Hindu Scriptures: শ্রুতি ও স্মৃতিশাস্ত্র কী?
শ্রুতি ধ্রুব; অর্থাৎ, স্থান-কাল-পাত্র-এর ওপর নির্ভর করে শ্রুতির কোনওরূপ পরিবর্তন হয় না।
সুদীপ চন্দ্র হালদার: শ্রুতি বলতে পবিত্র বেদকে বোঝায়। পবিত্র বেদকে অধ্যয়নের জন্য মোট ১১৮০টি শাখা-প্রশাখায় প্রাচীন শাস্ত্রীয় পণ্ডিতেরা বিভক্ত করেছিলেন (Hindu Scriptures)। তাই বিশ্বাস করা হয় মোট উপনিষদের সংখ্যাও ১১৮০ খানা। বর্তমানে, স্বতন্ত্র ভাবে, ১১টি উপনিষদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বাকিগুলো পবিত্র বেদেই লীন হয়েছে।
শ্রুতি ধ্রুব; অর্থাৎ, স্থান-কাল-পাত্র-এর ওপর নির্ভর করে শ্রুতির কোনওরূপ পরিবর্তন হয় না। শ্রুতির যে কোনও শাস্ত্রীয় নির্দেশনা সত্য, সুন্দর, শ্বাশত, সনাতন, হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ এবং তর্কাতীত ভাবে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত।
অন্যদিকে, শ্রুতি ব্যতিরেকে আমাদের অন্য সকল প্রামাণিক শাস্ত্র গ্রন্থকে স্মৃতিশাস্ত্রের আওতাভুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্মৃতিশাস্ত্র আমাদের প্রামাণিক শাস্ত্র গ্রন্থের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে, এই মহামূল্যবান গ্রন্থসমূহ আমাদের সম্পদ।
তবে, স্মৃতিশাস্ত্র স্থান-কাল-পাত্রের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনশীল তথা আপেক্ষিক। এটি ব্যক্তি বিশেষের ধারণ ক্ষমতা কিংবা গ্রহণ করার সক্ষমতার ওপর নির্ভর পরিবর্তনশীল (Hindu Scriptures)।
উদাহরণস্বরূপ, একজন অবতার/মহাপুরুষ/সিদ্ধপুরুষ/আধ্যাত্মিক ব্যক্তি একজন নিরক্ষর মানুষকে যে প্রক্রিয়ায় জাগতিক কিংবা আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেবেন, ঠিক একই প্রক্রিয়ায় একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারীকে দেবেন না। শিক্ষার উদ্দেশ্য অভিন্ন হলেও শেখানোর প্রক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, পাত্রের তফাতে।
ঠিক তেমনই, ইউরোপীয় একজন ব্যক্তিকে দেওয়া শিক্ষার প্রক্রিয়া আর ভারতীয় একজন ব্যক্তিকে দেওয়া শিক্ষার ধরন ভৌগোলিক স্থানভেদে ভিন্ন হতে পারে, উদ্দেশ্য অভিন্ন হলেও।
তদ্রূপ, সত্যযুগের একজন মানুষকে নৈতিক গল্প বা অন্য কোনও মাধ্যমে দেওয়া শিক্ষা কালের তফাতে কলিযুগের মানুষের জন্য প্রায়োগিক নাও হতে পারে।
অর্থাৎ, একই স্মৃতিশাস্ত্র কিংবা এর নির্দেশনা সব সময়ের জন্য প্রায়োগিক নাও হতে পারে, স্থান-কাল-পাত্রের তফাতে। কিন্তু, শ্রুতি সর্বদাই ধ্রুব; স্থান-কাল-পাত্র ভেদে শ্রুতির প্রায়োগিকতা অভিন্ন, অর্থাৎ, সর্ব ক্ষেত্রেই প্রাসঙ্গিক বলে শাস্ত্রীয় পণ্ডিতেরা উল্লেখ করেছেন (Hindu Scriptures)।
শাস্ত্রে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, ‘শ্রুতি-স্মৃতি বিরোধে তু শ্রুতিরেব গরীয়সী।’ অর্থাৎ, শ্রুতি এবং স্মৃতি শাস্ত্রে কখনও কোনও বিরোধ সৃষ্টি হলে, সাঙ্ঘর্ষিকতা সৃষ্টি হলে কিংবা বুঝতে অসুবিধা হলে শ্রুতির নির্দেশনা অবশ্যই শ্রেয়তম হিসেবে গ্রহণ করতে হবে-এটাই শাস্ত্রীয় নির্দেশনা বা অনুশাসন। আমাদের ত্রিবিধ বিঘ্নের শান্তি হোক।



