
Truth of Bengal: বলছি মন মেজাজের কথা। ভুল বললাম। বলছি মনের মেজাজের কথা। হ্যাঁ, সেই তো আমাদের আসল রাজা। তাই না? না, এ কথা আমার নয়, মান্নাদে-র। বহু পুরনো মান্নাদে-র কণ্ঠে গাওয়া একটি অসাধারণ পংক্তি। কিন্তু কথা বলতে বলতে আমার চোখ কেনো ছোট হয়ে আসছে! তবে কি আমার চোখ খুব ক্লান্ত! আমার ঘুম পাচ্ছে কেন! ভীষণ ভীষণ ক্লান্ত কি আমি! এই যা কলমটাই তো পড়ে গেল। তার মানে কি আমি আমার এই লেখাটায় তেমন আনন্দ পাচ্ছি না! আরে কে যেন বলল, কিছু খেয়েছেন নাকি? না মহাশয়– আমি তোমাদের গঙ্গোপাধ্যায় নই। খাওয়ার তেমন টাকা পাই না। আর পেটের জন্যে খেলেই হল। জীবন অত সু-নীল নয়। সাধারণ খেয়েও বেশ আছি। ভুল বললাম বেঁচে আছি। আরে… ও কথা সবাই বলে। পেলে কে না খায়? কিছু জানেন না দেখছি- কে খায় না! সিম্পল উত্তর– যে চায় না। আরও কি আবোলতাবোল কথা। এই তো লেখকের অবস্থা। অন্য আরএকজনের আগমন।
দূর মশাই কী জানেন ওনার সম্পর্কে। আপনি জানেন ওনাকে? বিলকুল জানি। উনি জিনিয়াস। কতগুলি দৈনিকে লেখেন জানেন? ওসব কিছু রং চড়ানো হয় মহাশয়! আবার মসকরা করছেন। তা আপনাকে তো চিনলাম না। নতুন বুঝি! তা কি নাম? আমি মিষ্টি। মিষ্টি তো মুসলিম নাম হয় না। কি করে বুঝলেন আমি মুসলিম? ওই যে ‘বিলকুল’, ‘মসকরা’ শব্দ ব্যবহার করলেন। বুঝতে আর এতে কি কোনও অসুবিধা! জি না, আপনি জনাব ঠিক ধরেননি। তাহলে আপনি ‘জি’ বলেছেন, ‘জনাব’ বলছেন? আপনার মশাই অত ইন্টারেস্ট কিসের? সাহিত্যের কোনও জাত হয় না। তা সাহিত্যের সঙ্গে আপনার কী সম্পর্ক? মেয়েটি পড়েছে মহা বিপদে। ধরা তো সে পড়বেই মনে হচ্ছে। দেখা যাক কতক্ষণ চাপা যায়। তাও মনে মনে কি একটা ভেবে বলে আপনি জানেন বাংলা ভাষায় কত রকম অন্য ভাষার শব্দ এসে মিশেছে। মুসলিম, আরবি, ফারসি তুর্কি আরও কত কী? আমি জানি না। ওটা নজরুল সাহেব জানেন। আ… রে … আপনি তো জানা লোক মহাশয়। তবে তো নিজের পরিচয় দিতেই হয়। আমি লিমা। হ্যাঁ, আমি মুসলিম। ওদেশে। আর এখানে মিষ্টি। তবু ওনাকে এড়িয়ে যাওয়ার মরিয়া চেষ্টা। তবু তার দুই দেশে দুই নাম কেন হালকা মেজাজে আনমনে বলতে বলতেসটানহাজির সাহিত্যিকের ঘরে।
