নির্বাচনের আগে অস্তিত্ব–সঙ্কটে ‘ইন্ডিয়া’ জোট
'India' alliance in existential crisis before elections

Truth Of Bengal: দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অস্তিত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। বিজেপিকে রুখতে যে জোট গঠিত হয়েছিল, দিল্লিতে তারই দুই শরিক কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি (আপ) এই ভোটে একে অপরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ফলে লড়াইয়ের চরিত্র হয়েছে ত্রিমুখী।
এই পরিস্থিতিতে ‘ইন্ডিয়া’ জোট থাকা উচিত কি না, উঠে গিয়েছে সেই প্রশ্ন। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছেন, ওই জোট যদি লোকসভা ভোটে লড়াইয়ের জন্য তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে এখনই তা ভেঙে দেওয়া হোক।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেছিলেন, ‘দুঃখের বিষয়, জোটের কোনও বৈঠক ডাকা হচ্ছে না। জোটের নেতৃত্ব কার হাতে, সেই বিষয়ও স্পষ্ট নয়। জোটের লক্ষ্য কী, আমাদের অস্তিত্বই–বা কী, কিছুই পরিষ্কার নয়। জোট যখন গড়া হয়েছিল, তখন তা যে শুধু লোকসভা ভোটের জন্য হয়েছিল, এমন কিছু আমার জানা নেই। তবে শুধু লোকসভা ভোটে লড়াইয়ের জন্য যদি জোট তৈরি করা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি গুটিয়ে ফেলা হোক।’
লোকসভা ভোটে সম্মিলিতভাবে বিজেপির বিরোধিতা করতে ‘ইন্ডিয়া’ জোট তৈরি হলেও শুরু থেকেই নানা প্রশ্ন উঠছিল। কিছু বিরোধিতা, কিছুটা অস্বস্তি সত্ত্বেও কংগ্রেসের নেতৃত্ব অধিকাংশ শরিক মেনে নিয়েছিল। কিন্তু প্রথম ধাক্কা আসে জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারের দিক থেকে। জোট ছেড়ে বেরিয়ে তিনি বিজেপির হাত ধরেন। নীতিগতভাবে সবাই বিজেপি বিরোধিতায় রাজি থাকলেও রাজ্যে রাজ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে শরিকদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়।
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতায় তৃণমূল কংগ্রেস রাজি হয়নি। বাংলায় কংগ্রেস ও সিপিএম জোট বেঁধে ভোটে লড়ে। দিল্লি, হরিয়ানা ও চণ্ডীগড়ে আপের সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা হলেও পঞ্জাবে দুই দল একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে। রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হয়নি। যদিও উত্তর প্রদেশে দুই দল একজোট হয়। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস, এনসিপি (শরদ) ও উদ্ধব সেনার মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়েও টানাপোড়েন চলে। তবে বিজেপির আসনসংখ্যা ২৪০–এ থেমে যাওয়া ও শরিক নির্ভরতায় নরেন্দ্র মোদির সরকার গঠন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকি অসন্তোষ চাপা দেয়।
লোকসভা ভোটের পাঁচ মাসের মাথায় মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা বিধানসভায় বিজেপির নিরঙ্কুশ জয় এবং জম্মুতে কংগ্রেসের বিস্ময়কর ব্যর্থতা জোটের ছাইচাপা অসন্তোষ দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে। উঠে যায় কংগ্রেসের রাজনীতি ও তার নেতৃত্বদানের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন প্রকাশ্যেই। দিল্লির ভোটে সেই প্রশ্ন নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে কংগ্রেস ও আপ দুই যুযুধান শিবিরে পরিণত হওয়ায়। পরিস্থিতি এমনই যে, কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলট বলেছেন, দিল্লিতে আপ তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ। পাল্টা জবাব দিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, তাঁদের হারাতে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেস হাত মিলিয়েছে।
দিল্লির ভোটে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের দুই শরিক তৃণমূল কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির সমর্থন আপ পাচ্ছে। ঝাড়খণ্ডের শাসক দল জেএমএম আবার কংগ্রেসের সমর্থনে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, দিল্লিতে তাঁদের কোনও লেনাদেনা নেই। পাশাপাশি ‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে মন্তব্য করে জোটের অস্তিত্ব রাখার যৌক্তিকতাকে তিনি দাঁড় করিয়েছেন প্রশ্নের মুখে। বিজেপি এবার দিল্লি দখল করতে পারুক না পারুক, এই বেহাল ‘ইন্ডিয়া’য় নিশ্চিতভাবেই তারা উৎফুল্ল।