কালচিনি ব্লকের হ্যামিল্টনগঞ্জের কালি পুজো শুরু হয়েছিল সহেবদের হাত ধরে
The Kali Puja of Hamiltonganj in Kalchini Block was started by Saheb

Truth of Brengal,অমল মুন্ডা, আলিপুরদুয়ার: ডুয়ার্স তথা আলিপুরদুয়ার জেলা অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কালিপুজো হল কালচিনি ব্লকের হ্যামিল্টনগঞ্জের কালি পুজো। এই পুজো আলিপুরদুয়ার জেলার অতি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী। পুজো কে কেন্দ্র করে এই আলিপুরদুয়ার জেলার হ্যামিল্টনগঞ্জ এ ডুয়ার্সের সব থেকে বড়ো মেলা হয়। এ বছর এই পুজো ১০৮ তম বর্ষ। তৎকালীন ১৯১৭ সালে ইউরোপিয়ান সহেবদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পুজো।
জানা গিয়েছে, উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এই এলাকায় একের পর এক চা বাগান তৈরি করেছিল ইউরোপীয়ন সাহেবরা এবং ঐ সময় চা বাগানে কাজ করার সময় ছোটো নাগপুর, রাঁচি সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা হয়েছিল শ্রমিক। পুজোর সময় ছুটিতে অনেকে তাদের নিজের বাড়িতে চলে যেত এবং ফিরে আসতোনা আর এর ফলে বাগানে শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিত।
চা শ্রমিকরা যাতে নিজের বাড়িতে না চলে যায় সেজন্য হ্যামিল্টণগঞ্জে কালিপুজো চালু করে এবং পরবর্তীতে এই কালিপুজোকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করে ইউরোপীয়ন সাহেবরা। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও জাকজমকপূর্ণভাবে আয়োজন করা হচ্ছে পুজোর। পুজো কমিটির সদস্যরা জানান, ১৯১৭ সালে ইউরোপিয়ান সহেবদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পুজো।
এরজন্য একটি কাঠের তৈরি মন্দির ও মাটির প্রতিমা স্থাপন করেছিলেন তারা। স্বাধীনতার পর স্থানীয় মানুষেরা প্রতিবছর এই পুজো করে আসছেন।পরবর্তীতে আশপাশের চা বলয়ের শ্রমিক ও জনগণের সহায়তায় পাকা মন্দির ও ২০০২ সালে পাথরের মূর্তি স্থাপন করা হয়। পুজো কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রতিবছরই পুজোর সময় ডুয়ার্স ও তরাইয়ের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীদের সমাগম মন্দির প্রাঙ্গনে হয়।
এবারও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে এমনটাই আশা করছি।’ অন্যদিকে, এই কালি পুজোকে কেন্দ্র করে হ্যামিল্টনগঞ্জের একাধিক এলাকা জুড়ে আয়জন করা হয় বিশাল মেলারও।মূলত ব্রিটিশ আমলে চা শ্রমিকদের মনোরঞ্জনের উৎস ছিল এই মেলা। তবে মাদারিহাট উপনির্বাচনেরর প্রভাব পড়েছে এবছর হ্যামিল্টণগঞ্জ কালি পুজো মেলাতেও।
বছরের পর বছর কালি পুজোর পর দিন মেলার উদ্বোধন হলেও, পুরোনো সেই প্রথা ভুলে ৯০ তম বর্ষে কালি পুজোর দিনই শুরু হবে মেলা, চলবে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। দুর্গা পুজো ও কালি পুজোর পর হ্যামিল্টনগঞ্জের এই মেলা বাসিন্দাদের জন্য কোনো উৎসবের চেয়ে কম নয়। প্রতিবেশী দেশ ও বিভিন্ন রাজ্য থেকে কয়েকশো ব্যবসায়ী নানান পসরা নিয়ে হাজির হন এই মেলায়।
সারা বছর এলাকার মানুষেরা যেখানেই থাকুক না কেন, এই মেলার সময় প্রায় সকলেই বাড়িতে ফেরেন। এ বিষয়ে মেলা কমিটির সদস্য কুমারদীপ চৌধুরী বলেন, নানান ভাষাভাষীর মানুষের মেল বন্ধনের উৎস এই হ্যামিল্টনগঞ্জ কালিপুজো মেলা। সার্কাসের পাশাপাশি, এবছর বিশেষ আকর্ষণ সুনামি নামে এক নাগরদোলা। যা প্ৰথম ডুয়ার্সে আসতে চলেছে।’