রাজ্যের খবর

এই ডাকাতের ভয়ে কাঁপত মাঝি-মল্লারা, রানাঘাটের নাম তারই নামে!

The fishermen and fishermen trembled in fear of this robber, Ranaghat was named after him!

Truth Of Bengal: সুব্রত দত্ত, নদিয়া: নদিয়ার অন্যতম প্রাচীন শহর রানাঘাট। চূর্ণী নদীর তীরে অবস্থিত এই শহর। রানাঘাটের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কয়েকশো বছরের ইতিহাস। রয়েছে রানা ডাকাতের গল্প। ইতিহাসবিদ প্রিঙ্গিলের দাবি, অষ্টাদশ শতাব্দীতে রানা নামে এক দুর্দান্ত ডাকাত এখানে তাঁর ঘাঁটি তৈরী করেন। সেই ডাকাত রানার নামেই রানাঘাট। শোনা যায় একটা সময় এই এলাকার নাম ছিল ব্রহ্মডাঙ্গা। সেই সময় একেবারেই গ্রামীন এলাকা ছিল। চূর্ণী নদীর দু’ধারে ছিল ঘন জঙ্গল।

দূরে দূরে ছিল কয়েকটি গ্রাম। সেই সময় চূর্ণী নদীর প্রবাহমান ধারা ছিল। সারিসারি বাণিজ্যতরী বয়ে যেত এই নদী পথ ধরে। তবে নৌকার মাঝি মোল্লারা এই ব্রহ্মডাঙ্গায় কখনোই নোঙ্গর ফেলতেন না। কারণ সেই সময় দুর্ধর্ষ ডাকাত রানা ডাকাতের আস্তানা ছিল এখানেই। দিনে কিংবা রাতে সব সময় তার ভয়ে কাঁপত। তটস্থ থাকতে হতো মাঝি-মল্লাদের। কোন বাণিজ্য তরী একা একা যেতে সাহস পেত না এই নদীপথে। ব্রহ্মডাঙ্গা যখন পার হতে হতো তখন সারিবদ্ধ ভাবে নৌকা নিয়ে যেতেন নৌকার মাঝিরা।

একটাই ভয় থাকতো, এই বুঝি রানা ডাকাতের দলবল আক্রমণ চালাল। এই পথে একা যেতে যেতে রানা ডাকাতের খপ্পরে পড়েছে এমন বহু ঘটনা তখন মুখে মুখে ঘুরে বেড়াতো। ভয়-ভীতি আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াতো সকলের মনে। পরবর্তীতে এলাকায় বসতি বাড়তে থাকে। জঙ্গল সাফ হতে থাকে। রানা ডাকাত দলবল নিয়ে একসময় উধাও হয়ে যান এই এলাকা থেকে। সেই থেকে এলাকার নাম হয় রানাঘাট। অর্থাৎ রানা ডাকাতের ঘাট।

এই ঘাটের ধারেই চূর্ণী নদীর তীরে বসতো হাট। দূরের গ্রামগুলি থেকে গরুর গাড়ি করে পসরা নিয়ে আসতেন বিক্রেতারা। কালীনারায়নপুর, নাসরা, গাংনাপুর, আঁইশমালী, বৈদ্যপুর, কমলপুর, রঘুনাথপুর, হিজুলী, আড়ংঘাটা, দেবগ্রাম, মাঝেরগ্রাম, বহিরগাছি, দত্তফুলিয়া, নোকাড়ী, যুগলকিশোর, শ্যামনগর সহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষজনের গমগম করত হাট। ভোর থেকে বিকেল ক্রেতা-বিক্রেতাদের কোলাহলে জমজমাট থাকত রানাঘাট। সূর্য ডোবার আগেই ফাঁকা হয়ে যেত এলাকা। বোধ হয় রানা ডাকাতের নামের আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াত সকলের মনে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও জনসংখ্যা বাড়তে থাকে এখানে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এই শহরের নাম কেন রানাঘাট? যেমন রানা ডাকাতের গল্প মুখে মুখে প্রচলিত আবার অন্য অনেক গল্পও কথিত রয়েছে। যেমন, রানা নামের রাজপুত যোদ্ধার নাম থেকে এই শহরের নামকরণ হয়েছে বলেও শোনা যায়।

সত্যি কি এই এলাকার আগে নাম ছিল ব্রহ্মডাঙ্গা, তা নিয়েও মতভেদ রয়েছে। আবার অনেকের মতে আকবরের আদেশে রানা টোডরমল এই অঞ্চলে জমি জরিপ করতে আসেন। তাঁর নাম থেকেই এই অঞ্চলের নাম হয় রানাঘাট। অনেক গবেষক আবার অন্যরকম মত দিয়েছেন। এক গবেষকের মতে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম অনুযায়ী এই স্থানের নাম হয় ‘রানিঘাট’। পরে রানিঘাট হয়ে যায় আজকের রানাঘাট।

Related Articles