খুচরোর সমস্যা, বাসভাড়ায় ডিজিটাল পেমেন্ট চালু করলেন বাসের মালিক
Retailers' problem, bus owner introduces digital payment for bus fare

Truth of Bengal: সৌতিক চক্রবর্তী, বোলপুর: ‘দাদা সাউগ্রাম যাব। কত ভাড়া?’ কন্ডাক্টরের উত্তর, ‘৪৫ টাকা’। বাসযাত্রী একটি ১০০ টাকার নোট বাড়িয়ে দিতেই মেজাজ গরম কন্ডাক্টরের। খেঁকিয়ে উঠলেন, ‘খুচরো নেই। আমার খুচরোর গাছ আছে নাকি? বাড়ি থেকে খুচরো আনেন না কেন?’
এরকম কড়া বাদানুবাদের চিত্র প্রায় প্রতিটি বাসেই সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুচরো নিয়ে বাসযাত্রীদের সঙ্গে কন্ডাক্টরের ঠান্ডা-গরম দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। সেই সমস্যা মেটাতে অভিনব উদ্যোগ নিলেন বোলপুরের এক বাস মালিক। বোলপুর-পাঁচথুপি রুটের বাসে যাত্রীদের জন্য তিনি চালু করেছেন ডিজিটাল মাধ্যমে টিকিট কেনার ও ভাড়ার মেটানোর সুবিধা। কিউআরকোডে স্ক্যান করলেই কেল্লা ফতে। খুচরো করা নিয়ে অশান্তির দিন শেষ। যাত্রী, কন্ডাক্টার উভয় পক্ষেরই স্বস্তি। নতুন এই ব্যবস্থায় যাত্রীদের মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই বাসে যাতায়াতকারী যাত্রীরা খুচরো টাকা নিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতেন। প্রায়শই কন্ডাক্টরদের কাছে পর্যাপ্ত খুচরো না থাকায় যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হতো। কখনও কখনও টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও সৃষ্টি হতো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে এগিয়ে এলেন বোলপুর-পাঁচথুপি রুটের বাস মালিক দিলীপ সাউ। মালিক হয়েও নিজেই এখন কন্ডাক্টারের ভূমিকায়। তাই খুচরোর ঝক্কি ঝামেলা থেকে বাঁচতে তিনি ইউপিআই মাধ্যমের জনপ্রিয় ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিয়েছেন। যাত্রীরা সহজেই তাদের স্মার্টফোনে কিউআর কোড স্ক্যান করে অথবা সরাসরি কন্ডাক্টরের ফোন নম্বরে ভাড়ার টাকা পরিশোধ করতে পারছেন। এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন
কন্ডাক্টরদের খুচরা টাকা রাখার ঝামেলা কমেছে, তেমনই যাত্রীরাও কোনও রকম বাড়তি চিন্তা ছাড়াই সঠিক ভাড়া পরিশোধ করতে পারছেন। এই নতুন সুবিধা চালু হওয়ার পর যাত্রীদের অনেকেই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। দৈনন্দিন যাতায়াতের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত সহায়ক বলে সকলেই মেনে নিয়েছেন।
বোলপুর থেকে পাঁচথুপি রুটের এই বাস সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ছাড়ে। এরপর কঙ্কালীতলা-লাভপুর-মুর্শিদাবাদের মান্দ্রা-সুন্দরপুর হয়ে ডাকবাংলো পাঁচথুপি মোড়ে বেলা ১২টা নাগাদ পৌঁছয়। ফের সাড়ে বারোটায় সেখান থেকে ছেড়ে বোলপুরে পৌঁছয় তিনটে নাগাদ। এভাবে সন্ধ্যা থেকে রাতেও বাসটি চলাচল করে। বোলপুর থেকে কঙ্কালীতলার ভাড়া ১৫ টাকা, লাভপুর ৩০ টাকা, মান্দ্রা ৫০ টাকা ও সর্বশেষ পাঁচথুপির ভাড়া ৬০ টাকা। কিন্তু খুচরো নিয়ে দিলীপবাবু প্রতিদিন অশান্তিতে জেরবার হতেন। তিনি বলেন, বাবা কাকার আমল থেকেই পরিবারে বাসের ব্যবসা। এখন ব্যবসার বেহাল অবস্থা। তাই মালিক হয়েও নিজেই কন্ডাক্টরের ভূমিকা পালন করছি। খুচরোর সমাধানে সত্যিই স্বস্তি পেয়েছি। হিসাব রাখতেও সুবিধা হচ্ছে।নিত্যযাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন লাভপুরের ব্লক ইনফরমেটিক্স অফিসার অঙ্কুর দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, খুচরো টাকা নিয়ে প্রায় দিনই সমস্যা হতো। কখনও আমার কাছে, আবার কখনও কন্ডাক্টারের কাছে খুচরা থাকত না। এখন ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা হওয়ায় সেই ঝামেলা একদম মিটে গেছে। সময়োপযোগী উদ্যোগ। এই অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত যদি সব বাসে চালু করা যায় তাহলে গণপরিবহণে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।