তনয় কাপড়ের বর্জ্য অর্থাৎ ফেলে দেওয়া কাপড়চোপড়, কাপড়ের ছাঁট রিসাইকল করে ব্র্যান্ড নিউ জামাকাপড় তৈরি করেন। নতুনভাবে তৈরি সে সব জামাকাপড় পুনর্ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে। সেই সব জামাকাপড় গরিব শিশুদের বিনামূল্যে বিতরণ করেন তনয়।

নিজেদের পারিবারিক বস্ত্রের ব্যবসা হওয়ায় খুব কাছ থেকে তনয় দেখেছেন কত পরিমাণে কাপড়চোপড় নষ্ট হয়। সে জন্য পরিবেশ বাঁচাতে বিশেষ উদ্যোগী হন তনয়। ২০১৮ সালে Katran Foundation নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন তনয় আর তাঁর কয়েকজন বন্ধু। তনয় আর তাঁর বন্ধুরা মিলে ফেলে দেওয়া কাপড়চোপড় ও কাপড়ের ছাঁট রিসাইকল করে নতুন জামাকাপড় তৈরি করেন। বিভিন্ন রেডিমেড জামাকাপড় তৈরির কারখানা থেকে এসব বাতিল কাপড়চোপড় জোগাড় করে তাকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলেন তনয়রা। গরিব শিশুদের বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় সে সব জামাকাপড়।

কেন হঠাৎ এমন অভিনব ভাবনা মাথায় এল তনয়ের? বছর ১৮-র ঝকঝকে তরুণ তনয় জৈন জানান, আমরা দেখেছি শাড়ি বা লেহেঙ্গার মতো পোশাক তৈরি করতে গেলে প্রচুর পরিমাণে কাপড়ের ছাঁট বেঁচে যায়। সেগুলো এমনিতে ডাঁই করে ফেলে দেওয়া হয়। আমি ও আমার বন্ধুরা মিলে ঠিক করি বাতিল জিনিস দিয়েই নতুন রূপ দেওয়া হবে। আমাদের ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিভিন্ন পোশাক তৈরির সংস্থাই। জামাকাপড় রিসাইকল করতে হলে ক্রেতা এবং বিক্রেতা, সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।’

তনয়দের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে একদিকে যেমন গরিব শিশুরা নতুন জামাকাপড় পরতে পারছে তেমনই প্রান্তিক গরিব দর্জিরাও জামাকাপড় তৈরি করে কিছু অর্থোপার্জন করতে পাচ্ছেন। ৪-১১ বছর বয়সি গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য পোশাক তৈরি করে তনয়দের Katran Foundation। এখনো পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি গরিব শিশুদের বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে নতুন পোশাক। বাংলা ছাড়াও ওড়িশা ও অসমেও প্রায় ৪০টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে এই পোশাক বিতরণ করা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে ফেস মাস্ক তৈরি করে তাও বিতরণ করা হয়।