স্যর, ঘুমোচ্ছেন নাকি? – কে? ও…মিষ্টি! আয় আয়, বোস। ফ্লাইট ঠিক সময়ে এসেছে তাহলে। বাইরে কি বৃষ্টি পড়ছে?- পড়ছে? আমার জীবনেও জানিস খুব বৃষ্টি। কাকে বললো! তুই বুঝিস। জানিস, রবি ঠাকুরকেও বুঝত- ইন্দিরা ঠাকুরণ। ছিন্নপত্র পড়েছিস তো! ওই যে সৌন্দর্য সম্ভোগ তাকে বোঝে ক’জন! স্যর বাইরে ওই লোকটি কে? ওনার তো ভীষণ জ্ঞান দেখছি। বাহ বেশ বুঝেছিস তো! ও একটু অন্য রকম। কবি। বেশ ভাল লেখে। ও ওর মেজাজে বাঁচে। ওপরের তিনজনেই তিন রকম। ওরা ওদের মেজাজে বাঁচে। একজন নামজাদা সাহিত্যিক। একজন ভাল কবি। একজন সাহিত্যের তালিমে দেশ থেকে দেশান্তরে। শেষ জনের কথা বেশি খুলে বলা যাবে না। অবশ্য উনি খোলা খুলির মেজাজেই বাঁচেন।
আপনি ভাবছেন আমি কেবল সাহিত্য নিয়ে পড়লাম। বিষয়টা কিন্তু তা নয়। আমি সাহিত্য দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম মাত্র। কত কষ্টের মেজাজ তারা ধরে রেখে তাদের কাজ করে চলেছেন। কিভাবে, কেমন করে তাদের সুখ খুশির অনুভূতি তাদের শিল্পকলার মধ্যে তুলে ধরেছে। তাই তারা এত সাকসেস। যদি নাও হয় তবুও তাদের হারাবার কিছু নেই। কিভাবে বেঁচে থাকা, কিভাবে জীবনেরসঙ্গেই চলা সব মানুষই তা উপভোগ করে থাকেন। আমাদের অনেক মানুষ আছেন যারা কিনা মরে মরে বেঁচে আছেন। এমনটা না হলেও চলে। যা হচ্ছে ভাল হচ্ছে, আর যা হবে তা ভালই হবে এ তো আমরা ভালভাবেই জানি। তবু আমাদের যেন দুঃখের কোনও শেষ নেই। আমরা চেষ্টা না করেই বড্ড হতাশ। আমাদের ভাবেরসঙ্গেভাষার কোনও মিল নেই, কাজেরসঙ্গে মিল নেই ভালবাসার। অথচ আমরা কী ভীষণ আশা করে বসে আছি আমরা সাকসেস পাবো। কিন্তু তেমনটা হয় না। ভুল বললাম। সম্ভব নয়। আসলে আমরা যা পারি না তা-ই করি। আর যা পারি তা করিই না। আর অভাবের নাম চেষ্টা।
আর এই চেষ্টা করলে কি না হয় তা তো কমবেশি আমরা সবাই জানি। তবে যা করতে হবে তা ভালবাসায়। আর কাজের প্রতি ভালবাসা থাকলে আপনার মেজাজটা এমনিতে চাঙ্গা হয়ে যাবে। কী করবেন বলুন না মেজাজটা তো ধরে রাখতে বলছি কিন্তু হয়তো আপনি দেখলেন যে শত চেষ্টাতেও আপনি তা ধরে রাখতে পারলেন না। কোনও না কোনও কারণে ঠিক মেজাজটা আপনার কোনওভাবেই অনুকূলে নেই। তখন আপনার আর কোনও কিছু ভাল লাগছে না। আপনি চেষ্টা করলেও কোনওভাবেই ভাল কাজে মন বসাতে পারছেন না। কত দুঃখ আছে জীবনে। কত কেউ তা চেপে রেখেছেন। কত ডাক্তার আছেন যারা তার ভরপুর চিকিৎসা করছেন। এরমধ্যে অনেকেই পারছেন। আবার যারা পারছেন না তারা গুমরে মরছেন। কাউকে কিছু জানতে বুঝতে দিচ্ছেন না। তাদের মেজাজটার খবর রাখছেন না কেউ। আপনি হয়তো ভাবছেন সব সময় সব কাজে ভাল মেজাজটা ধরে রাখা সম্ভব নয়। মানলাম সে কথা। কিন্তু আমাদের যেটুকু ভাল আছে তাকে আমাদের ঠিক কাজে লাগালে আমাদের কোনও ক্ষতি হাওয়ার সম্ভবনা নেই। হয়ত বলবেন বলা আর হাওয়ার মধ্য এক পৃথিবী ফারাক। মানছি সে কথা। কিন্তু তাও মেজাজটাকে ধরে রাখা যায়। চলুন তবে কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতাতে পায়চারি করে আসি।
