দেশ

রহস্যে ঘেরা পুরীর জগন্নাথ মন্দির, জানুন ইতিহাস

Puri's Jagannath Temple is surrounded by mystery, know its history

Truth Of Bengal: কথায় আছে ভারতের অন্তরাত্মা আছে তার মন্দিরমালায়। পূব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ সব খানেই দেবদেবী মাহাত্ম্য আর স্থান মহিমায় ভারতর প্রতিটি মন্দিরই যেন প্রচ্ছন্ন ভাবে দেবতাদের লীলাভূমি। যুগ যুগ ধরে ভক্তদের ভক্তি, নিষ্ঠা আর বিশ্বাসই এই মর্ত্যভূমিকে দেবভূমিতে পরিণত করেছে। আর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে স্থান, কাল, জন ভেদে নানা অলৌকিক কাহিনির বিস্তার। হু যুগ পেরিয়ে এই অলৌকিক গল্প ও কাহিনি আজ মিথে পরিণত হয়েছে। ভারতের বহু মন্দিরকে ঘিরে এমন অনেক অলৌকিক গল্প বা দেব মহিমার কাহিনি প্রচলিত আছে যা বোধ বা জ্ঞানের বাইরে। এমনই এক মন্দির হল পুরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দির। কত না গল্প, কত কাহিনি আর কত না রহস্য জড়িয়ে আছে পুরীর এই জগত্ বিখ্যাত মন্দিরকে ঘিরে।

কথায় বলে, কলির দেব জগন্নাথ। কলি যুগে তাই নীলাচলে প্রভুর মন্দিরে সবারই সচ্ছন্দ গতি। তাঁর হাত নেই, তবু পলকহীন বিশাল চোখ দিয়েই টানেন সবাইকে। সেজন্যই তাঁর আরেক নাম ‘চকাডলা’। এই বিশাল, অর্ন্তভেদী চোখই যুগ যুগ ধরে টেনে এনেছে ভক্তকুলকে মন্দির প্রাঙ্গনে। প্রভু যেমন বিরাটকায়-তাঁর থাকার স্থান বা মন্দিরটিও হবে তেমনই প্রকাণ্ড আর রহস্যময়।

আপাতদৃষ্টিতে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা- তিন দেব-দেবীর রূপ সনাতন হিন্দু রীতি থেকে আলাদা। সাধারণত দেখা যায়, পাথর, ধাতু বা মাটি দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে বিগ্রহের মূর্তি, কিন্তু জগন্নাথদেব কাঠ নির্মিত। জগন্নাথ দেব তাঁর বিচিত্র রূপ নিয়ে ভারতবর্ষের সব ধর্মের সব সম্প্রদায়ের নিজস্ব দেবতা হয়ে উঠেছেন। তিনি বৈষ্ণবের বিষ্ণু, শৈবের শিব, গাণপত্যের গণপতি, সূর্য উপাসকদের কাছে দিবাকর, শাক্তদের কাছে দক্ষিণা কালিকা। বৌদ্ধরাও তাঁকে বুদ্ধের অবতার বলে মানেন। জৈনরাও মনে করেন তিনি জৈন ধর্মের আদি প্রবর্তক ঋষভনাথ। কথিত তিনি রত্নবেদীতে বিষ্ণু, শয়নকালে শক্তি দক্ষিণা কালিকা ,গমনে রুদ্র, স্নানবেদীতে বিনায়ক ও রথে সূর্য।

জগন্নাথ দেবের মতোই বিচিত্র রূপের আধার পুরীর মন্দিরও। মন্দিরের একেবারে চূড়ায় যে পতাকাটি ওড়ে তা সব সময় বায়ুর বিপরীত দিক করে ওড়ে। কেন এটা হয় তার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। দ্বিতীয়ত, যেদিক থেকেই তাকান চূড়ায় থাকা সূদর্শনচক্রকে একই রকম দেখবেন। মনে হবে ২০ ফুট উঁচু আর ১ টন ওজনের সূদর্শনচক্র আপনার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে।

নো ফ্লাই জোন না হলেও কোনো এক আধ্যাত্মিক শক্তির জোরেই কখনো মন্দিরের ওপর দিয়ে কোনো পাখি বা বিমান ওড়ে না। দিনের কোনো সময়ই ছায়া পড়ে না মন্দিরের। প্রতি দিন একজন পূজারী মন্দিরের দেওয়াল বেয়ে বেয়ে প্রায় ৪৫ তলা সমান মন্দিরের চূড়ায় উঠে পতাকা পাল্টে দেন। কোনো রকম সুরক্ষা সরঞ্জাম ছারা উঠতে হয়। মন্দির বানানোর শুরু থেকে এই নিয়ম চলে আসছে। মনে করা হয়। এই প্রথা কোনো দিন বাদ পড়লে ১৮ বছর মন্দির বন্ধ রাখতে হবে।

এদিকে, সম্প্রতি পুরীর শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের ওপর দিয়ে একটি একটি ঈগলের উড়ে যাওয়ার ভিডিও দেখে রীতিমতো শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। দাবি করা হয় যে, পুরীর মন্দিরের উপর দিয়ে কখনো উড়ে যায় না কোনো পাখি। তবে এবারে দেখা গেল যে, ‘পতিতপাবণ’ পতাকার মতো দেখতে কাপড়ের টুকরো নিয়ে উড়ে যাচ্ছে সেই ঈগল। আর শুধু যেন উড়ছেই না, মন্দিরের চারপাশ প্রদক্ষিণ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন যে পাখিটি প্রথমে শ্রী মন্দিরের পশ্চিম দরজার কাছে দেখা যায় এবং কাপড়টি নিয়ে উড়ে যাওয়ার পর মন্দিরের উপরের চূড়ান্ত নীল চক্রের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। তারপর সে পার্শ্ববর্তী সমুদ্রের দিকে উড়ে চলে যায় এবং ধীরে ধীরে দিগন্তে অদৃশ্য হয়ে যায়। তবে মন্দির কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে, ঈগলটি দেখা যাওয়ার সময় মূল পতাকা অক্ষত ছিল, কাপড়টি কোথাকার সেই খোঁজ তাঁদের কাছে নেই। যাই হোক না কেন এত কাহিনি এত মিথ নিয়ে এখনও সমান আকর্ষক পুরুষোত্তম জগন্নাথ।

Related Articles