
Truth Of Bengal: অচিন্ত্যরতন দেবতীৰ্থ: বিয়ের পূর্বে পাত্রপাত্রী কিছু পরীক্ষা করিয়ে নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রোগের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। রোগগুলি হল থ্যালাসেমিয়া, জন্ডিস, সিফিলিস, এইডস, সিকল-সেল ডিজিজ, হিমোফিলিয়া ইত্যাদি। বিয়ের পূর্বে অবশ্য করণীয় রক্ত পরীক্ষাগুলি হল ব্লাড গ্রুপিং এবং হিমোগ্লোবিন।
ব্লাডগ্রুপিং-এর প্রয়োজনীয়তা কী? মা যিনি হবেন তার রক্ত আর এইচ পজেটিভ না নেগেটিভ তা জানা জরুরি প্রয়োজন। মা যদি আর এইচ নেগেটিভ হন এবং বাবা যদি আর এইচ পজেটিভ হন এবং গর্ভস্থ সন্তানও যদি আর এইচ পজেটিভ হয় সমস্যা দেখা দেয়। এ অবস্থায় সন্তান জন্ডিস অর্থাৎ হাইড্রপস ফিটালিস, ইকটেরাস গ্রেভিস নিওনেটোরাম, কনজেনিটাল অ্যানিমিয়া অব দি নিউর্বোন নিয়ে জন্মাতে পারে। তবে প্রথমবার গর্ভধারণের সময় এই সমস্যা থাকে না। সাধারণত দ্বিতীয় সন্তানই আক্রান্ত হয় বেশি। তাই বিবাহের পূর্বে যে কোনও পাত্রী যদি রক্ত পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন যে তিনি আর এইচ নেগেটিভ, তা হলে তিনি আর এইচ পজেটিভ কোনও পাত্রকে বিবাহ নাও করতেও পারেন অথবা বিবাহ করলে সন্তান ধারণের সময় ডাক্তারবাবু পরামর্শ মতো অ্যান্টি ডি গ্লোবিউলিন ইনজেকশন নিয়ে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারেন।
থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে এবং চিকিৎসা শাস্ত্রে আজও এই রোগ আরোগ্য হয় না। থ্যালাসেমিয়া সন্তান জন্মরোধ একমাত্র বিয়ের পূর্বে পাত্রপাত্রীর রক্তের হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস পরীক্ষা দ্বারাই সম্ভব। পাত্রপাত্রী উভয়েই বাহক হলে তবেই সন্তান থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হয় এবং সে ক্ষেত্রে বিয়ে না হওয়াই উচিত। পাত্র বা পাত্রী একজন বাহক হলে অবশ্য সন্তানটির বাহক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
প্রশ্ন হল জ্যোতিষ এর প্রয়োজনীয়তা কী? ফলিত জ্যোতিষশাস্ত্রের আসল উদ্দেশ্য হল পরাবিদ্যা যাকে ব্রহ্মবিদ্যা বলা হয়ে থাকে, সেই মধুবিদ্যায় পৌঁছন অর্থাৎ শ্রেয়োলাভ করা। জ্যোতিষ একটি বেদাঙ্গ। ষড়দর্শন ও বেদাঙ্গের উদ্দেশ্যই হল শ্রেয়োলাভের পথ প্রদর্শক করা। বেদের অন্যান্য অঙ্গ অপেক্ষা জ্যোতিষশাস্ত্রেরই প্রাধান্য বেশি। কারণ ফলিত জ্যোতিষ প্রত্যক্ষ শাস্ত্র। জ্যোতিষ বেদের চক্ষু স্বরূপ এবং ভবিষ্যতের প্রকাশক। দেবর্ষি নারদ ও মহর্ষি গর্গ বলেছেন- জ্যোতিষের সাহায্য ব্যতীত মানব অন্ধবৎ- তার জীবন অন্ধকারময়।
নারায়ণের নিজস্ব শাস্ত্র নারদপঞ্চরাত্রে বলা হয়েছে- নিষেক। গর্ভাধানের অর্থাৎ জীবাত্মার মাতৃগর্ভে প্রবেশের সময়টি জাতকের সঠিক জন্মলগ্ন Infartilization of Ovam।
পূর্ব জন্মজিতং কর্মং শুভাশুভ ফলপ্রদম্। পুণ্যপাপ সমুদ্ভুতং গ্রহরূপেণ সংস্থিতং। মহাত্না পরাশরী হোরা। অর্থাৎ পূর্বপূর্ব জন্মের পুণ্য ও পাপ কর্ম দ্বারা অর্জিত শুভ ও অশুভ ফল বর্তমান জন্মে গ্রহরূপে রাশিচক্রে সংস্থিত হয়েছে। গ্রহগণ স্বাধীন নন। তাঁরা কর্মফলরূপী ঈশ্বর জীবাত্মা তথা আদ্যাশক্তির অধীন। মানুষকে তার ভবিষ্যতের নির্দেশ দেওয়ার জন্য যাতে সে নিজের ভাগ্যের অবস্থা বুঝতে পারে এবং সঠিক পথে চলতে পারে। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, অতীত জীবনের চিন্তা এবং কর্মরাশির ফল আমাদের এই জীবন।
‘স্ববর্ণে বিবাহই যুক্তিযুক্ত। কারণ অসবর্ণার পুত্র পিতাকে নিতান্ত অবসন্ন করে, উচ্চবর্ণের স্ত্রী নিম্নবর্ণের স্বামী হলে স্ত্রী ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে, নিম্নবর্ণের স্ত্রী হলে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই যক্ষারোগগ্রস্ত হতে পারে। বর্ণ সংস্করঃ মনু সংহিতা- ও নারদ সং-। বিষকন্যা বিবাহ করলে সংসারের অমঙ্গল হয়। সগোত্র ও সপিণ্ড মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। মনু, ভীষ্মদেব। পাত্রপাত্রী এক লগ্ন, এক রাশি, এক নক্ষত্র ও এক গণ রাজযোটক মিল হয়। বর্তমানে অত্যন্ত উদ্বেগজনক ভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বিবাহ বিচ্ছেদ একমাত্র বিয়ের পূর্বে পাত্রপাত্রীর যোটক বিচার দ্বারাই সম্ভব।
আমাদের দেশের শিক্ষিত মানুষ এখনও বিয়ের পূর্বে রক্ত পরীক্ষা ও যোটক বিচারকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেন না। তারা জানেন না যে রক্ত পরীক্ষা ও যোটক বিচার মাধ্যমে প্রকৃত রাজযোটক বিয়ে সম্ভব। এটাই শুভ বিবাহ। ভবিষ্যতে অশান্তির কারণ অশুদ্ধ বিবাহ।