ছেলেটি উচ্চবিত্ত। মেধাবি। পড়া শেষ। বাবার কারবারে মন। বাবাও এতদিনে পেল যোগ্য সঙ্গী। সর্বদা হাসিমুখ। কারবার বড় হয়। ছেলে সর্বদা ব্যস্ত কাজে। যত কাজ, তত টাকা। এক ছেলে। বাড়িতে চারটি কাজের লোক। বহু অনুরোধে এবার বিয়ে। বউ এল। চাকরিরতা। বিশাল ইনকাম। একটি বাচ্চা হল। ফুটফুটে। এখন চার সাড়ে চার হবে। মানে দারুণ লাইফ। কিন্তু এতটামসৃণ কিছু নয় এই দুনিয়ায়। আড়ালের গল্প জানতে উৎসাহী হলাম। জানলাম বিয়ের সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে চার বছর ইয়েস, নো ছাড়া কথা হয়নি, অন্য সম্পর্ক তো দূর। এরপর ইচ্ছে করেই কাজ বাড়ায়, নইলে রাতের গভীরে ফেরা। আরও না বলা কত কথা আছে। আড়চোখে বউয়ের মুখটা দেখতে ভুলে গিয়েছে। না, তাও কোনও কষ্ট নেই। নেশাহীন ছেলেটা বলে, আমার তো বাচ্চা আছে। বাচ্চাটা বড় হবে। এভাবেও বেঁচে থাকা যাবে।
ঘটনা ২: জন্মদিনটি ভালই গেল। এই ধুমধাম আশাতীত। কারণ সিকিউরিটর কাজ মেরেকেটে সাড়ে ৯। তাতে কী! বাবার জন্মাদিনে উৎসাহ দুই মেয়ের। দুই মেয়ে-ই চাকরি করে। একজন বিবাহিত। তাও ছুটে এসেছে। সংসার ফেলে- কম কথা! অন্যদিকে বউ মেডিক্যাল স্টাফ সবাইকে নিমন্ত্রণ করেছে। ইনচার্জ বলে কথা। কেক কাটা হল। মহা ধুমধাম। সবাই সবাইকে খাওয়াতে ব্যস্ত। প্লেটে একপিস তখনও আছে। বউ দিতে গেল আরেক মিস্টার স্টাফকে। মুখে নিতে গিয়ে পড়ে গেল। মাটি থেকে চট করে তুলে দিল তার বরকে। বর আনন্দে খেল। কিছু বোঝা গেল। এ ভাবেই ধুমধামে জন্মদিন হল। বলুন না, তবু মেজাজটা তো তার রাজা-ই ছিল।
ঘটনা ৩: ছেলেটা বড় কোম্পানিতে চাকরি করে। মেয়েটাও। বিয়ের দুই আড়াই বছর পর বাচ্চা হয়। এবার! স্বামী-স্ত্রী ছাড়া নিজের তৃতীয় তেমন নেই। না, তিনজন পরিচর্যার লোক দিয়েও হচ্ছে না। বহু বিনয়ে ও তর্কের অবসানে ছেলেটা চাকরি ছাড়ে। মানে,এবার সব পরিচর্যার লোকের ছুটি। ছেলেটাকে সব করতে হয়। না শুধু নিজের ছেলেরই নয়, বাকিটা বুঝে নিতে হয়!
না, আমি নারীবিদ্বেষী নই। মানি নারী-ই সব। মন থেকে। হয়ত এই রকম বা অন্য রকম হাজারও ঘটনা আপনারও জানা। তবু ওপরের তিন ঘটনার মূল মানুষগুলি ভাল আছেন। আছেন কেবল ওদের মনের মেজাজটা তাজা আছে বলে। এক জীবনে সব হয়। কারও জয়,কারও পরাজয়। তবু জীবন নিয়ে থাকতে হয়। মানি, মেজাজে সব সামলে নিলে জীবনের তার– আপনি থাকছেন স্যর।