রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কেন শিবনিবাসে রাজধানী স্থানন্তরিত করেছিলেন?
Why did King Krishnachandra shift the capital to Shivnivas?

Truth Of Bengal: বিকাশ ঘোষ: নদিয়া জেলার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কৃষ্ণগঞ্জ। এই কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের একটি গ্রাম শিবনিবাস। গ্রামটি চূর্ণী নদীর তীরে অবস্থিত। একসময় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় এই গ্রামে তার রাজধানী স্থানান্তরিত করেছিলেন বলে কথিত আছে। শোনা যায় রাজধানী কৃষ্ণনগরে তখন বর্গিদের উৎপাত বেড়েছে। নদিয়ার রাজা বেশ শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কিভাবে এই নিরাপত্তা দেওয়া যায় রাজধানীর তা নিয়ে বিচলিত।
এমন সময় তিনি পরিকল্পনা করলেন অস্থায়ীভাবে রাজধানী স্থানান্তরিত করার। যেখানে রাজধানী গড়ে তুললে বর্গীদের উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু সেই রাজধানী কোথায় গড়ে তুলবেন? সেই সময় স্বপ্নাদেশ পান রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। সেই স্বপ্ন দেশ পেয়ে চূর্ণী নদীর তীরে শিবনিবাসে গড়ে তোলেন রাজধানী। ধীরে ধীরে সেখানে জনবসতি বাড়তে থাকে। রাজধানী স্থাপন হওয়ায় রাজকর্মচারী থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ রাজধানীকে কেন্দ্র করে বসবাস করতে শুরু করেন।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রাজধানী স্থানন্তরিত করার পাশাপাশি সেখানে গড়ে তোলেন বেশ কয়েকটি মন্দির। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সারিবদ্ধভাবে গড়ে ওঠে বেশ কয়টি শিব মন্দির। এর মধ্যে অন্যতম বড় শিবের মন্দির। যেখানে শিব লিঙ্গটি বিরাট আকৃতির। এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিবলিঙ্গ বলেই এখন এর পরিচিতি। পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় ও পুরাতন কষ্টি পাথরের শিবলিঙ্গ এটি। স্থানীয় লোককথা অনুযায়ী শিবনিবাস কে কাশীর সঙ্গে তুলনা করা হতো। বলা হত ‘শিবনিবাস তুল্য কাশী, ধন্য নদী কঙ্গনা।’
কৃষ্ণগঞ্জ ঘিরে রয়েছে অনেক গল্প কাহিনী। যে গল্প কাহিনী কেন্দ্রীভূত কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়কে ঘিরে। ইছামতি, চূর্ণী এবং কঙ্গনা এই তিন নদী ধারা ঘেরা শিবনিবাস। তবে কঙ্গনা আসলে নদী নয়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রাজধানী শিবনিবাস কে সুরক্ষিত রাখার জন্য চুর্নী এবং ইছামতিকে একটি খাল কেটে সংযুক্ত করেছিলেন। এই খালটি কঙ্গনা নামে পরিচিতি পায়।
কথিত আছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র নসরত খাঁ নামে একজন দুর্ধর্ষ ডাকাতকে দমন করার পর মাজদিয়ার এক গভীর অরণ্যে এসে উপস্থিত হন। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র যখন চূর্ণী নদীতে নেমে জল মুখে দিচ্ছিলেন সেই সময় সামনে একটি রুই মাছ লাফিয়ে পড়ে। যেন রাজাকে শুভকামনা জানান। এই কথা শুনে রাজপন্ডিত বলেন এটি ভালো লক্ষণ। কৃষ্ণগর যখন বর্গীদের উৎপাতে তটস্থ তখন রাজপন্ডিতের পরামর্শ মেনে রাজধানী হিসাবে এই কৃষ্ণগঞ্জকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। আর সেখানে সারিসারি শিব মন্দির গড়ে তুলেছিলেন তাই জায়গাটির নাম হয় শিবনিবাস।